Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

পাকিস্তানের সামনে সতর্ক বাংলাদেশ

অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন সাবিনা খাতুন ও নীলুফার ইয়াসমিন নীলা। নেপালের সেন্ট সেন্ট জাভিয়ের স্কুল মাঠে। ছবি: বাফুফে
অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন সাবিনা খাতুন ও নীলুফার ইয়াসমিন নীলা। নেপালের সেন্ট সেন্ট জাভিয়ের স্কুল মাঠে। ছবি: বাফুফে
[publishpress_authors_box]
কাঠমান্ডু থেকে
কাঠমান্ডু থেকে

নেপালের সরকারি ছুটির দিন শনিবার। সে কারণেই কিনা ললিতপুরের পুলচক রোড ভর দুপুরেও সুনসান মনে হচ্ছিল। এই রোডের হাঁটা দূরত্বে ভেতরের দিকে ঢুকলেই জাওয়ালাখেলে দাঁড়িয়ে সেন্ট জাভিয়ের স্কুল। নেপালের ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্কুলের বিশাল মাঠে সবার আগে ঢুকলেন বাংলাদেশ দলের কোচ পিটার বাটলার। স্কুলের প্রধান গেট দিয়ে মাঠে ঢোকেন এই ব্রিটিশ কোচ।

খানিক পরই স্কুলের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকলো বাংলাদেশ দলের টিম বাস। একে একে বাস থেকে নেমে এলেন সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দা, মাসুরা পারভীনরা।

মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে ১৭ অক্টোবর। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের সাফ অভিযান শুরু হচ্ছে রবিবার। প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫-৪৫ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। 

জিতলেই সেমিফাইনাল, তবু সাবধানি কোচ

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারত ৫-২ গোলে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। রবিবার দ্বিতীয় ম্যাচে তাই পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও মুখ ফুটে এই ম্যাচে জয় পাওয়ার কথা বললেন না বাংলাদেশের কোচ পিটার বাটলার, “আমাদের গ্রুপটা কঠিন হয়েছে এবার। তাই জয়ের কথা সহজে বলতে পারছি না। প্রতিপক্ষকে আমাদের সম্মান করতেই হবে। পাকিস্তান-ভারত ম্যাচটা মাঠে বসে দেখেছি। পাকিস্তানে অনেক মানসম্মত ফুটবলার আছে। (ভারতের বিপক্ষে) ৪-০ থেকে ওরা ৪-২ করেছিল এক সময়। ফিজিক্যালি, সেট পিসে ওরা ভালো। তাই ওদেরকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। তাদেরকে হারাতে সব সময় আমাদের প্ল্যান ‘এ’ ও প্ল্যান ‘বি’ থাকবে।”

কোচ পিটার বাটলার পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনও চাপই অনুভব করছেন না। ছবি: বাফুফে

এবারও জয়ে চোখ বাংলাদেশের

পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে দুবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমবার ২০১০ সালে এসএ গেমসে। সেবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সর্বশেষ ২০২২ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে দশরথ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

অবশ্য ভুটানে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বয়সভিত্তিক সাফে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে উড়িয়ে দেন মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুনেরা। যে দলের অনেকে এবারও আছেন বাংলাদেশ দলে।

চাপহীন কোচ

নারী ফুটবল দল মানেই যেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। কিন্তু নতুন কোচ পিটার বাটলার হাতে পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে। সাফের মতো বড় আসরে কি প্রথম ম্যাচের আগে চাপে আছেন কোচ?

এক সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডে খেলা ৫৮ বছর বয়সী কোচ অবশ্য চাপকে থোড়াই কেয়ার করছেন, “চাপ আবার কি? এটা পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। এই দলে রয়েছে অভিজ্ঞ অনেক মেয়ে যারা তাদের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই দলের মান একেবারে খারাপ না। ট্যাকটিকালি ভালো মেয়েরা, তাদের সব নজরই এই ম্যাচে থাকবে।”

 নেপালে আসার আগে মাত্র দুটি দেশের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু চাইনিজ তাইপে ও ভুটানের বিপক্ষে বেশ লম্বা বিরতি দিয়ে খেলেছেন সাবিনারা। কিন্তু সেই আক্ষেপ নিয়েই মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে।

নতুনদের প্রমাণ করার ম্যাচ

পাকিস্তান যদিও প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছে। শুধু ভালো ফিনিশারের অভাবে ম্যাচটিতে জয় পায়নি তারা। কিন্তু  সুযোগ পেয়ে দুটি গোল করে কায়লা মারি সিদ্দিকী, সুহা হিরানিরা দেখিয়ে দিয়েছিলেন নিজেদের সামর্থ্য। পাকিস্তান অধিনায়ক মারিয়া জামিলা খান বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশের আক্রমণভাগের প্রধান অস্ত্র হতে পারেন ঋতুপর্ণা চাকমা। নেপালে অনুশীলনে। ছবি: বাফুফে

পাকিস্তানে যদি হিরানি, মারি, জামিলারা থাকেন তবে বাংলাদেশে আছেন ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা ও সাবিনা। সর্বশেষ সাফে সাবিনা পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। মনিকা ও ঋতুপর্ণা করেন ১টি গোল। অন্য গোলটি ছিল সিরাত জাহান স্বপ্নার। যদিও স্বপ্না এবার নেই। অবসরে যাওয়া স্বপ্নার অভাব পূরণ করতে পারেন আরেক গতিময় স্ট্রাইকার মোসাম্মৎ সাগরিকা। যিনি ভুটানের বিপক্ষে জাতীয় দলের অভিষেকেই পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিক।

সুযোগ পেলে কি আবারও হ্যাটট্রিকের আনন্দে মেতে উঠতে চান? অনুশীলন শেষে এমন প্রশ্নে সাবিনা হেসে উত্তর দিলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হবে গোল বের করা। যদি সুযোগ পাই সেটা যেন মিস না করি।”

সাবিনা মূলত একটু পেছন থেকে খেলে থাকেন ইদানিং। বল বানিয়ে দেওয়াটাই যার প্রধান লক্ষ্য। যে কারণে সাবিনার কাছে মনে হয়েছে নতুন ফুটবলারদের জন্য এই ম্যাচ হতে পারে নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ, “স্বপ্না ও আঁখির অবদান ছিল অনেক। কিন্তু যেহেতু ওরা নেই। নতুনদের জন্য এটা একটা সুযোগ যে ওই জায়গাটায় নেওয়া। সব কিছু মিলিয়ে তাদের মিস করবো মাঠে। কিন্তু ওদের অভাবটা মাঠে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ

মাঠে গত কয়েক দিনের অনুশীলনে যা মনে হয়েছে তাতে সেরা একাদশে কারা থাকছেন তা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রাখতে চান কোচ। কিন্তু তারপরও সেটপিস, দুই দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে করা অনুশীলনে আলাদা নজর কেড়েছেন ১১ ফুটবলার। এরাই থাকতে পারেন কোচের একাদশে।

এই যেমন গোল পোস্টের নিচে রুপনা চাকমা। রক্ষণে শামসুন্নাহার সিনিয়র, আফঈদা খন্দকার, শিউলি আজিম, কোহাতি কিসকু। মাঝ মাঠে মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী ও সাবিনা খাতুন। আক্রমণভাগে বাটলারের প্রধান অস্ত্র থাকতে পারেন ঋতুপর্ণা চাকমা, জুনিয়র শামসুন্নাহার ও তহুরা খাতুন। দীর্ঘদিন চোটে ভোগা কৃষ্ণা অনুশীলনে পুরো ফিট হলেও বাটলার তাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামাতে পারেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত