সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক নিশ্চল হয়ে পড়েছে।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি একদিন আগেই ঘোষণা করেছিল।
শাহবাগে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আগারগাঁও, গুলিস্তান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মালিবাগ, মহাখালীতে সড়কে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তাতে এসব এলাকার সড়কে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
শাহবাগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল আসে। ব্যানারসহ আসা মিছিলটিতে ছিল ২০-৩০ জন। এরপর ধীরে ধীরে আরও মিছিল জড়ো হতে থাকে।
সকাল ১১টা ১০ মিনিটের কিছু সময় পর শাহবাগের পূর্ব দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ফুটব্রিজের নিচে বাঁশ ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীদের একটি দল।
তখন শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোডের দিকে রাস্তা খোলা ছিল। কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ দিকে আসার পথ এবং শাহবাগ হয়ে বাংলামোটরের দিকে রাস্তাও খোলা ছিল।
তবে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল শাহবাগ মোড় থেকে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে পরীবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কিও হয়।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে শাহবাগের দিকে আসার পথে পুলিশের ব্যারিকেড দিয়েই সড়ক বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। ফলে শাহবাগ হয়ে গাড়ি চলাচল দুপুর থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
দুপুরে গুলিস্তানে জিপিওর সামনে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। জিপিও মোড়ের সামনে পুরো চত্বরজুড়ে অবস্থান নেওয়া এই শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলার পাশাপাশি সড়কে ক্রিকেটও খেলছে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে অবস্থান নিয়ে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মিরপুর রোড হয়ে পড়েছে অচল।
সকাল ১১টার দিকে মহাখালীর আমতলী মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে একদল শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাখালী দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে।
তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড়েও অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আগারগাঁওয়ে অবস্থান নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা; তারাও সেখানে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
আগারগাঁওয়ে আটকে পড়া আলী রেজা নামের এক ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, তিনি শ্যামলী থেকে অফিসের কাজে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলেন। আগারগাঁও মোড় বন্ধ করে রাখায় তিনি পরিকল্পনা কমিশনের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে রিকশা নেন। কিন্তু সেখানেও বাঁশ দিয়ে সড়ক আটকে দেওয়ায় তিনি আর যেতে পারছেন না।
“প্রচণ্ড গরমের কারণেও হেঁটে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আবার আজ কাজ করতে না পারলে বড় ক্ষতি হবে,” উৎকণ্ঠিত হয়ে বলেন তিনি।
মালিবাগ মোড়েও অবস্থান নিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। ফলে সেই সড়কেও গাড়ি চলাচল বন্ধ।
গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীতে চলাচলরত মানুষ পড়ছেন দুর্ভোগে। যেসব সড়ক বন্ধ হয়নি, সেখানে দেখা দিয়েছে ব্যাপক যানজট।
ঢাকার সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করেছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্ট চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় দেওয়ার পর জুলাইয়ের শুরুতে রাজপথে আন্দোলনে নামে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। প্রথমে তারা বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত শাহবাগে সড়কে অবস্থান নিলেও ধীরে ধীরে কর্মসূচি পালনের স্থান বাড়তে থাকে। বুধবার দিনব্যাপী কর্মসূচি ডাকে তারা।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার দাবি জানিয়ে আসা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠনও বুধবার সকালে শাহবাগে এক পাশে অবস্থান নিয়েছিল। তবে পরে তারা মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে চলে যায়।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে সরকারের পাশাপাশি আন্দোলনকারী দুজন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে আপিল বিভাগ বুধবার সকালেই হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়। যার অর্থ কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বহাল থাকবে আপাতত।
সেই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, তাদের দাবিটি এখন সরকারের কাছে। আর তাহলো কোটা সংস্কার করতে হবে।
“আমাদের দাবিটি বা আন্দোলন এখন কোর্টের জায়গায় নেই। নির্বাহী বিভাগের কাছেই সকল দাবি বা প্রশ্ন রাখতে চাই। সকল প্রকার কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।”
তবে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে ইতিবাচক মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান দেখতে চান তিনি। তারা চান কোটা ৫ শতাংশ নামিয়ে আনা হোক।