মঙ্গলবার বিকেলে কাঠমান্ডুর আর্মি সদর দপ্তর মাঠে যখন ভারতের মেয়েরা অনুশীলন করতে এলেন, ততক্ষণে বাংলাদেশের শেষ। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সৌজন্য আড্ডায় মেতে উঠলেন ভারতের কোচ সন্তোষ কুমার কাশ্যপ। হাসতে হাসতে অনুশীলন ভেন্যু ছাড়লেন বাটলার। কিন্তু তার এই হাসিটা আরও চওড়া হতে পারে, বুধবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিপক্ষ ভারত মানেই আতঙ্কে থাকতো বাংলাদেশ। মেয়েদের ফুটবলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারতের। কখনও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে, কখনও এসএ গেমসে। কখনও অলিম্পিক বাছাইয়ে। এই ১১ বারের সাক্ষাতে ৯ বারই জয়ী দলের নাম ভারত। শুধু ২০১৬ সাফে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ।
মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে কতটা দাপুটে ফুটবল খেলে ভারত সেটা তো এই পরিসংখ্যানেই পরিস্কার। ১১ ম্যাচে বাংলাদেশের জালে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ভারত দিয়েছে ৪৩ গোল। বিপরীতে বাংলাদেশের মেয়েরা মাত্র ৪ বার ভারতের জাল খুঁজে পায়। এই চার গোলের দুটি করেছেন সাবিনা খাতুন। ১টি করে গোল করেছেন সিরাত জাহান ও কৃষ্ণা রানী সরকার।
কক্সবাজারে ২০১০ সাফে প্রথমবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ভারতের। সেবার ভারত জিতেছিল ৬-০ গোলে। এরপর ২০১১ ঢাকা এসএ গেমসে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ৭-০ ব্যবধানে। ওই বছরই অলিম্পিক বাছাইপর্বে ঢাকায় ভারত জেতে ৩-০ গোলে। ২০১২ কলম্বো সাফেও জয়ী দলের নাম ভারত। সেবারও জয়ের ব্যবধান ৩-০।
ভারতের জাল প্রথমবার খুঁজে পান সাবিনা খাতুন। ২০১৪ ইসলামাবাদ সাফে ভারত ৫-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই ম্যাচে একমাত্র গোলদাতা সাবিনা। এরপর শিলঙে ২০১৬ এসএ গেমসে বাংলাদেশকে ৫-১ গোলে হারায় ভারত। সেবারও বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন সাবিনা। ২০১৬ শিলিগুড়ি সাফের ফাইনালে ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।
ওই ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেন সিরাত জাহান স্বপ্না। এরপর ইয়াঙ্গুনে ২০১৮ অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ভারত। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের গোলটি করেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ২০১৯ সালে নেপালের বিরাটনগর সাফে ভারতের সঙ্গে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেবার সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেন সাবিনারা। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিলের ৪-০ গোলে। কিন্তু সর্বশেষ মুখোমুখিতে ২০২২ সালে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে স্বপ্না করেন জোড়া গোল। কৃষ্ণার ছিল ১টি গোল।
এবারও সেই ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। কিন্তু স্বপ্না ফুটবল ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঘর সংসার নিয়ে।
বাংলাদেশকে তাই তাকিয়ে থাকতে হবে কৃষ্ণা ও সাবিনার দিকে। ইয়াঙ্গুনে ৭ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া ম্যাচে একমাত্র গোলদাতা কৃষ্ণা নিশ্চয় গোল পেতে চাইবেন ভারতের বিপক্ষে।
চোট থেকে ফিরে কৃষ্ণার একাদশে সুযোগ পেতেই লড়তে হচ্ছে। তারপরও কৃষ্ণা আশাবাদী দলের জন্য ভালো কিছু করবেন, “যেহেতু দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরেছি এক মিনিটের জন্য নামলেও নিজের সেরাটা দিতে চাই। অবশ্যই আমি গোল করতে চাই।”
টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২০ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে সাবিনাকে একদম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন তিন পাকিস্তানি ডিফেন্ডার। ভারতীয়রাও চাইবেন তাকে যতটা সম্ভব ‘বোতলবন্দী’ করে রাখতে। কিন্তু সেমিফাইনালে ওঠার জন্য দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ককে এসবের ফাঁক দিয়েই গোল করতে হবে। প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে নিশ্চয় সাবিনাও মুখিয়ে আছেন।