ব্যাংক খাতের ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসব ব্যাংক যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
গভর্নর বলেন, “আমরা আশা করি না কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হবে। তবে এটাও ঠিক অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। ১০টার মতো ব্যাংকের অবস্থা এমন। সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এই ব্যাংকগুলো যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য আমরা ইনটেন্সিভ প্রোগ্রাম হাতে নিচ্ছি। দরকার হলে একীভূত করা হবে ব্যাংকগুলোকে। কিন্তু গ্রাহকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।”
গভর্নর সংবাদ সম্মেলনে ১০টির মতো ব্যাংকের এমন দশার কথা বললেও সেগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।
আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে গভর্নর বলেন, “প্রতিটি ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমানত বীমা স্কিম আছে। এই বীমার আওতায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বীমা দ্বারা আচ্ছাদিত আছে। এখন এটাকে আমরা দুই লাখে উন্নীত করলাম। ফলে প্রতিটি ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যে যাদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত আছে তাদের টাকা খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা নেই।”
আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংক খাতের আমানতকারীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের আমানত দুই লাখ টাকার মধ্যে। তাই ব্যাংক খাতের বড় একটি অংশেরই আমানত ফেরত পাওয়া নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই।
গভর্নর বলেন, কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হলে ওই ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যে যাদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত আছে তাদের টাকা ফেরত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বেশি আমানত আছে যাদের তাদের এই বীমার আওতায় অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, “যার ৫ লাখ টাকা আমানত আছে, সে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমানত বীমার আওতায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত পাবে। বিশ্বের কোনও দেশই ব্যাংকিং খাতের আমানতের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরাও ৯৫ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটা এস আলমের প্রতিষ্ঠান হোক বা সালমান এফ রহমানের। কোনও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি। যদি কেউ এস আলমের সম্পত্তি কিনে, তবে নিজ দায়িত্ব কিনবেন। তার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নিবে না।
গভর্নর বলেন, “৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো এ খাতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।”
ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের (এসএমই) ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে টাকা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিতে পারছি না। শুধু তাই নয়, বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু কোনও একটা সমস্যার কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণগুলো বিতরণ হচ্ছে না। আমরা ব্যাংকগুলোকে লিখিতভাবে এই সমস্যার কারণ এবং সমাধান জানাতে বলেছি।”
খুব শিগগিরই ক্ষুদ্রঋণের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।
এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্কিমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো এসব অর্থ বিতরণ করতে পারছে না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অর্থ বিতরণের ব্যবস্থা করব। যাতে দেশে এসএমই খাত শক্তিশালী হয়।”
ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে ও ঋণ আদায়ে গতি আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠিত টাস্কফোর্স আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের সমস্যা নিরূপণ এবং আগের নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করা হবে। যদি দেখা যায় যে, কোনও নীতিমালা শুধু গুটিকয়েক ব্যবসায়ের জন্য করা হয়েছে তাহলে সেটা বাতিল করা হবে। আর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা থাকবে।”
এসময় ব্যাংক খাতের পরিবারতন্ত্র ভাঙার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।