দেশভাগের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করে যুবক শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঢাকায় পা রাখেন। প্রায় অচেনা এ শহরে প্রথম এসে কোথায় থাকবেন, তারও ঠিক ছিল না। তবে এ যুবক তখনই রাজনীতিকেই তার চূড়ান্ত নিয়তি হিসেবে ঠিক করেছিলেন।
ঢাকায় এসে সোজা হাজির হন মোগলটুলীর ১৫০ নম্বর বাসায়। সেটা ছিল আবুল হাশিম ও সোহরাওয়ার্দী সমর্থিত মুসলিম লীগের ক্যাম্প অফিস। দূর-দূরান্ত থেকে আসা কর্মীরা তখন সেখানেই থাকতেন। মেসের মতো। সেখানেই মাথা গোঁজার জায়গা হয় তার।
ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকে অজানা এই ঢাকা শহর। তারপরই ঢাকায় বাসা ভাড়া নেন তিনি। তার নতুন ঠিকানা হয় ৮/৩ রজনী বোস লেনের দোতলা এক বাড়ি। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত সপরিবারে তিনি থাকতেন এ বাসাতেই।
সেই বাসাটির দ্বিতীয় তলায় ১৯৯০ সাল থেকে থাকতেন মো.জামাল হোসেন। সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথায় তিনি বলেন, “আগে আমি জানতাম না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু মানুষ আসে এ বাসায়। তারা প্রথম জানায়, এই বাসায় বঙ্গবন্ধু থাকতেন। আমি যেই আলমারিতে কাপড় রাখতাম সেই আলমারিতেই বই রাখতেন বঙ্গবন্ধু।”
জামাল রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায় সেই বাড়িতে। সেই পুরাতন ভবন এখন আর নেই। ১৫-১৬ বছর হলো পুরান ভবন ভেঙে হয়েছে নতুন ভবন।
কথা হয় রজনী বোস লেনের বাড়ির মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ রউফ খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে প্রথম এই বাসায় উঠেন। সময়টা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ এর মধ্যে। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হয়েছেন তিনি এ বাসায় থেকে। তারপর এ বাসা তিনি ছাড়েন।”
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর বঙ্গবন্ধু আবার আসেন পুরান ঢাকায়। তখন তিনি ওঠেন এ সি রায় রোডের হাফেজ মহলে। সেখানেই জন্ম শেখ রেহানার, এ তথ্যও দেন রউফ।
বঙ্গবন্ধুর আড্ডা দেওয়ার অন্যতম জায়গা ছিল জগন্নাথ কলেজের আব্দুর রহমান হল। সেই হল এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
রউফ খান বলেন, “এসব তথ্য অনেকেই জানেন না। আব্দুর রহমান হলটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিৎ। তা নাহলে আগামী প্রজন্ম এসব তথ্য জানবেই না।
“এলাকার অনেকের কাছেই বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এসব সংরক্ষণ করা উচিৎ।”
মুন্সিগঞ্জের মীরবাড়ি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতকের পঞ্চাশের দশকে তার ভাগ্নির বাড়িতে এসে মাঝে মধ্যেই বিশ্রাম নিতেন, ২/৩ দিন থাকেতেন, স্থানীয় পুকুরে গোসল করতেন। পুকুরের তাজা মাছ এবং ক্ষেতের তাজা শাক-সবজি দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করতেন। গরুর খাঁটি দুধও বঙ্গবন্ধুর পছন্দের তালিকায় ছিল। যতদিন মীর বাড়িতে থাকতেন বই পড়তেন, রেডিও শুনতেন আর গল্প করতেন।
এসব তথ্য সকাল সন্ধ্যাকে জানান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং বর্তমানে মীর বাড়ির বাসিন্দা মীর রানা আহমেদ ফজলু।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুবই আমুদে ও হাসি খুশি মনের মানুষ ছিলেন, ছিলেন অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী। বাড়ির ছোট-বড়, শিশু-বৃদ্ধ সকলের সাথে আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করতেন। মাঝে মাঝে বাড়ির উত্তর পাশে বাবা শহীদ আদম (রা.) মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন।
বাড়িটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এখন তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে ফজলু বলেন, “আমাদের বাড়ির সামনে একটি জাদুঘর করারও ইচ্ছাও আছে।”
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার দরগা বাড়ি গ্রামের মীর বাড়ির (তৎকালীন ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ মহকুমার কাজী কসবা গ্রাম) মীর আশরাফ উদ্দিন আহাম্মেদ মাখনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নি মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগমের বিয়ে হয়।