আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে তার বিচারের দাবি তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের বিক্ষোভ থেকে মঙ্গলবার এই দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতেই হবে।”
তিনি এই দাবি করার দিনই ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলাটি হয় আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ধরে। তাতে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশ গুলি চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পালিত হয় মূল কর্মসূচি।
সেখানেই বক্তব্য রাখেন সারজিস। তিনি বলেন, “কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে সারাদেশে যেসব স্থানে আমাদের জাতীয় বীরেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, সেসব পয়েন্ট অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চার দফা দাবি নিয়ে আমরা রাজপথে থাকব। উইক অফ রেজিট্যান্স আমরা পালন করব।”
৪ দফা
১. ‘ফ্যাসিবাদী’ কাঠামোকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা এবং তার দল ও সরকার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন।
২. সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী মহাজোটের শরিক দলগুলোর পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া।
৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা, এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বারবার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও নতুন সরকারে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচার করা।
৪. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু হয়। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালালে তা সহিংসতায় গড়ায়।
এরপর সরকার কঠোর দমন নীতি নিলে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতায় কয়েকশ মানুষের প্রাণহানিতে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়। সেই চাপে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তাতে বৈষম্যবিরোধী ছঝাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন।