ভারতকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেই ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের সঙ্গে ম্যাচটি তাই হয়ে পড়ে নিছক আনুষ্ঠানিকতার। সেই সুযোগটা নিতেই কিনা বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু আগের দুই ম্যাচের একাদশের ৯ ফুটবলারকে দিলেন বিশ্রাম।
তা বেঞ্চের ফুটবলাররা মোটেও হতাশ করেননি কোচকে। মঙ্গলবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ভুটানকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে হারায় ভারত। এই জয়ে ফাইনালও নিশ্চিত হয় ভারতের মেয়েদের। ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে আবারও ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে প্রথম নারী সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টেও ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন ঐশী খাতুন। নিজে জোড়া গোল করেছেন। করিয়েছেন দুটো গোল। এছাড়া ১টি করে গোল করেছেন নুসরাত জাহান মিতু ও তৃষ্ণা রানী।
আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চলছে। অথচ ফুটবলাররা সেভাবে বিশ্রাম পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় কোচ শুক্লা দত্ত। প্রতি ম্যাচের আগে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা বিরতি দেওয়া উচিত। কিন্তু সেই বিশ্রাম কোনও দলই পাচ্ছে না।
কৌশলটা তাই বাধ্য হয়েই নিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী। প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান খেয়েছে ১১ গোল। দুর্বল ভুটানের বিপক্ষে তাই বেঞ্চের ফুটবলার খেলিয়ে সেরাদের দিলেন বিশ্রাম।
ভুটানের সঙ্গে ম্যাচে কোচ বিশ্রাম দেন দলের বড় অস্ত্র টুর্নামেন্টের ৩ গোল করা মোসাম্মৎ সাগরিকা, অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, জয়নব বিবি, সুরমা জান্নাত, মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, পূজা দাস, ইতি খাতুন ও বন্যা খাতুনকে।
আর দলে সুযোগ পেয়ছেন গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী, রুমা আক্তার, ঐশী খাতুন, নুসরাত জাহান মিতু, নাদিয়া আক্তার, তৃষ্ণা রানী, কানন রানী, লুৎফরা আক্তার, রিতু আক্তার, সুলতানা আক্তার, উমেহ্লা মার্মা। এমনকি ম্যাচের শেষ দিকে এসে প্রধান গোলরক্ষক স্বর্ণাকে তুলে নিয়ে কোচ মাঠে নামান দ্বিতীয় গোলরক্ষক জুঁই আক্তারকে।
বেঞ্চের ফুটবলারদের এক রকমের পরীক্ষায় ছিল এই ম্যাচে। নতুন মেয়েরা কেমন খেলে সেটাও পরখ করতে চেয়েছিলেন কোচ। তা কোচের আস্থার ভালো প্রতিদানই দিয়েছেন ইতি, ঐশিরা।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে প্রথম এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে জটলা থেকে গোল করেন মিতু। ভুটানের ডিফেন্ডার কেলজাং শেরিং ওয়াংমো ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল তুলে দেন মিতুর কাছে। মিতুর শট জড়ায় জালে।
৩১ মিনিটে নুসরাত জাহান মিতুর কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে দুর্দান্ত হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঐশী (২-০)।
বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে ঐশী আরেকটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভুটান গোলরক্ষক দীক্ষা রাজকে কাটিয়েও শট নিতে দেরি করেন তিনি। ততক্ষণে ডিফেন্ডাররা এগিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করেন।
৫৭ মিনিটে তৃষ্ণার গোলের বড় অবদান ঐশীর। বল নিয়ে প্রচন্ড গতিতে বক্সে ঢুকেন ঐশী। তার বাড়িয়ে দেওয়া বলে আলতো টোকায় ৩-০ করেন তৃষ্ণা।
ভুটানের জালে চতুর্থ গোলটি দিয়েছে ৬৪ মিনিটে। এই গোলে যতটা না ঐশীর কৃতিত্ব এর চেয়ে বেশি দায় ভুটানের ডিফেন্ডার শেরিং পেলজামের। গোলরক্ষক দীক্ষা বলটি দিতে গিয়েছিলেন পেলজামকে। কিন্তু তিনি বলটা রিসিভ করতে পারেননি। পাশে দাঁড়ানো সুযোগসন্ধানী ঐশী বল নিয়েই পাঠিয়ে দেন জালে।
ম্যাচের ৮১ মিনিটে গোলরক্ষক স্বর্ণার বদলে নামেন জুঁই। তবে এই পরিবর্তনেও স্কোরের কোনও রদবদল হয়নি।
বাংলাদেশ দল : স্বর্ণা (জুঁই), রুমা, ঐশী, নুসরাত জাহান, নাদিয়া আক্তার, তৃষ্ণা রানী, কানন রানী, লুৎফরা আক্তার, রিতু, সুলতানা আক্তার, উমেহ্লা।