Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

‘কালো’ জাকেরের আলোর পরও আফসোস

৩৪ বলে ৬৮ করেছিলেন জাকের আলী। ছবি : সংগৃহীত
৩৪ বলে ৬৮ করেছিলেন জাকের আলী। ছবি : সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]
সিলেট থেকে
সিলেট থেকে

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। শেষ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য চাই একটা ছক্কা। এভাবেই ছয় হাঁকিয়ে শারজায় ভারতকে হারিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। কিন্তু তাসকিন আহমেদ তো আর মিয়াঁদাদ নন। দাসুন শানাকার শেষ বলে এলো ১ রান। পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচটা বাংলাদেশ নাটকীয়ভাবে হারে ৩ রানে। শ্রীলঙ্কার ২০৬ রানের জবাবে থামে ৮ উইকেটে ২০৩ রানে।

পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হওয়ার পর এটাই ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম ম্যাচ। সেই যুগের শুরুটা হলো হার দিয়ে। বাংলাদেশ জিতবে ভেবে গ্যালারির বাইরে আতশবাজি ফাটাতে তৈরিই ছিলেন বিসিবির অফিসিয়ালরা। কিন্তু আয়োজন পণ্ড হয়ে যায় ৩ রানের হারে। তবু ফাটে আতশবাজি। তাতে শুধু শব্দই হল, আলো ছড়াল কিন্তু মন ভরল না গ্যালারির দর্শকদের। ঘরের ছেলে জাকের আলীর ৬ ছক্কায় ৬৮ রানের ইনিংসটি আফসোস বাড়িয়েছে তাদের।

বদলায়নি রেকর্ড

টি-টোয়েন্টিতে ২০০’র বেশি রানতাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই।

তবে এর আগে দেশের মাটিতে ১৬৪ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ। সিলেটের মাঠেও ২০৬ করে হারেনি কোনও দল। রেকর্ডটা বদলায়নি আজও (সোমবার)। মাহমুদউল্লাহ-জাকের আলী ঝড় তুললেও শেষ পর্যন্ত পারেননি জয়ের বন্দরে বাংলাদেশের জাহাজ ভেড়াতে।

৩০ রানে নেই ৩ উইকেট

বড় রান তাড়া করতে দরকার ছিল পাওয়ার প্লে-তে ঝড় তোলা। সেই ঝড় তুলতে গিয়ে বাংলাদেশ ৩০ রানে হারিয়ে বসে ৩ উইকেট।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে উইকেট পড়েছিল দ্বিতীয় বলে। বাংলাদেশের ইনিংসে পড়ে তৃতীয় বলে! শ্রীলঙ্কার পেসার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের তৃতীয় বলটি ছিল আউটসুইং। তাতে ব্যাট চালিয়ে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দেন কোনও রান না করা লিটন দাস।

২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করা সৌম্য সরকার ফেরেন বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে। তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে ক্যাচ দেন চারিথ আসালঙ্কাকে।

বিপিএলের দ্বিতীয়সেরা রান করা তাওহিদ হৃদয় শুরু করেছিলেন বিনুরাকে ছক্কা মেরে। ম্যাথুজের লেংথ থেকে একটু বাড়তি বাউন্সের বলে জায়গা করে খেলতে গিয়ে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দেন হৃদয় (৮)।

বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারায় ৩০ রানে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে (এশিয়ান গেমস ছাড়া) সবশেষ এত কম রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার তারা ২৪ রানে হারায় ৩ উইকেট।

‘শান্ত’ই থাকলেন নাজমুল

বিপিএলটা যাচ্ছেতাই গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর। ফিফটি পাননি একটিও। সেই রেশটা থাকল আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। ২২ বলে ২০ রানে ফেরেন বাংলাদেশি অধিনায়ক। মাথিশা পাথিরানার একটা বল ডান কাঁধে লেগেছিল তার। সেই ওভারেই প্রায় ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতির আরেকটা শর্ট বল চালাতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ম্যাথুজকে ক্যাচ দেন শান্ত।

মাহমুদউল্লার শুধু ‘মাইর’

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ। এর প্রস্তুতিতে আগের দিন অনুশীলনে তাওহিদ হৃদয়কে বলছিলেন ‘শুধু মাইর হবে’। হৃদয় না পারলেও বিপিএলে দুর্দান্ত খেলা মাহমুদউল্লাহ ঠিকই চড়াও হয়েছিলেন লঙ্কানদের ওপর।

