আমানত ফেরতের চাপ সামলাতে গতকাল বুধবার ১৩ নভম্বের পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে দুর্বল সাত ব্যাংক। এর মধ্যে গত সাত দিনে এক হাজার কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় গত প্রায় দেড় মাসে সবল ১০টি ব্যাংক এই টাকা ধার দিয়েছে। ফলে অতিরিক্ত কোনও টাকা না ছাপিয়েই এই পরিমাণ নগদ অর্থ সরবরাহ করতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে, যার আওতায় সবল ব্যাংক থেকে এই তহবিল ধার হিসেবে নিতে পেরেছে দুর্বল ব্যাংকগুলো।”
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেশ কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা আমানত তুলে নিতে শুরু করলে নগদ অর্থের সঙ্কটে পড়ে ব্যাংকগুলো।
আমানত তুলে ফেলার এই চাপ সামলাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি গ্যারান্টি সুবিধা চালু করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য। কারণ, ব্যাংকগুলো এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, কোনও সবল ব্যাংক তাদের টাকা ধার দিতে রাজি হচ্ছিল না।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এই গ্যারান্টি সুবিধার আওতায় নগদ অর্থ ধার নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা শুরু করে। গত ২ অক্টোবর ধার নেওয়া শুরু হয়। সেদিন চারটি ব্যাংক ধার নেয় ৯৪৫ কোটি টাকা।
এই গ্যারান্টির আওতায় নেওয়া অর্থ দুর্বল ব্যাংকগুলো ফেরত না দিতে পারলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এই গ্যারান্টির বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংগুলোর কাছ থেকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ‘গ্যারান্টি ফি’ আদায় করে।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে এই পদ্ধতিতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য নগদ টাকা ধার নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি, ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ধার করেছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে।
এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা ও ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে।
তারল্য ধার দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক পিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এর মধ্যে গত সাত দিনে এক হাজার কোটি টাকা ধার করেছে আলোচিত সাত ব্যাংক। গত ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থ সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছিলেন, “আমরা সব আমানতকারীকে আহ্বান করছি প্রয়োজনের বেশি টাকা ব্যাংক থেকে তুলবেন না। আমরা আস্থা ফেরাতে চাই। এ জন্য কাজ চলছে। যেসব ব্যাংকে সমস্যা হয়েছে, সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ইতোমধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে।”