Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

চিন্ময় ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিল না কেন

চট্টগ্রামের আদালত গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
চট্টগ্রামের আদালত গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

ঢাকা-দিল্লি উত্তেজনার পারদ চড়ার মধ্যেই নির্ধারিত দিনে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রম্মচারীর জামিন আবেদনের শুনানি হয়নি আদালতে।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে মঙ্গলবার চিন্ময়ের জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল।

এক সপ্তাহ আগে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর দিন সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এদিন সকাল থেকেই আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা ছিল জোরদার।

প্রধান সড়ক থেকেই আদালতে প্রবেশে সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাসির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আদালতের প্রবেশমুখে প্রধান সড়কে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ সদস্যরা ছিল সতর্ক পাহারায়।

বিচারক এজলাসে বসার আগেই আইনজীবীদের ভিড়ে সেখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তবে চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিল না। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি চিন্ময়কেও কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়নি।

সকাল সোয়া ১১টায় শুনানি ছাড়াই বিচারক পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দেন। ফলে আরও প্রায় এক মাস কারাগারেই থাকতে হবে চিন্ময়কে।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া ছিলেন। এছাড়া ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শতাধিক আইনজীবী।

আদালতের নাজির নেছার আহমদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আসামিপক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ জামিন শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি পিছিয়েছেন। আগামী ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।”

ইসকনের সাবেক নেতা, হিন্দু সাধু চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সরব ভারতের বিভিন্ন সংগঠন। ইসকনের কলকাতার নেতাদের বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, চিন্ময়ের এক আইনজীবীর ওপর হামলা হয়েছে।

আইনি প্রতিকারের জন্য আইনজীবী পাওয়ার অধিকার সব অভিযুক্তের রয়েছে। কিন্তু চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিল না কেন- সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চট্টগ্রামের আদালতের তিনজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সকাল সন্ধ্যা। তারা কেউই এই পরিস্থিতিতে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দুই কারণে চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে উপস্থিতির সাহস দেখাননি কোনও আইনজীবী। প্রথম কারণ হচ্ছে, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত হচ্ছে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের মামলায় সমিতির কোনও সদস্য আইনজীবী আসামির পক্ষে দাঁড়াবেন না। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, চিন্ময় কৃঞ্চ দাসের জামিন না মঞ্জুর ঘিরে সংঘটিত ঘটনায় দেড় হাজার আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আসামিদের মধ্যে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর আইনজীবী, সহকারী আইনজীবীরা আছেন। ফলে তারা ভয়ে কেউই আদালতে যাওয়ার সাহস পাননি।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোয় উত্তপ্ত হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোয় উত্তপ্ত হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার প্রায় এক মাস পর গত ২৫ নভেম্বর চিন্ময়কে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করলে সেখানে বিক্ষোভরত চিন্ময়ের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। সেই সংঘর্ষের মধ্যে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয় বিএনপি সমর্থক আইনজীবী আলিফকে। ওই ঘটনায় পুলিশ ও আলিফের পরিবার পাঁচটি মামলা করেছে।

চিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবী না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে চট্টগ্রাম ইসকন প্রবর্তক মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। যেখানে চিন্ময় কৃঞ্চ দাসের প্রধান আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা, রিগ্যান আচার্য্য, হিরো সুশীলসহ অন্তত ৭০ আইনজীবীকে মামলার আসামি করা হয়েছে। ফলে প্রাণভয়ে তারা আদালতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।”

চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আইনজীবী আনছেন না কেন- সেই প্রশ্নে গৌরাঙ্গ বলেন, “বাইরে থেকে যে একজন আইনজীবী আমরা আনব, সেই পরিস্থিতিও নেই।

“কারণ সোমবারের ঘটনা তো আপনারা দেখেছেন, মামলার পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করায় একজন এপিপিকে পদত্যাগ করতে হলো। মতের বিরুদ্ধে গেলেই তারা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করছে। এই অবস্থায় বাইরে থেকে একজন আইনজীবী এনে আমরা নাজেহাল করতে চাইনি।”

এদিন আদালত জামিন আবেদনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত সমর্থক একদল আইনজীবী আদালতের বাইরে মিছিল করে।

সেই মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা চিন্ময়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যামামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর দাবি তোলেন। চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবী যদি ওকালতনামা দাখিল করেন, তাকে গণপিটুনি দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা।

ইসকন নেতা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “হত্যা মামলার আসামিও তো আদালতে আইনজীবী নেওয়ার সুযোগ পায়, অথচ রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আইনজীবী দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হলো না।”

তিনি এবিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে বলেন, “বাক স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে বলে আমরাও আশান্বিত ছিলাম।

“কিন্তু মতের বিরুদ্ধে গেলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, সব আগের মতোই আছে, কেবল মানুষ বদলেছে। আমরা রাষ্ট্রের কাছে আইনি অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা চাই।”

পাশাপাশি আইনজীবী সাইফুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে খুনিদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার কথাও বলেন গৌরাঙ্গ দাস।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় ব্রহ্মচারী এক সময় ইসকনের মুখপাত্র ছিলেন।

গত অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সক্রিয় হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর ইসকন থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে সমাবেশ আয়োজনের পর ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ গঠন করে তার মুখপাত্র হিসাবে সক্রিয় ছিলেন চিন্ময়।

এদিকে ২৫ অক্টোবরের সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়।

সেই মামলায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তখনই ভারত সরকার প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশটিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও চিন্ময়ের মুক্তি দাবি করে আসছেন।

চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে সোমবার ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য ত্রিপুরায় এক সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলাও হয়।

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে। চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর উত্তেজনা আরও বেড়েছে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত