শীতের রাতেও কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উত্তাপ! ভুভুজেলা, বাঁশি, ড্রাম- বাদ্যযন্ত্রের কমতি ছিল না দর্শকদের কাছে। লাল-সবুজের পতাকা উঁচিয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে সারাক্ষণ গলা ফাটিয়েছে। ম্যাচ শেষে হাসি মুখেই ফিরেছে ঘরে।
শুক্রবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আফঈদা, স্বর্ণারা নেপালকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। ১টি গোল মুনকি আক্তারের। নেপালের গোলটি সুকরিয়া মিয়ার।
টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ কাগজে কলমেও ফেবারিট। মাঠেও সেই ছাপ রেখেছে প্রথম ম্যাচে।
বাংলাদেশের রক্ষণে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, জয়নব বিবি, সুরমা জান্নাত, ইতি খাতুন। মাঝ মাঠে বন্যা খাতুন, স্বপ্না রানী। আক্রমণভাগের বড় অস্ত্র সাগরিকা, পূজা, মুনকি। গোলপোস্টের নিচে ছিলেন স্বর্ণা।
যদিও ২০২১ সালে হওয়া প্রথম টুর্নামেন্টের বেশিরভাগই নেই এবারের দলে। নতুন দলে আছেন জাতীয় দলের মাত্র ৫ জন- আফঈদা, মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী, ডিফেন্ডার ইতি খাতুন, সুরমা জান্নাত ও গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী মন্ডল। এদের নিয়েই আক্রমণের পরিকল্পনা সাজান কোচ সাইফুল বারী।
ম্যাচে নেপালের চেয়ে ফিটনেস, গতি সব দিকেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। পুরো ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়েই খেলেছে।
ফাইনালে ওঠার জন্য টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটি জিতে সেই পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গেলেন আফঈদা, সাগরিকারা।
পুরো ম্যাচটি যেন সাগরিকাময়। নিজে দুটি গোল করেছেন, আদায় করেছেন একটি পেনাল্টি। যদিও সেই পেনাল্টি থেকে আফঈদা গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশের মেয়েরা বেশ দাপটের সঙ্গেই খেলেছে। মাঝে মধ্যে দুয়েকবার আক্রমণে উঠলেও নেপালের ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিং ছিল না। অবশ্য ধারার বিপরীতে যে গোলটি খেয়েছে বাংলাদেশ, সেই দায়টা অনেকখানি এসে পড়ে গোলরক্ষক স্বর্ণার ওপর।
শুরু থেকেই আক্রমণের পর আক্রমণ করেছে বাংলাদেশ। পূজা, মুনকি, সাগরিকারা সুযোগ পেয়েও জালে বল ঢোকাতে পারেনি। একে তো প্রথম ম্যাচ। এর ওপর স্নায়ুচাপে তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই মূলত গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়েছেন।
প্রথম গোলটি পেতে বাংলাদেশকে তাইতো অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৯ মিনিট পর্যন্ত।
৪০ মিনিটে প্রথম গোলটি পেলেন সাগরিকা। মাঝ মাঠের কাছাকাছি থেকে স্বপ্না রানীর হেড। বল পেলেন সাগরিকা। এরপর দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে করেন গোল । ওই সময় অবশ্য নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাং জায়গা ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে আসেন। সেই সুযোগে হয়েছে গোল।
পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন মুনকি আক্তার। ডান প্রান্ত দিয়ে ইতি আক্তারের পাস। প্রথমে বলটা থামিয়ে নেন মুনকি। এরপর দুর্দান্ত ভলিতে বল জড়ান জালে।
বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে স্কোর ৩-০ হতে পারতো। নেপালের ডিফেন্ডার সিমরান বক্সের মধ্যে এগিয়ে যাওয়া সাগরিকাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আফঈদার নেওয়া শট সাইড পোস্টে লেগে ফেরে। ফিরতি শট সাগরিকা নিলেও গোলরক্ষক সুজাতা ধরে ফেলেন।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পায় নেপাল। মাঝ মাঠ থেকে নেপালের অধিনায়ক সারাহ লং বল দিলে সেটা বক্সে গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ গোলরক্ষ স্বর্ণা তখন জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। সুযোগে ২-১ করেন নেপালেন সুকরিয়া মিয়া।
গোল খেয়ে আক্রমণে আরও ধার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। ৫৭ মিনিটে সাগরিকা করেন ৩-১। মাঝ মাঠ থেকে ইতির বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন সাগরিকা। এরপর ডিফেন্ডার মায়া মাসকে ও বদলি গোলরক্ষক কারুণকে কাটিয়ে আলতো টোকায় করেন নিজের দ্বিতীয় গোল।
ম্যাচের শেষ দিকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন সাগরিকা। কিন্তু দুর্বল শটটি ধরে ফেলেন নেপালের গোলরক্ষক।
বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রতিপক্ষ ভারত।
এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে ভারত ১০-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ভুটানকে।
বাংলাদেশ দল : স্বর্ণা, আফঈদা, জয়নব, সুরমা, মুনকি (নবিরন), স্বপ্না, সাগরিকা, পূজা (ঐশি), উমেহ্লা (তৃষ্ণা রানী ও রুমা), ইতি, বন্যা।