মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমাতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন নীতি সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ অর্থ ধার করতে আগের থেকে বেশি সুদ গুণতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এতে ব্যাংকের তহবিল খরচ বেড়ে গিয়ে ঋণের সুদ বৃদ্ধিতে চাপ সৃষ্টি করবে।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির পঞ্চম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের বিষয়টি একটি সার্কুলার আকারে প্রকাশও করা হয়। এতে বলা হয়, ওভারনাইট রেপো নীতি সুদহার (পলিসি রেট) ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একইসঙ্গে নীতি সুদহারের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫০ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থেকে নতুন এই সুদহার কার্যকর হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
গত জুলাই মাসের শুরু থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছায়। এ সময় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও নিম্মমুখী প্রবণতায় ছিল।
তাছাড়া ওই সময় রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস– পোশাক খাতসহ অন্যান্য রপ্তানি খাতও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে।
সবশেষ বন্যা পরিস্থিতর কারণেও বিভিন্ন স্থানে নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগামি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়াতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বা তার বেশি করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায় বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে তারল্য সংকটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তুলনামূলক বেশি সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করতে হবে। এতে তাদের তহবিল ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহারও বাড়বে। ফলে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমে এলে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমে আসবে, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন তারা।