বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশটির সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে কেবল ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
শুক্রবার ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাগুলো বলেন। তিনি জানান, ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেছিলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের সরকারের ওপরেই বর্তায়।”
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনায় শুক্রবার মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও।
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে উগ্রপন্থীদের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়েও মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জয়সওয়াল। তিনি বলেন, “উগ্রপন্থীদের বক্তব্য, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও উসকানির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।”
একের পর এক সংঘটিত এসব ঘটনাকে ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন’ বলে নাকচ করে দেওয়ার অবকাশ নেই বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো অনেক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে, আর সে কথা তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছেনও।
ড. ইউনূসের যুক্তি, বাংলাদেশে হিন্দুরা মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থক এমন একটা ধারণা আছে– আর অভ্যুত্থানের পর যেহেতু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে, তাই হিন্দুদেরও কেউ কেউ এ ধরনের রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়েছেন।
এরপর অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিবিসি হিন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের সরকারের, এটা নিয়ে ভারতের বিচলিত বা উদ্বিগ্ন না হলেও চলবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই দেশের কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভাঙচুর করা হয়।
এর প্রতিবাদে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায় চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিক্ষোভ কর্মসূচি দিলে একপর্যায়ে গত সোমবার গ্রেপ্তার হন তাদের ধর্মীয় নেতা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বাংলাদেশ শাখার সংগঠকও ছিলেন। তবে সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে কয়েক মাস আগে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে ইসকন বাংলাদেশ।
ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তারের ঘটনায় শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ‘নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কী ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।”
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে চিন্ময়কে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদালতের নির্দেশের পর সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হন। এরপর থেকেই ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ওঠে দেশের কয়েকটি মহল থেকে।
এবিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, ইসকন সারা বিশ্বে সমাদৃত একটি সংগঠন, যার সামাজিক সেবার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।