Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

ফিলিস্তিনের পর বাংলাদেশ : প্রিয়াঙ্কার ব্যাগ রাজনীতি

ফিলিস্তিন লেখা ব্যাগ নিয়ে রবিবার লোকসভায় যান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
ফিলিস্তিন লেখা ব্যাগ নিয়ে রবিবার লোকসভায় যান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
[publishpress_authors_box]

পার্লামেন্টে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষরে তর্কযুদ্ধ দেখতে অভ্যস্ত সবাই। তর্কাতর্কির সময় উত্তেজনার কোনও পর্যায়ে আসন ছেড়ে বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করা, পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করা-এই উপমহাদেশে খুবই সাধারণ ঘটনা।

তবে এবার ভারতে ঘটেছে ভিন্ন এক ঘটনা। পার্লামেন্টে তর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে ব্যাগ, যা দেশটির কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। তার ব্যাগ নিয়েই রবিবার তোলপাড় হয় লোকসভায়।

ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেদিন ‘প্যালেস্টাইন’ লেখা একটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে লোকসভায় গিয়েছিলেন লোকসভার নবীন সদস্য প্রিয়াঙ্কা। আর এজন্য ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

তাদের সমালোচনা অবশ্য একেবারেই উড়িয়ে দিয়ে এর কড়া জবাব দেন প্রিয়াঙ্কা।

তিনি বলেন, “আমি কী পরব, সে সিদ্ধান্ত কে নেবে? পিতৃতন্ত্র যদি ঠিক করে, আমার বেশ-ভূষা কেমন হবে, তাহলে আমি তা সমর্থন করি না।

“আমার যা ইচ্ছা, আমি তাই পরব। এনিয়ে আমার অবস্থান আমি আগেও অনেকবার বলেছি। আমার এক্স অ্যাকাউন্টে এনিয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার করা আছে।”

লোকসভায় বিজেপি সদস্যদের আক্রমণ ছিল এই বলে যে প্রিয়াঙ্কা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়ালেও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিষয়ে নীরব।

সেই কারণেই কি না, সোমবার বাংলাদেশ লেখা ব্যাগ নিয়ে লোকসভায় যান ভারতের কংগ্রেসের এই নেতা; এবার তাতে লেখা, “বাংলাদেশি হিন্দু ও খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়ান।”

লোকসভার বাইরে বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ অন্যরা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলার শিকার হওয়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন কংগ্রেসের এই নেতা।

সোমবারও লোকসভায় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু ও খ্রিস্টান ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ভারত সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।

“আমাদের উচিৎ, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করা। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।”

বিজেপির আক্রমণ ও প্রিয়াঙ্কার জবাব

লোকসভায় রবিবার ‘প্যালেস্টাইন’ লেখা ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগের দিন নিজের বাসভবনে ভারতে ফিলিস্তিন দূতাবাসের প্রতিনিধি আবেদ এলরাজেগ আবু জাজেরের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রিয়াঙ্কা।

এর সমালোচনা করে বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেছিলেন, দেশের চেয়ে বাইরের দেশের ইস্যুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেসের এই নেতা।

তাদের মধ্যে ছিলেন লোকসভার সদস্য ও বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, “ব্যাগটা কি কোনও বার্তা বহন করেছে? এটা ভারতের পার্লামেন্ট। এখানে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে আসেন, যারা ১৪০ কোটি ভারতীয়ের চাওয়া তুলে ধরেন।

“অল-ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি একবার ‘জয় ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিয়েছিলেন। এখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ফিলিস্তিনের ব্যাগ নিয়ে পার্লামেন্টে চলে আসছেন।”  

পিতৃতন্ত্র ঠেকানোর নামে প্রিয়াঙ্কা ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচার’ করছেন বলেও সোশাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া।

এসব সমালোচনার জবাব দিতে প্রিয়াঙ্কা বেশি সময় নেননি। তিনি বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “এসব আবোল-তাবোল না বকে আপনাদের উচিত বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় পদক্ষেপ নেওয়া; হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা।”

এসময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গও টানেন প্রিয়াঙ্কা।

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, তা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, চলমান অত্যাচারের বিরুদ্ধে। আমাদের মূল্যবোধ সেসময় ভারতকে মহান করে তুলেছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধও সেই একই মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তখন আমরা একা ছিলাম।

“ইন্দিরাজী গোটা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশে যে নৃশংসতা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। কেউ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি কিন্তু আমাদের দেশ দাঁড়িয়েছিল। ইন্দিরাজী, আমাদের সেনাবাহিনী এবং আমাদের জনগণ অত্যাচার রুখে দিয়েছিল।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান

ইসরায়েলের পাশে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ভারত দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে। গত সপ্তাহেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “স্বাধীন, সার্বভৌম ও কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ।”

এছাড়া গাজা উপত্যকায় গত বছর ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর ফিলিস্তিনে উল্লেখসংখ্যক মানবিক সহায়তা পাঠায় ভারত। 

অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে তার ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই সম্পর্কে চিড় ধরে।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ‘নির্যাতন চলমান’ অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ শাখার সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গত নভেম্বরে গ্রেপ্তার করা হলে দু’দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন গভীর হয়। বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন ভারতের রাজনীতিকরা, যার নিন্দা জানায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।      

তথ্যসূত্র : এনডিটিভি                              

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত