Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

বাজুস থেকে আনভীরকে হটাতে উদ্যোগ দোলন-দিলিপের

Bajus-anvir1
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সোনার গহনা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রতিষ্ঠা ১৯৮৪ সালের ১২ মে; তবে সাধারণ মানুষের কাছে সংগঠনটি অচেনাই ছিল।

২০২১ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর সভাপতি হওয়ার পর সংগঠনটির তৎপরতা বাড়তে থাকে। জুয়েলারি মেলা, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে বাজুস।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন সংগঠনে পালাবদলের মধ্যে বাজুসকেও আনভীরের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে আনতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি পক্ষ।

আনভীরকে বাজুস থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স ও শারমিন জুয়েলার্সের মালিক এনামুল হক খান দোলন এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলিপ কুমার আগরওয়ালাসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

দোলন বাজুসের সাবেক সভাপতি (২০১৯-২০২১) এবং দিলিপ সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৯-২০২১), যাদের বহিষ্কার করেছে আনভীরের কমিটি।

দোলন-দিলিপের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে বাজুস সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন আনভীর।

অন্যদিকে বুধবার তাদের ইঙ্গিত করে বাজুসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাজুসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তাদের বাজুসে না থাকার বিষয়টি তুলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের লেটারহেড প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে, যার কোনও আইনি বৈধতা নাই। তারা বাজুসের পুরনো ঠিকানা ব্যবহার করে সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে।

বাজুসের কাজ কী

বাজুসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা, দেশীয় স্বর্ণ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করা ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করাই তাদের লক্ষ্য।

বাজুস একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও সেবাভিত্তিক বাণিজ্য সংস্থা, যা ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রথম শ্রেণির সক্রিয় সদস্য বাজুস। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার।

বাজুস আন্তর্জাতিক বাজার, দেশীয় বাজার ও সাধারণ ভোক্তাদের বিবেচনায় রেখে দেশীয় বাজারে সোনার দাম নির্ধারণ করে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর উল্লেখযোগ্য অবদানের রূপরেখা দেয়। সঠিক ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সরকারের সদস্যদের মধ্যে নিয়ম ও প্রবিধান প্রচার করে বাজুস। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ ও আয়োজন করে সংগঠনটি।

বাজুসে কেন আগ্রহ

দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনভীর কেন বাজুসের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলেন?

এনিয়ে বাজুসের ২০১৯-২০২১ মেয়াদের সভাপতি দোলন বলেন, আনভীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির নামে জনপ্রতি ২ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত নিয়ে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আনভীর বায়তুল মোকররমে দেশের সর্ববৃহৎ জুয়েলারি মার্কেটে অবস্থিত বাজুসের নিজস্ব কার্যালয়ে তালা মেরে দেন। এরপর তাদের পান্থপথের বসুন্ধরা মার্কেটে বাজুস কার্যালয় নিয়ে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল তার মার্কেটে সাধারণ জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের দোকান কিনতে বাধ্য করা।

দোলন বলেন, “বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি করার নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন আনভীর। তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বাজার দর উপেক্ষা করে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করছেন। এতে স্বর্ণের দাম সাধারণ ক্রোতাদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাজুসের সাধারণ সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও নেই আনভীরের। তারপরও ঐতিহ্যবাহী এই বাণিজ্য সংগঠনের সর্বোচ্চ পদটি ‘জোর করে’ দখল করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, বাজুসের সভাপতি হয়েই আনভীর সাধারণ সদস্যদের চাঁদা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেন; নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি ও সার্টিফিকেট বাবদ ১০ হাজার টাকা ধার্য করেন। টাকার বিনিময়ে বাজুসের সদস্য করেন আনভীর।

এই সব অভিযোগের বিষয়ে আনভীরের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আনভীর অপ্রকাশ্যে রয়েছেন। তিনি বিদেশে আছেন বলে বসুন্ধরা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন।   

তবে আনভীরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজুসের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট রাশেদ রহমান অমিত বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া দখলবাজির মতোই বাজুসও দখলের চেষ্টা করছে একটি ‘কুচক্রী’ মহল।

তিনি বলেন, “স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকায় যাদেরকে বাজুস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারাই আবার বাজুস দখলের পাঁয়তারা করছে।”

সংবাদ সম্মেলনকারীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন বাজুসের মুখপাত্র ও জেনারেল জুয়েলার্সের মালিক আনোয়ার হোসেনও।

তিনি বলেন, বাজুস দীর্ঘদিনের একটি সংগঠন। কিন্তু অতীতে কোনও সময়ই জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের উপকারে লাগেনি সংগঠনটি।

“যারা এর নেতৃত্বে ছিলেন, তারা বাজুসের নাম ব্যবহার করে স্বর্ণ চোরালানে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু সায়েম সোবহান আনভীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রতিটি জেলায় বাজুসের কমিটি সক্রিয় করেছেন। ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। আমাদের দেশের জুয়েলারি পণ্য যেন বিদেশে রপ্তানি করতে পারি সেজন্য কাজ করছেন।” 

বাজুসের নাম ভাঙিয়ে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংগঠনের আইনজীবীরা দেখছেন বলে জানান আনোয়ার।

আনভীরের বাজুসের নেতৃত্ব পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “সায়েম সোবহান আনভীরকে বাজুসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে সদস্য হতে হয়েছে। দোলন ও দিলিপের কমিটিই তাকে এই সদস্যপদ দিয়েছে। তাহলে এখন কেন আনভীরের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তুলছেন তারা?”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত