১৯ জুলাই, কোটা সংস্কারের দাবিতে কয়েকশ শিক্ষার্থীর অবরোধ চলছিল কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ে মহাসড়কে, বিকাল ৫টার দিকে ১৫/২০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মোটরসাইকেলে করে আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। তবে মোটরসাইকেলগুলো ফেলে যায়। সেগুলো পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ঘণ্টাখানেক পর ৭-৮ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ফের সেদিকে যেতে চা্ইলে আবার ধাওয়া খেয়ে ফিরে আসে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত সপ্তাহে সংঘাতের দিকে গড়ানোর পর এমন চিত্র দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়; ব্যতিক্রম ছিল না রাজধানী ঢাকাও।
তার চার দিন আগে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালালে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়ায়। পরদিনই সারাদেশে সহিংসতায় ছয়জন নিহত হয়। এরপর ১৯ জুলাই আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অবরোধ ডাকলে সহিংস হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
এই আন্দোলনে ঢুকে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইছে- এমন বক্তব্য দিয়ে তা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা ছিল ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। শুরুর দিকে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থানও নিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হচ্ছিল।
১৯ জুলাই কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী অবস্থান নিয়েছিলেন। কার্যালয়ের সামনে চেয়ার পেতে তার সঙ্গে গুটিকয়েক নেতা-কর্মীই ছিল কেবল।
দলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আজগর আলী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ এত বছর দল করছি। তবে আগে কখনোই এমন অসহায় বোধ করিনি। দলকে সঠিকভাবে সংগঠিত করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”
কুষ্টিয়ার আজগর আলীর মতোই কথা শোনা গেল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের মধ্যে কোথাও কোথাও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে, যার প্রভাব পড়ছে এখন।
হুমায়ুন কবির সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এমন কোনও শক্তি নাই, যারা আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে পারবে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হলে এই অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।”
সমন্বয়ের কিছুটা অভাব আছে বলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিও মনে করেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা যদি আমাদের মধ্যে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করি, মাঠে থাকি, তাহলে কোনও শক্তি দাঁড়াতে পারবে না।”
দলে কী সমস্যা, তা খোলাখুলি বললেন কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা আজগর। তার ভাষায়, “কিছু অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকে ত্যাগীদের পেছনে ফেলে পদ বাগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এনিয়ে ত্যাগীদের মধ্যে মান-অভিমান রয়েছে। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।”
আজগর যাদের নিয়ে কার্যালয়ের সামনে বসেছিলেন, তারা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। কিন্তু পদ-পদবিধারী অনেককে সেখানে দেখা যায়নি।
কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সুবিধাভোগীরা তাদের সুবিধার জন্য নানাজনকে দলে ভিড়িয়েছে। তাদের দাপটে ত্যাগী নেতারা ক্রমেই দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তৃণমূীল নেতারা নানা দুর্বলতার কথা বললেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তা মানতে নারাজ।
দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, নেতারা প্রতিনিয়ত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনাও দিচ্ছে।
চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চক্রান্ত হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।”
একই কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে জামায়াত-বিএনপি তাণ্ডব চালিয়েছে। এরা উন্নয়ন বরদাশত করতে পারে না। তারা দেশপ্রেমিক না, পাকিস্তানপ্রেমী। মূলত এরা রাজাকারদেরই বংশধর।”
তাদের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
দলে কিছু দুর্বলতা থাকলেও সেগুলো চিহ্নিত করা গেেছ জানিয়ে নাছিম বলেন, “এগুলো দূর করতে হবে। জনগণের সঙ্গে আমাদের যে সমর্থন আছে, জনশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সব দূর করব।”