দলীয় নেতাকর্মীদের অপরাধের বিষয়ে আওয়ামী লীগ উদাসীন নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতার ‘ধর্ষণকাণ্ডের’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের দলে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন আছে। এই দলের ভেতরে শতভাগ ভালো মানুষ– এমন দাবি আমরা করতে পারি না। খারাপ কাজও কিছু লোক করে। খারাপ কাজ আমরা কখনও প্রশ্রয় দেই না।”
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন যারা খারাপ কাজ করেছে, অপকর্ম করেছে– কেউ পার পায়নি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিচারহীন অবস্থার যে সংস্কৃতি, তা আমরা গড়তে দেইনি। একটা দলে ভালোর সঙ্গে খারাপ লোকও থাকতে পারে। দল কি সে অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? দল কি অপরাধের বিষয়ে উদাসীন? আমরা তা নই।”
শনিবার রাতে কৌশলে এক দম্পতিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। ওই নারী বলছেন, মোস্তাফিজুর ও তার সহযোগী মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।
‘বিদেশি বন্ধুরা বিএনপিকে ছেড়ে চলে গেছেন’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপিকে তার বিদেশি বন্ধুরা ছেড়ে চলে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসময় বিএনপির এখন সরকারে যাওয়ার উপায় কী– সে প্রশ্নও রাখেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রবিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করেন। চিঠিতে বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থনের পাশাপাশি একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
এ প্রসঙ্গ টেনে ‘এখন বিএনপি কী বলবে’– এমন প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “কোন আশায় বসে থাকবে? দেশের জনগণও নেই। বিদেশি বন্ধুরাও বিএনপিকে ছেড়ে চলে গেছে। যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের সবচেয়ে বেশি ভরসা, সেই যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিএনপির এখন সরকারে যাওয়ার উপায় কী?”
পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “অন্তত যুক্তরাষ্ট্র তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আছে। কত নিষেধাজ্ঞা, কত ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে। এসব স্বপ্ন দেখতে দেখতে দিন গড়ায়, রাত গড়ায়। সপ্তাহ যায়, মাস প্রায়ই চলে যায়।”
বাইডেনের চিঠিতে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করি– এখন আপনারা (বিএনপি) কী বলবেন? কে আপনাদের সাহায্যে, ক্ষমতায় বসানোর জন্য আসবে? এই সরকারকে কে ক্ষমতা থেকে হটাতে আসবে?”
ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটানোর জন্য বিএনপির সাহসের উৎস কোথায় জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আপনাদের ক্ষমতায় আসার উপায়টা কী? কে আপনাদের সাহায্য করবে? দেশের জনগণ অলরেডি আপনাদের থেকে সরে এসেছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ওয়াশিংটনের কিছু নীতিকৌশল আছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লম্বা চিঠি পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।”
বিশ্বকে বৈশ্বিক গ্রাম উল্লেখ করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “অংশীদারিত্ব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকে যে অর্থনৈতিক সংকট, এই সংকটের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অবস্থান করা কারও পক্ষে বস্তুত সম্ভব না। সেই বিচারে বাংলাদেশের নির্বাচনের যারা বিরোধিতা করেছে, নির্বাচন থেকে সরে গেছে– এগুলোর কোনও সুফল আসেনি।”
সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল মঙ্গলবার
সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল মঙ্গলবার দেওয়া হতে পারে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, তারা ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার কোনও সুযোগ আছে কি না– জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না, তিনি রাজনীতি করবেন কি না, এই প্রশ্ন তো বিএনপি নেতাদের করলেই ভালো। এটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতার বিষয়ে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, “দুটি গ্রামের জনগণ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে। আমাদের জন্য এটা একটা উদ্বেগের বিষয়। মর্টারের শেল আমাদের ভূখণ্ডে পড়েছে। আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী।”
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সমাধান হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।