ভোট দিয়ে সরকার গঠন হয়, তাই ভোটের এত দাম। এই দামি ভোট গ্রহণ হয় ব্যালটের মাধ্যমে। সেই ব্যালট আগে শুধু কাগজে হত। এখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেও ভোটগ্রহণ হয়। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটেই হয়েছিল ভোটগ্রহণ। ফলে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের জন্য সমান সংখ্যক ব্যালট পেপার ছাপাতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। নিচের শিরোনামগুলিতে ক্লিক করে জেনে নিন ব্যালটের আদ্যোপান্ত।
ব্যালট পেপার ছাপা হয় কোথায়?
ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকার তেজগাঁওয়ের গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ব্যালট ছাপানো হয়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী এলাকার ভোটার সংখ্যা চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই সংখ্যক ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
ব্যালটগুলো কীভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছায়?
ভোটগ্রহণের আগে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে ইসি। আগে ভোটগ্রহণের আগের দিনই ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হত। এবার ব্যালট পেপার কেন্দ্রে কেন্দ্রে গেছে ভোটের দিন ভোরে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ২৪টি। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ২ হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয় আগের রাতে।
কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের দায়িত্ব কার কাছে থাকে?
প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী অন্যান্য সামগ্রী। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দিন বা আগের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী হাকিমসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যান। ভোটের আগে ব্যালট পেপার বুথে বুথে বিতরণ করা হয়। ভোটার প্রতি একটি ব্যালট পেপার ছাপানো হয় জানিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল বলেন, ব্যালট ছাপানোর পর থেকে বিতরণ পর্যন্ত ইসির প্রতিনিধি তা পর্যবেক্ষণ করেন।
ব্যালট নিয়ে শাস্তি কী?
অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ধরা পড়লে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ভোট চলাকালে ব্যালট পেপার সরিয়ে ফেললে বা তাতে প্ররোচনা দিলে ন্যূনতম ২ থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।
ব্যালট গণনা কীভাবে হয়?
ভোটগ্রহণ শেষে প্রার্থীর এজেন্টের উপস্থিতিতে ব্যালট গণনা হয়। ব্যালট যখন ইস্যু করা হয় মুড়ির ওপরের দিকে এবং ব্যালট পেপার যেটা ছিঁড়ে ফেলা হয়, সেটায় পোলিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকতে হয়। কেউ যদি ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যায়, সেটা বাতিল হয়ে যায়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল বলেন, “ব্যালট পেপার গণনার সময় উল্টো দিকে স্বাক্ষর আছে কি না, সেটা সেটা দেখা হয় না। যেটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনের সবচেয়ে বড় বাধা। বাংলাদেশের শুরু থেকেই চুরি করে ব্যালটে ভোট দেওয়ার ঘটনা আছে। সেটা কবে বন্ধ হবে তা জানি না।” গণনা শেষে কোন প্রার্থী কত ভোট পেল, সেগুলো আলাদা আলাদা করে খামে ঢোকানো হয়। সেখানে খামের ওপর লিখতে হয় প্রার্থীর ভোট ও নাম এবং এত ব্যালট পেপার রক্ষিত।
এরপর ব্যালট যায় কোথায়?
ভোট শেষ হওয়ার পর যে ব্যালটগুলো আছে, সেগুলো প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নির্ধারিত রুমে গণণার জন্য পাঠানো হয়। অব্যবহৃত ব্যালট এবং মুড়ি চটের বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে সিলগালা করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। বাতিল ভোটের ব্যালটগুলো সব একসঙ্গে খামে ভরে সবগুলো সিলগালা করে চটের বস্তায় ঢুকিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়। রফিকুল ইসলাম জানান, মূলত জেলা প্রশাসকরা ট্রেজারির দায়িত্বে থাকে। যদি কোনো ট্রেজারিতে জায়গা না হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গুদামকেই ট্রেজারি ঘোষণা করতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ব্যালট পেপার রাখতে হবে।
কতদিন রাখা হয়?
রফিকুল ইসলাম বলেন, তারপর ব্যালটগুলো ট্রেজারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। ১ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। যদি মামলা হয় তাহলে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে রাখা হয়। তবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ব্যালটগুলো মূলত ৬ মাস ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করা হয়। যদি কোনও মামলা হয়, সেগুলো মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত রাখা হয়।
ব্যালটগুলোর শেষ পরিণতি কী?
নির্ধারিত সময় শেষে ব্যালটগুলো নষ্ট করে ফেলার কথা। তবে তা করা হয় না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল বলেন, “বিক্রি করে দেওয়ার জন্য পোড়ানো হয় না। মুড়িগুলো মণ্ড করে পেপার মিলগুলোতে দেওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে এসেছিলাম। পেপার মিলগুলো আবার এগুলো নিতে চায় না। কারণ এর চেয়ে বিদেশে থেকে কাঁচামাল কিনে আনলে তাদের লাভ বেশি।” তবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক দেবনাথ বলেন, “মামলা না থাকলে ৬ মাস পরে মণ্ড করে পেপার মিলগুলোর কাছে দেওয়া হয়। কর্ণফুলী পেপার মিল এগুলো নিয়ে যায়। সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী পেপার মিলগুলো ব্যালটের এসব মণ্ড ক্রয় করে নিয়ে যায়।”