দশরথ রঙ্গশালায় শ দুয়েক বাংলাদেশি দর্শক একটু পরপর উৎসাহ দিয়ে গেলেন সাবিনা খাতুনদের। মনিকা, ঋতুপর্ণাদের পায়ে যতো বার বল পড়েছে ততবারই সমস্বরে চীৎকার করেছেন। নারী সাফে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের। এই ম্যাচে ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ের সুবাদে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এর আগে সর্বশেষ সাফে ২০২২ সালে এই স্টেডিয়ামেই গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে ভারতকে হারায় বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচের মুখোমুখিতে দ্বিতীয়বার জিতল বাংলাদেশ। ৯ হার ও ১ ড্র।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করেছেন তহুরা খাতুন। অন্য গোলটি আফঈদা খন্দকারের। ভারতের ১টি গোল করেন বালা দেবী। ম্যাচের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছেন তহুরা।
পাকিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে ড্র করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। যদিও সমীকরণ ছিল এমন যে কমপক্ষে ৩ গোলের ব্যবধানে হারলেও চলে যেত সেমিফাইনালে। কিন্তু কোথায় কি? বরং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা জ্বলে ওঠে চেনা চেহারায়। পুরো ৯০ মিনিট একই ছন্দে খেলেছেন মাসুরা, সানজিদারা।
বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার এই ম্যাচে দুই পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান। রক্ষণে কোহাতি কিসকুর বদলে মাসুরা পারভীনকে এবং মাঝ মাঠে স্বপ্না রানীর জায়গায় দলে নেন মারিয়া মান্দাকে।
এই দুই পরিবর্তনে মাঝ মাঠ যেন প্রাণ ফিরে পায়। মনিকা চাকমা ও মারিয়া মান্দার মেলবন্ধনে যেন অক্সিজেন পায় মাঝ মাঠ। এর সঙ্গে গত ম্যাচে নিজের নামের সঙ্গে ছায়া হয়ে থাকা সাবিনা খাতুন স্ব মহিমায় জ্বলে ওঠেন। এর সঙ্গে দুই উইং দিয়ে সমানে ভারতীয় রক্ষণকে আতঙ্কে রাখেন ঋতুপর্ণা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র।
ম্যাচে বাংলাদেশ কমপক্ষে ৩ গোলের ব্যবধানে হারলেও সেমিফাইনালে উঠতো- এমন সমীকরণের সামনে নেমে কোনও রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেনি মেয়েরা। বরং অলআউট ফুটবল খেলে সমানে চাপে ফেলেছে ভারতকে।
যদিও ম্যাচের পাঁচ মিনিটেই গোল পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ঋতুপর্ণা বাম প্রান্ত দিয়ে যে ক্রসটি ফেলেন সেটিতে পা ছোয়াতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। ম্যাচের ১৮ মিনিটে কর্ণার থেকে সাবিনার উড়ে আসা বলে আফঈদার শট জড়ায় জালে। এই গোলটি যেন বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বস্তির এক গোল।
যে গোলে মেয়েরা শুধু আত্মবিশ্বাসই ফিরে পায়নি, সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তাটাও অনেকটা পরিস্কার করে ফেলেন। এরপর শুধুই বাংলাদেশের মেয়েরা টিকিটাকা ফুটবল খেলেছে। নিজেদের মধ্যে পাস দিয়ে সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়েছেন। কখনও কখনও মনে হচ্ছিল যেন ইউরোপের কোনও লিগ ম্যাচের খেলা চলছে মাঠে।
২৯ মিনিটে ঋতুপর্ণার ক্রস থেকে জটলায় দাঁড়ানো তহুরার গায়ে লেগে বাংলাদেশ করে ২-০। ভারতের ফরোয়ার্ড গ্রেসি দাংমেই ৩৭ মিনিটে অবশ্য ক্রসবারে লাগান বল। এ যাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। এরপরই বাংলাদেশ তৃতীয় গোলটি পায় ৪২ মিনিটে। যেটা ছিল পুরো ম্যাচে চোখে লেগে থাকার মতো গোল। মাঝ মাঠ থেকে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র ও তহুরা। এরপর বক্সে ঢুকে শামসুন্নাহার ক্রস ফেললে সেই গতির ওপরেই দারুণ ভলিতে বল জালে জড়ান তহুরা। পরের মিনিটেই ভারতের আক্রমণ। রুপনা চাকমার হাত ফসকে যাওয়া বল থেকে বালা দেবী আচমকা হেডে করেন ৩-১।
বিরতির পর ভারত যেন আরও আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করে। ভয়ঙ্কর কয়েকটি আক্রমণ ছিল ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের। কিন্তু সবগুলো বিপদই দারুণ দক্ষতায় সামলে নেন গত সাফে সেরার পুরস্কার পাওয়া গোলরক্ষক রুপনা। ৮০ মিনিটে বদলি নামা স্বপ্নার মাঝ মাঠ থেকে মাপা শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ভারতীয় গোলরক্ষক পাঁথোই চানু।
আগামী ২৭ অক্টোবর সেমিফাইনালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে গ্রুপ ‘বি’ রানার্স আপের সঙ্গে।
বাংলাদেশ দল : রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, আফঈদা খন্দকার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা (স্বপ্না রানি), মনিকা চাকমা, সাবিনা খাতুন, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র (সানজিদা) ।