ভারতের অযোধ্যায় যখন রাম মন্দির নির্মাণ করে তার উদ্বোধন হয়ে গেল, তখনও মসজিদ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে কাজ শুরুর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
২০১৯ সালে অযোধ্যা মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গাটি একটি ট্রাস্টকে দেওয়া যেতে পারে এবং সেই জায়গায় একটি রাম মন্দির তৈরি করা যেতে পারে।
মামলার রায়ে আরও বলা হয়, উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে, যেখানে তারা একটি মসজিদ তৈরি করতে পারবে।
মসজিদটি নির্মাণের জন্য ওয়াকফ বোর্ড একটি সংস্থা তৈরি করে, যেটার নাম ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’ আর রাম মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করে ‘রামাজন্মা ভূমি তীর্থক্ষেত্র ফাউন্ডেশন’।
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধের মামলার বাদী ছিলেন ইকবাল আনসারি। মূলত: তার বাবা হাশিম আনসারিই এ মামলার বাদী ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে ইকবাল মামলাটি চালিয়ে যান।
বিবিসিকে ইকবাল আনসারি বলেন, “ওয়াকফ বোর্ডকে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে মসজিদ নির্মাণের দায়িত্ব তাদের। এ জন্য তারা একটি ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন। কিন্তু এরপর এ বিষয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। ভারতের মুসলমানরাও এটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করে না।”
সবসময় দুজন সশস্ত্র পুলিশ সদস্যের নিরাপত্তায় থাকা ইকবাল জানান, সেখানে মুসলমানরা নতুন মসজিদ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন, কারণ তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক মসজিদ রয়েছে।
একই কথা বিবিসিকে জানান অযোধ্যার আরেক বাসিন্দা খালিক আহমেদ খান। তিনি বাবরি মসজিদের মামলায় খুব কাছ থেকে লক্ষ্য রেখেছিলেন।
খালিদ বলেন, “ইসলামী শরিয়া আইন এবং ওয়াকফ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও মসজিদের জায়গা পরিবর্তন করা, বন্ধক রাখা বা একটি মসজিদের পরিবর্তে অন্য মসজিদ নেওয়া জায়েজ নয়।
বাবরি মসজিদের বদলে অন্য কোনও মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। এ জন্যই, মুসলমানরা নতুন মসজিদ নির্মাণের ঘোষণায় আগ্রহী নন।”
তবে নতুন মসজিদ নির্মাণের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও কেউ দাঁড়ায়নি বলে জানান তিনি।
এরপরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়, মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে কবে?
মসজিদ ট্রাস্টের সেক্রেটারি আত্তার হুসাইন বলেন, “নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত তহবিল না থাকা। আমরা যত দ্রুত তহবিল পাব বলে আশা করেছিলাম, তত দ্রুত পায়নি। তাই এখন তহবিল সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি আমরা।”
ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মসজিদের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।