ম্যাচের ফল অনেকটা অনুমিতই ছিল। এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে সিরিয়ার বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবেই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু হারের ব্যবধানটা কত বড় হয় সেটাই ছিল দেখার। ভিয়েতনামে শনিবার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৪-০ গোলের ব্যবধানে।
ঢাকা ছাড়ার আগে কোচ মারুফুল হক এই টুর্নামেন্ট নিয়ে কোনও স্বপ্ন দেখেননি। কোনও আশার কথাও শুনিয়ে যাননি। এমনকি লড়াই করতে হবে দলকে নিয়ে, সেই কথাগুলোও হয়তো ফুটবলারদের মাঝে ছড়িয়ে দেননি।
যে কারণে মাঠের খেলায় সেই ছাপটাই দেখা গেছে বাংলাদেশের। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি শুরু হয়েছে ৪৫ মিনিট দেরিতে। কিন্তু শুরুর ১৩ মিনিটে বাজে দুটি গোল খেয়ে ম্যাচ সেখানেই কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছেন মিরাজুল ইসলাম, আশরাফুল হক আসিফরা।
এই অনূর্ধ্ব-২০ দলটি গত আগস্ট মাসে নেপালে গিয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন দল থেকে চোটের কারণে বাদ পড়েছেন গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ, ফরোয়ার্ড রাব্বি হোসেন রাহুল, মিডফিল্ডার চন্দন রায় ও রুস্তম ইসলাম দুখু মিয়া। এরপর বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গোলরক্ষক আসিফ হোসেন ও মোহাম্মদ মহসিন ক্যাম্পে যোগ দিলেও ফিটনেস নেই বলে তাদের বাদ দিয়েছেন কোচ।
অথচ আসিফ সাফের সেমিফাইনালে চোটগ্রস্ত শ্রাবণের বদলি হিসেবে নেমে টাইব্রেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। সাফের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতেন ফাইনালে দারুণ খেলে। এর বাইরে বসুন্ধরা কিংস থেকে মজিবর রহমান জনি ও রিমন হোসেনকে চেয়েও পাননি কোচ। এরপর প্রায় ১৮ ঘন্টার ভ্রমণক্লান্তি কাটিয়ে মাত্র এক দিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়েই এশিয়ান কাপ বাছাই নিয়ে তাই মোটেও আশাবাদী ছিলেন না উয়েফা প্রো-লাইসেন্সধারী এই কোচ।
কিন্তু আশাবাদী হতে পারেননি বলে ফুটবলাররা কি মাঠে এতটুকু লড়াইও করতে পারবে না? গোল পোস্টে শট নেওয়া দূরে থাক, বক্সের আশপাশেই তো যেতে পারেনি বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা। শুধু ৫০ মিনিটে পিয়াস আহমেদ নোভা ফাঁকতালে একবার বল পেয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। কিন্তু তিনি নিজেও হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না ওই সময়! তাই দারুণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। তড়িঘড়ি করে মারতে গিয়ে বল তুলে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের পায়ে।
পুরো সময় দাপট দেখিয়ে খেলেছে সিরিয়া। ফিটনেস, শারীরিক শক্তি, উচ্চতায় এগিয়ে থাকা সিরিয়ার সামনে এতটুকু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
ম্যাচের ৬ মিনিটে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল খেয়ে বসেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক ইসমাইল মাহিন। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা সিরিয়ার আনাস দাহানের দারুণ একটা ক্রসে কাওয়া ইসা করেছেন প্লেসিংয়ে ১-০। অথচ সেখানে তার পাশেই তিন ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে ওই ফরোয়ার্ডকে জায়গা করে দিলেন গোল দেওয়ার!
১২ মিনিটে সেই একই ভাবে ডান প্রান্ত দিয়ে ক্রস ফেললেন মুহাম্মদ আল মুস্তফা। এবার ইউসা নাজের হেডে বল ঢোকে জালে (২-০)। এবারও দুই ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে ছিলেন তার পাশে। কিন্তু নাজের উচ্চতার কাছে হার মানলের বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক খেলেছে সিরিয়া। তাদের আক্রমণে দিশেহারা তখন বাংলাদেশের রক্ষণ। ৭৩ মিনিটে এমনই এক আক্রমণের ফসল ৩-০। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে আবদুল রহমান আলমিহির জোরালো শট বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহিনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। ফিরতি শটে ওয়েসাম দুখান করেন গোল।
আর পুরো ম্যাচে সবচেয়ে দর্শনীয় গোলটি হয়েছে ম্যাচের ৮০ মিনিটে। বক্সের সামান্য বাইরে সেট পিস থেকে মানব দেওয়াল ভেদ করে যেভাবে জালে জড়িয়েছেন আনাস দাহান, সেটি চোখে লেগে থাকার মতো। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা এমন গোল হয়তো স্বপ্নেই দেখে থাকেন!
গ্রুপে বাংলাদেশর পরের ম্যাচ ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিপক্ষ গুয়াম।