ঢাকার বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় সংসদে ক্ষোভ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
ভবনগুলোর উপর সরকারের নজরদারি না থাকার বিষয়টি তুলে তিনি বলেছেন, এমন অগ্নিকাণ্ডের দায় সরকারকে নিতে হবে।
শনিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ চুন্নু।
এদিন বৈঠকের শুরুতে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়।
দুদিন আগে বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু ঘটে। সাততলা ওই ভবনে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা ত্রুটি বেরিয়ে আসে।
চুন্নু বলেন, “দেশের জনগণ কর দেয় সরকার পরিচালনার জন্য। সরকারের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থার ছাড়পত্র লাগে, ছাড়পত্র দেওয়ার পরে ভবনগুলোর নজরদারি নেই।
“প্রত্যেকটা এলাকায় রাজউকের কর্মকর্তা থাকেন। সেই কর্মকর্তারা কোথায়? এক-একটা ভবন তৈরি করা হয় একটা উদ্দেশ্যে, কিন্তু যায় আরেকটা উদ্দেশ্যে। এই যে মানুষগুলো মারা গেল জবাব দেবে কে? এর দায়-দায়িত্ব সরকারের, সরকারের সংস্থা, সরকারের অফিসের।”
ভবনে নির্মাণ এবং ব্যবহারে অনিয়ম ঘটলেও তার উপর সরকারি কর্তৃপক্ষের নজর না থাকার সমালোচনাও করেন এক সময়ের প্রতিমন্ত্রী চুন্নু।
তিনি বলেন, “ধানমণ্ডির সাত মসজিদ এলাকায় একটা ভবনে ১৫টি রেস্টুরেন্ট। সেগুলোর কোনও অনুমতি নেই। ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর রোডের রাস্তার পাশে ভবনে কয়েকশ রেস্টুরেন্ট, কিন্তু সেগুলোর অনুমতি নেই। খিলগাঁওয়ের তালতলায় বহুতল ভবনে একই অবস্থা।
“আরও এরকম ঘটনা ঘটবে, যদি সরকার এ বিষয়ে সচেতন না হয়। সরকারকে বলব, দায়-দায়িত্ব নিয়ে এগুলোর জন্য কারা কারা দায়ী, সেটা রাজউক হোক, ফায়ার ব্রিগেড হোক, পরিবেশ অধিদপ্তর হোক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা করেন।”
এর আগে নানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
তিনি বলেন, “এক-একটা সময় এক-একটা ঘটনা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তদন্ত করা হবে, তদন্ত টিম করা হয়। কিন্তু এরপর কোনও ফলোআপ নেই। এইভাবে দেশ চলতে পারে না। সরকারের জবাবদিহি করা দরকার।”
হতাশ সাবেক গৃহায়নমন্ত্রী
সংসদে এদিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
২০১৯ সালে ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
রেজাউল বলেন, “বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলাম। তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দিয়েছিলাম।
“দুর্ভাগ্য! সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তারপর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয় আজকে পর্যন্ত সে মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সে সময় ১৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে। যে মন্ত্রণালয়ের প্ল্যান ঠিক নাই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি।”
এমন আরও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গাফিলতির জন্য চিহ্নিতদের বিচারের আওতায় আনতে না পারার জন্য হতাশা প্রকাশ করেন পেশায় আইনজীবী রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্যাক্টরিতে ৫২ জন লোককে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো (২০২১ সালে)। সে মামলার আসামিরা জেলে গেছে। সে বিচার আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। এ রকম অনেক ঘটনা।”
এই ধরনের ঘটনার বিচারে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে ‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের সুপারিশ করেন সরকারি দলের এই সংসদ সদস্য।