Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
একান্ত সাক্ষাৎকারে ডেভ হোয়াটমোর

বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে সংগঠিত মনে হয়নি

Sports-Dave-W-M-(960-x-540-px)
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ ক্রিকেট তার হাত ধরেই অগ্রগতির পথে হেঁটেছে। কোচ ডেভ হোয়াটমোরের সঙ্গে তাই এদেশের ক্রিকেটের সম্পর্ক গভীর। এবার প্রথমবারের মতো এসেছেন বিপিএলে ফরচুন বরিশালের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হয়ে। ব্যস্ততার ফাঁকে সকাল সন্ধ্যাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের মতামত জানালেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ।

সকাল সন্ধ্যা: আপনার সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কেমন দেখেন ?

হোয়াটমোর : আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এটা তো দেখাই যাচ্ছে এখন। ক্রিকেটারদের খেলা বোঝার গভীরতা বেড়েছে। ক্রিকেটার উঠে আসার পাইপলাইনের গভীরতা বেড়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দল, ‘এ’ দল, বাংলাদেশ টাইগার্স, জাতীয় দলের জন্য ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট পুল আছে। এই দলগুলোতে ক্রিকেটাররা একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে এগিয়ে এসেছে। ক্রিকেটারদের পরিমানও বেশি। ঘরোয়া ক্রিকেট একটা ব্যাপার, যেখানে সবসময় উন্নতির জায়গা থাকে। আমি জানি না, এখন বাংলাদেশ ঘরোয়া ক্রিকেটের কি অবস্থা। তবে যেহেতু ভালো প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়ছে তার মানে অবশ্যই ঘরোয়া ক্রিকেটও আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। এছাড়া ক্রিকেট কাঠামোগত উন্নতি বিশাল হয়েছে দেখছি। সব মিলিয়ে, আমার কোচিংয়ের সময়ের (২০০৩-২০০৭) সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট অবশ্যই এগিয়েছে।

প্রশ্ন : কিন্তু বাংলাদেশ তো বড় টুর্নামেন্টেগুলোতে এখনও ভালো করতে পারছেনা ….।

হোয়াটমোর : এর কারণ সত্যিই বলা কঠিন। কিন্তু এটা সত্যি, কোন দলই খারাপ করতে চায় না। এর কারণ বলা সত্যিই কঠিন।

প্রশ্ন : ২০০৭ বিশ্বকাপে আপনার কোচিংয়ে ৩টি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এত বছর পর ২০২৩ বিশ্বকাপে ২টি জয়। এটা তো উন্নতির গ্রাফ নিচের দিকে যাওয়া !

হোয়াটমোর : এই সব ক্ষেত্রে সব সময় কেবল সিঁড়ি ভেঙে উপরেই উঠবে, এমনটা হয় না। বড় টুর্নামেন্টে উত্থান-পতন থাকবে। বাংলাদেশ গত বিশ্বকাপে খারাপ করার কারণও আছে। বিশেষ কিছু কারণ, যা আমার চেয়ে হয়ত আপনারা ভালো জানেন। এত বড় টুর্নামেন্টের আগে বড়সড় কোনো বিতর্ক হলে অবশ্যই দলে বা ক্রিকেটারদের মানসিকতায় তার প্রভাব পড়বে। তখনই সবকিছু কঠিন হয়ে যায়।

প্রশ্ন : ২০২৩ বিশ্বকাপটা তো আপনি নিবিড় ভাবে দেখেছেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো।

হোয়াটমোর : অবশ্যই, পুরো ৪৮টি ম্যাচ। তখন আমি একটি রেডিওতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছি। ম্যাচের আগে ও ম্যাচ শেষে খেলাগুলো বিশ্লেষণ করেছি। বাংলাদেশের সব ম্যাচ দেখেছি, আমার মনে হয়নি বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে সঠিক ভাবে খেলতে পেরেছে। যেভাবে এমন আসরগুলোতে একটা দল খেলতে নামে আরকি….ওই ব্যাপারটার অভাব ছিল।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ দলের কোনদিকগুলো নিয়ে আপনার এমন মনে হয়েছে?