২৭ বলে ফিফটি করে প্রত্যাবর্তনটা রাঙান তিনি। ফিফটির পথেই মেরেছিলেন ৪ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ২ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৫৪ করে মাহিশ থিকশানার বলে লং অনে ক্যাচ দেন বিনুরাকে। তিনি অবশ্য জীবন পেয়েছিলেন ২৭ রানে।

১১ বলের ওভার

পাথিরানার ওয়াইড দেওয়ার দুর্নাম আছে এমনিতেই। তার ১১তম ওভারটা শেষ হয় ১১ বলে! তাতে ওয়াইড ছিল ৩টি ও নো ২টি। সেই ওভারে বাংলাদেশ পায় ২০ রান। একটি করে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলী। ১১.৪ ওভারে বাংলাদেশ পৌঁছে ১০০ রানে। শেষ ৮ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১০৬ রান।

মাহমুদউল্লাহ-জাকেরের জুটি

দ্রুত ৪ উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলী। দুজনই বিপিএলে ফিনিশিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত। সিলেটে পঞ্চম উইকেটে ছন্দে থাকা সেই দুই ব্যাটার গড়েন ৪৭ রানের জুটি।

২০২২ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে ফিরে ফিফটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ছাবি : সংগৃহীত

১০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৭৮ করেছিল বাংলাদেশ। ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৭৯। দুটি বেশি উইকেট হারানোয় রানতাড়ায় হিসেবি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। তবে নেট রানরেট ১০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিতে গিয়ে আউট হন মাহমুদউল্লাহ।

জাকেরের ৬ ছক্কা

১৬.২ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল  ৩ উইকেটে ১৪৫। সেখানে একই সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৫৬। তাতে অন্যতম অবদান জাকেরের, যিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ‘কালো’ মানিক। নতুন নির্বাচক প্যানেলের প্রথম অন্তর্ভূক্তি এই হার্ডহিটার। সুযোগ পেয়েই ফিফটি করলেন ২৫ বলে। তাতে ছক্কা ছিল ৬টি, যেটি আবার টি-টোয়েন্টির এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ৫টি করে ছক্কা আছে নাজিমউদ্দিন, জিয়াউর রহমান, তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর।

শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ৩৭

শুরুটা খারাপ হলেও জাকেরের ঝড়ে শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩৭ রান। হাতে ৫ উইকেট। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ করে ফেরেন শেখ মেহেদী হাসান। শেষ ২ ওভারে দরকার তখন ২৭।

পাথিরানার করা ১৯তম ওভারে চড়াও হন জাকের। রিশাদ হোসেনকে স্ট্রাইক না দিয়ে দায়িত্ব নেন নিজের কাঁধে। সেই ওভার থেকে আসে ১৫। ৪ ওভারে ৫৬ রানে ১ ‍উইকেট নিয়ে শেষ হয় পাথিরানার বোলিং কোটা।

শেষ ওভারে লাগত ১২

জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ১২ রান। দাসুন শানাকার করা প্রথম বলেই মিডঅফে আসালঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিশাদ। দ্বিতীয় বল ওয়াইড, পরে বলে সিঙ্গেল। স্ট্রাইকে আসেন জাকের।

শ্রীলঙ্কা বোলিংয়ে বেশি সময় নেওয়ায় শাস্তি হিসেবে খেলছিল ৩০ গজে বেশি ফিল্ডার নিয়ে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে জাকের ক্যাচ দেন আসালঙ্কাকে। শেষ হয় ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ৬ ছক্কায় সাজানো তার ৬৮ রানের ইনিংস।

ক্রিজে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি শরিফুল ইসলামের। পরের বলে লেগ বাই থেকে ১ রান। শেষ বলে দরকার ৫ রান। স্ট্রাইকে তাসকিন আহমেদ। কিন্তু একটি রানই আসে সেই বলে। বাংলাদেশ হারে ৩ রানে। ৪৪ রান ও ৩ ক্যাচ নিয়ে ম্যাচসেরা আসালঙ্কা।

৪০৯ রানের ম্যাচ

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মিলে করেছে ৪০৯ রান। বাংলাদেশে হওয়া টি-টোয়েন্টিতে এটাই সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। ২০১৩ সালে আগের রেকর্ডটা ছিল মিরপুরে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ৩৯৩।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত