আগুনে পুড়ল ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মল, বহুতল বাণিজ্যিক ভবনটির সাতটি তলাজুড়ে ছিল বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় আগুন লাগার পর তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। তবে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু ঠেকানো যায়নি।
ভবনটির নিচতলার একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে দাবি করেছেন ওই ভবনের একটি দোকানের কর্মচারী।
অগ্নিকাণ্ডস্থলে দায়িত্ব পালনে থাকা পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কথায়ও তাতে সায় পাওয়া যায়।
ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা বিরিয়ানীর দোকান কাচ্চি ভাইর কর্মচারী সিয়াম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নিচতলায় চা খাওয়ার নতুন দোকান ‘চায়ের চুমুক’ চালু হয়েছে ৪-৫ দিন হলো। এখনও ডেকোরেশন শেষ হয় নাই। ওই জায়গা থেকেই আগুনটা শুরু হয়।”
ভবনটির নিচতলায় বড় অংশজুড়ে ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের বিক্রয় কেন্দ্র। তার পাশে আরও কয়েকটি দোকান রয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনে কোথায় ‘চায়ের চুমুক’ দোকানটি ছিল, তা এখন আর বোঝার উপায় নেই।
সেখানে থাকা র্যাব-৩ এর এএসপি কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, স্যামসাং শোরুমের পাশের কফি হাউস থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে তারা জেনেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি বলেন, নিচ থেকে আগুন উপরের দিকে উঠতে দেখা গেছে। প্রথমে দোতলায়, তারপর পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।”
আগুনের সূত্রপাত নিচতলা থেকে, এমন কথা জানা গেলেও অগ্নিকাণ্ডের কারণ কী- তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা দক্ষিণ বিভাগের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, “আগুন কোথা থেকে লেগেছে, তা নিশ্চিত নই। রেস্টুরেন্টের চুলা থেকে আগুন লেগেছে বলে আমরা ধারণা করছি।
“আগুন দুই তলায় লাগলে নিচে আসার সম্ভাবনা কম থাকত। কিন্তু নিচতলা পুড়েছে। ফলে নিচতলায়ও আগুন শুরু হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে আমরা এ ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণের কী কী ব্যবস্থা ছিল তা জানতে চেয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমরা আলামত যোগাড় করছি সকাল থেকেই। অনেক রেস্টুরেন্টে কাঠের কাজ ছিল বলে আমরা শুনছি। কাঠ থাকার কারণে আগুন তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছি।”
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, চুলা বা গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরেই গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল বলেও জানান তিনি।
গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজজনিত ত্রুটির কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও দিয়েছেন।
অগ্নিকাণ্ডের কারণের বিষয়ে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, “শর্ট সার্কিট, না গ্যাসের কারণে হয়েছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
“এখান থেকে আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে কেমিকেল টেস্ট করা হবে। এরপর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
এই অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার ইসলাম দোলন জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এই কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকছেন।
কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন। অন্য সদস্যরা হলেন- ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার ও ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর।
সাততলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলাজুড়ে ছিল ব্যস্ত রেস্তোরাঁ কাচ্চি ভাই। তৃতীয় তলায় ছিল পোশাকের দোকান ইলিয়েন।
চতুর্থ তলায় ছিল আরেকটি রেস্তোরাঁ খানা’স। এর ওপরের তলাগুলোতে ছিল পিজ্জা ইন, জেস্টি, স্ট্রিট ওভেন ও অ্যামব্রোসিয়ার মতো খাবারের দোকান।