বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় পিছিয়ে পড়েও লেবাননের বিপক্ষে ফিরে আসার দারুণ গল্প লিখেছিলেন শেখ মোরসালিন। গত নভেম্বরের মতো এবার আর কোনও রূপকথার জন্ম দিতে পারলেন না বাংলাদেশের ফুটবলাররা। মঙ্গলবার রাতে দোহার খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে লেবানন।
আরও স্পষ্ট করে বললে, বাংলাদেশকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন লেবাননের অধিনায়ক হাসান মাতুক। লেবানিজ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব আনসারের ফরোয়ার্ডের গতি আর টেকনিক্যাল স্কিলের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। লেবাননের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এই ম্যাচে করেছেন হ্যাটট্রিক। অন্য গোলটি নাদের মাতারের।
অথচ এই লেবাননের সঙ্গে ঢাকায় চোখে চোখ রেখে কি দারুণ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ! এমনকি গত সপ্তাহে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৬০ ধাপ পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও দারুণ ফুটবল উপহার দেন রাকিব হোসেনরা। সেই আত্মবিশ্বাসকে অক্সিজেন করেই কাতার যাওয়া বাংলাদেশের। সঙ্গে এই ম্যাচে পুরো ৩ পয়েন্ট পাওয়ার আশায় ছিলেন ফুটবলাররা।
কিন্তু কোথায় কি? উল্টো শুরুর ৭ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে রীতিমতো ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। পেনাল্টি থেকে লেবাননের প্রথম গোলটি করেন মাতুক। ওই গোলটি খাওয়ার পর আর ম্যাচে ফেরা হয়নি বাংলাদেশের। এ দিন পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে রইলেন মোরসালিন।
গোলরক্ষক মিতুল মারমা দুর্দান্ত কিছু সেভ না করলে হারের ব্যবধান আরও বেশিই হতে পারতো।
অবশ্য প্রথমার্ধে একটা গোল শোধের ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিবের ক্রসে ঈসা ফয়সাল মাথা ছোঁয়াতে পারেনি।
এরপর বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে নাসার নাসারের ক্রসে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে ২-০ করেন নাদের। অথচ নাদেরের সামনে ছিলেন শাকিল, পেছনে তপু বর্মণ!
বিরতির পর আরও আক্রমণাত্মক খেলেছে লেবানন। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে মাতুক করেন নিজের দ্বিতীয় গোল। এবারও সেই রক্ষণের ভুলে গোল খাওয়া। ফরোয়ার্ড করিম দারউইচ দারুণ গতিতে বক্সে ঢুকে বল বাড়িয়ে দেন মাতুককে। অরক্ষিত মাতুকের আলতো প্লেসিংয়ে হয়েছে ৩-০।
৬০ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মাতুক। মাঝ মাঠ থেকে লং বল পেয়ে এগিয়ে যান করিম দারউইচ। তার বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন মাতুক। এরপর কোনাকুনি শটে করেন হ্যাটট্রিক। যদিও ৬২ মিনিটে লেবাননের কোচ মিয়োদ্রাগ রাদুলোভি তাকে উঠিয়ে নেন। কিন্তু ততক্ষণে সর্বনাশ যা করার করে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ থেকে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এদিন দু’টি পরিবর্তন আনেন। হোম ম্যাচে সবচেয়ে বড় চমক ছিল অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে একাদশের বাইরে রাখা। কিন্তু লেবাননের বিপক্ষে অধিনায়ক জামালকে একাদশে ফেরান কোচ।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে একাদশে খেলা ডিফেন্ডার মেহেদী মিঠু কাতারে যাননি। একাদশে একটি পরিবর্তন অনিবার্যই ছিল। মেহেদী মিঠুর সেই জায়গায় আরেক ডিফেন্ডার শাকিল হোসেনকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শাকিল এই ম্যাচে ডুবিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দুই সোহেল রানা শুরুতেই ছিলেন। এ দিন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সিনিয়র সোহেল রানা থাকলেও ডিফেন্সিভ সোহেল রানা ছিলেন না। তার জায়গায় অধিনায়ক জামালের ওপর আস্থা রাখেন কোচ।
কিন্তু জামাল আস্থার প্রতিদান কতটা দিতে পারলেন, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। ৬৯ মিনিটে জামালকে তুলে শাহরিয়ার ইমনকে নামান কোচ। অবশ্য তিনি নেমেও স্কোরে বদল আনতে পারেননি।
গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচে মাত্র ১ ড্র। ৫টিতেই হার। গ্রুপের তলানিতে থেকেই বিশ্বকাপ বাছাই অভিযান শেষ হলো বাংলাদেশের।
এই ম্যাচটি দেখতে প্রবাসী প্রচুর বাঙালি দর্শক ভীড় করেছিলেন মাঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশা নিয়ে ফিরে গেলেন তারা।