হোয়াটমোর : আমি দলের ভেতরকার খবর তো বলতে পারব না, এটা আমার কাজ না। আমার মনে হয় বিশ্বকাপে ঠিক সুসংগঠিত ছিল না। ব্যাটিং অর্ডারের ব্যাপারটা মনে আছে, মেহেদি হাসানকে (মিরাজ) দেখলাম, উপর থেকে নিচে নানা পজিশনে খেলেছে। মাহমুদউল্লাহ শুরুতে নিচে খেললেও পরে উপরের দিকে খেলেছে। মনে হয় লিটন আর তানজিদ (তামিম) ছাড়া আর কারও নির্দিষ্ট ব্যাটিং পজিশন ছিল না। এভাবে একটা বিশ্বকাপে সাফল্য আনা কঠিন।

প্রশ্ন : ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কিছু ঘটনা ঘটেছে যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে সবাই জানে। এগুলো কি আসলে একটা জাতীয় দলের জন্য আদর্শ উদাহরণ?

হোয়াটমোর : অবশ্যই এমন কিছু কখনই হওয়া উচিত নয়। কিন্তু সময়কে তো আর বেধে রাখা যায় না। এগুলো হয়ে যেতে পারে, তখন এমন বিষয়গুলোকে ম্যানেজ করতে হয়। বিশ্বের আর দলগুলোতে এমন কিছু হয়, কিন্তু সেগুলো খুব কম সংবাদ মাধ্যমে আসে বা আসলেও ম্যানেজ হয় বা ছড়ায় না। তবে অবশ্যই এগুলো হওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন : ক্রিকেটারদের কি নিজেদের ইগো পাশে রেখে জাতীয় দলের জন্য খেলা উচিত না?

হোয়াটমোর : অবশ্যই। যে কোনো খেলায়, যে কোন দলের জন্যই এটা আদর্শ। কারণ আপনি তখন একটা লোগার অধীনে চলে এসেছেন, একই ক্যাপ পড়ছেন। দলের সবার প্রতি আপনার সমান ভরসা থাকতে হবে। দল হয়ে মাঠে যেতে হবে। এজন্যই তো ‘‘টিম গেম’’ ব্যাপারটা এসেছে।

প্রশ্ন : আপনি যদি আরও কয়েক বছর কোচ থাকতেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে দিতে পারতেন মনে হয়?

হোয়াটমোর : আমি তো অবশ্যই বলব, পারতাম। আমি চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট ২০০৩ বিশ্বকাপের পর যে জায়গায় ছিল সেখান থেকে এগিয়ে নিতে। আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম ভালো সময় এই দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে কাটিয়েছি। আমি যদি আরও কিছুদিন থাকতাম…..তো বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং আমার জন্য তা ভালো হতেও পারতো। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কেউ বলতে পারে না। দেখা গেল আমি থাকলাম আর পরের সময়টা ভালো হলো না, এমনও হতে পারতো।

প্রশ্ন : আবার যদি সুযোগ পান বাংলাদেশ ক্রিকেটে কাজ করার…

হোয়াটমোর : অবশ্যই আমি তা গ্রহণ করবো। সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে হলেও। কারণ আগেরবার আমি এই অংশে কাজ করতে পারিনি। বাংলাদেশের প্রতি যেহেতু আমার আলাদা ভালোলাগা আছে তো আমি এদেশের ক্রিকেটের যে কোন অগ্রগতির সঙ্গে থাকতে চাইবো।

প্রশ্ন : এখন প্রত্যেক দলে বিশেষায়িত কোচ আছে। আপনার সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে ক্রিকেট কোচিং কি অনেক সহজ হয়ে উঠেছে ?

হোয়াটমোর : হ্যাঁ, এখন প্রতি দলে কোচিং স্টাফের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু দলে তো অনেক বেশিও আছে। এখন ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে, সেই দিক থেকে ক্রিকেটারদের জন্য সব কিছু ম্যানেজ করা হয়তো কঠিন। তাই বেশি কোচিং স্টাফের মডেলগুলো ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্যই বানানো হয়েছে। হ্যাঁ, এই একটা জায়গায় আমার কোচিংয়ের সময়ের সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য দেখছি।

প্রশ্ন : আপনি তো এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ টুর্নামেন্টে কোচিং করাচ্ছেন। ক্রিকেটের এই ফরম্যাট কেমন উপভোগ করছেন ?

হোয়াটমোর : অবশ্যই ভালো। কানাডা টি-টোয়েন্টি লিগে মন্ট্রিল টাইগার্সের কোচ ছিলাম। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবার। এটা আমার ক্যারিয়ারের একটা সাফল্য বলতে হবে।

প্রশ্ন : সবসময়ই বলা হয় বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু তারা বড় মঞ্চে খুব কমই পারফর্ম করে।

হোয়াটমোর : বাংলাদেশে তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিভা সবসময়ই ছিল এবং আছে। অবশ্যই ক্রিকেট সবসময় খেলোয়াড়দের জন্য, তারা খেলবে, তারা সফল বা বিফল হবে কিন্তু এই দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক কিছু। বড় টুর্নামেন্টে সবসময় প্রতিভা দিয়ে সাফল্য পাওয়া যায় না। সেখানে মানসিক ভাবে বড় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি বা তৈরি হওয়ার বিষয় থাকে। তার জন্য সঠিক ভাবে তরুণদের যদি তৈরি করা না গেলে সাফল্য আসা কঠিন।

প্রশ্ন : আপনি ভারতেও কাজ করেছেন। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের তফাৎটা ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন …

হোয়াটমোর : আমি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত নই। তাই এগুলো নিয়ে বলতে পারব না। আমি জানি যে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ জিতেছে। এর মানে ক্রিকেটার তৈরি বা উঠে আসার জায়গাটা আছে। নয়তো প্রতিযোগিতা করে যুব ক্রিকেটাররা এই সাফল্য পেত না। তবে ভারতের কথা বলতে পারি যে ওখানে সারা বছর ক্রিকেট হয়। দু-তিনটা টুর্নামেন্টটা ওদের একাধিক ঘরোয়া আসর আছে বিজয় হাজারে ট্রফি, রঞ্জি ট্রফি, দুলীপ ট্রফি, ইরানি ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি। তাদের ঘরোয় কাঠামো অনেক শক্তিশালী।

প্রশ্ন : একদম শেষদিকে চলে এসেছি। আপনার সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার বাংলাদেশকে কেমন দেখেন?

হোয়াটমোর : এখন বাংলাদেশ টেস্টে অনেক ভালো দল। হোমে সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে। বিদেশেও জিতেছে।

প্রশ্ন : হোম কন্ডিশনে বাংলাদেশ সাফল্য পেলেও বিদেশে নিয়মিত ভালো করতে পারছে না।

হোয়াটমোর : দেখেন, এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হয়েছে। আপনি এখানে পয়েন্ট পেতে চান, নাকি বিদেশে ভালো করার জন্য প্রস্তুত হতে চান। বিষয়টা হলো দৃষ্টিভঙ্গির। এখন নিজের কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জেতা, পয়েন্ট পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বিদেশি কন্ডিশনের জন্য যতটুকু সম্ভব তৈরি হয়ে ভালো করার চেষ্টা করা। এটাই এখনকার ক্রিকেট, অন্তত নিজের দেশের টেস্ট জিততে হবে।

প্রশ্ন : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

হোয়াটমোর : ধন্যবাদ আপনাকেও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত