দুদিন আগে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান মাউন্ট এভারেস্টে পদচিহ্ন এঁকেছিলেন বাবর আলী। সেই জয়ের রেশ কাটতে না কাটতে জয় করলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট লোৎসে। এক অভিযানে এভারেস্ট আর লোৎসের চূড়া এই প্রথম কোনও বাংলাদেশি স্পর্শ করলেন।
মঙ্গলবার নেপাল সময় সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিট) লোৎসের চূড়ায় ওঠেন চট্টগ্রামের ছেলে ৩৩ বছর বয়সী বাবর।
বাবর আলীর অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভোরে বাবর আলী লোৎসের চূড়ায় উঠেছেন। এর মধ্য দিয়ে তার অভিযানের লক্ষ্য অর্জিত হলো।”
মাত্র দুদিনের ব্যবধানে দুটি রেকর্ড গড়লেন ‘পেশায় ডাক্তার, নেশায় পাহাড়ি’ বাবর। এ কারণে বাবর আলীকে ‘ডাবল হেডার’ বলা হচ্ছে। এভারেস্ট জয়ে ষষ্ঠ হলেও লোৎসে জয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি।
বাবরের সংগঠন চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স তাদের ফেইসবুক পাতায় লিখেছে, “বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে আজ লিখিত হলো অভূতপূর্ব ও রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়। এর লেখক আমাদের স্বপ্ন সারথি বাবর আলী।
“এটি বাংলাদেশের কোনও সন্তানের প্রথম লোৎসে সামিট এবং প্রথম একই অভিযানে দুটি ৮ হাজারি শৃঙ্গ সামিট। ভুললে চলবে না, বাবর এখন নেমে আসা শুরু করেছেন। বেসক্যাম্পে পৌঁছলেই হবে মূল উৎসব।”
ফরহান বলেন, “বাবর আলী এখন লোৎসে পর্বতের চূড়া থেকে নেমে ক্যাম্প-৪ এ অবস্থান করছেন। তিনি সুস্থ আছেন। সেখান থেকে নিরাপদে বেসক্যাম্পে নেমে আসার মধ্য দিয়ে তার অভিযানের সমাপ্তি ঘটবে।”
গত ১৯ মে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পরদিন বাবর আলীর লোৎসে অভিযান শুরুর কথা ছিল। তবে
শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল অনুভব করায় তিনি একটা দিন বিরতি দিয়ে সোমবার রাতে ক্যাম্প-৪ থেকে রওনা হন বলে জানান ফরহান।
লোৎসে অভিযানের ছবি ও ভিডিও পেতে বাবরের সমতলে নেমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানায় ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।
এভারেস্ট অভিযানের আগে অনেক অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করেন বাবর। এর মধ্যে রয়েছে নেপালের আমা দাবলাম পর্বত।
এছাড়া বাবর হেঁটে বেড়ান বাংলাদেশের ৬৪ জেলা। সাইকেলে পাড়ি দেন ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারি পর্যন্ত চার হাজার কিলোমিটার পথ।
গত ১ এপ্রিল ২৯ হাজার ২৮ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট ও ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে পৌঁছান বাবর। সেখানে তিনি পর্বতারোহণে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেন। সরঞ্জাম কেনেন।
প্রস্তুতিমূলক কাজ সেরে ৪ এপ্রিল বাবর আলী কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলাতে। লুকলা থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন এভারেস্টের উদ্দেশে। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি।
২৬ এপ্রিল সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে এভারেস্ট ক্যাম্প-২ এ পৌঁছালেও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ফিরে আসেন তিনি।
এরপর এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার মতো উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাবরকে। শেষ পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয় ১৪ মে। এদিন তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান।
এই দেড় মাস বাবর আলীকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। পেরোতে হয় একের এক বাধা। এমনকি এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে কনকনে ঠাণ্ডায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দেখতে হয়েছে মৃত্যুও।