দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তরা জিততে যাচ্ছে, কিভাবে! উত্তর খুব সোজা। ম্যাচ হবে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টিতে। এই ভেন্যুর রান কম হয়, বোলাররা কর্তৃত্ব করেন। আর কম রানের, বোলিং ফ্রেন্ডলি কন্ডিশনে কিভাবে খেলতে হয় তা সবচেয়ে ভালো জানা বাংলাদেশের। কারণ এই দল মিরপুরে খেলে অভ্যস্ত।
আসলেই কি তাই! সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তা সত্যি করতে হবে ক্রিকেটারদের।
রবিবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যারা দেখেছেন তাদের এই ব্যাপারে দ্বিমত হওয়ার সুযোগ নেই। মাত্র ১২০ রানের লক্ষ্য দিয়েও ম্যাচ জিতেছে ভারত। তার মানে এই মাঠে ১২০ রানও জয়ের স্কোর। ঠিক যেমন মিরপুরে ১২০-২৫ এও ম্যাচ জয়ের আশা রাখা যায়।
নিউ ইয়র্কে আগের তিন ম্যাচের ফল
নাসাউ কাউন্টিতে আগের তিন ম্যাচে টস জিতে বোলিং নেয় দলগুলো। ম্যাচ শেষে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা। পাকিস্তানও টস জিতেছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়। ম্যাচজুড়ে নাসাউ কাউন্টির পিচ যেমন আচরণ করেছে তাতে বাংলাদেশের ম্যাচে এখন আর “টস জয় তো ম্যাচ জয়” কথাটা বলা যাচ্ছে না। এই ম্যাচ আগের মাঠটির ড্রপ ইন পিচ নিয়ে কাজ করেও এর চরিত্রে পরিবর্তন আনতে পারেননি কিউরেটররা।
দুই দলের শক্তি বোলিং, দুশ্চিন্তা ব্যাটিং
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বোলাররাই জয়ের নায়ক। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বোলারদের দিকেই সব নজর থাকছে। এমন পিচে ব্যাটাররা অসহায়। আজকের দুই প্রতিপক্ষের শক্তিটাও বোলিং। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলিং শক্তিতে ম্যাচ জিতেছে। প্রোটিয়ারা তাদের দুই ম্যাচে বোলারদের সাফল্যে জিতেছে। বোলাররা শ্রীলঙ্কাকে ৭৭ ও নেদারল্যান্ডসকে ১০৩ রানে বেঁধে না রাখতে হার নিশ্চিত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।
বোলিং নিয়ে তাই ভাবনা নেই দুই দলের। বরং আরও শক্তি বাড়ানোর উপায় খোঁজা যায়। দুই দলের মাথা ব্যাথার কারণ ব্যাটিং। তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন প্রোটিয়াদের চেয়ে টি-টোয়েন্টি মেজাজ ও অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে। তবুও এই টুর্নামেন্টে দুই দলের ব্যাটিং লাইনের একই দুরবস্থা।
দুই দলের টপঅর্ডার একেবারে ফ্লপ। কুইন্টন ডি কক, হেনড্রিকস, মারক্রাম, ক্লাসেনরা ব্যাটে ঝড় তুলতে পারছেন না। বাংলাদেশের তানজিম তামিম, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্তরা এই আসরের আগে থেকেই ফ্লপ। আজকের ম্যাচে তাদের জন্য বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। যে টপঅর্ডার রান পাবে ওই দলই জয়ের পথে এগিয়ে থাকবে বলা যায়।
ব্যাটারদের রানে ফেরার আশা
ব্যাটিং সমস্যার কোন সমাধান পচ্ছেন না চন্ডিকা হাথুরসিংহে। বলেছেন ম্যাচে ব্যাটারদের শান্ত থাকতে হবে। এই পরামর্শ টপঅর্ডারদের দিকেই, “আমরা ওদের খেলা নিয়ে কথা বলেছি। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু উইকেটে গিয়ে ওদেরই খেলতে হয়। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেখানে সমস্যা হচ্ছে। ওদের শান্ত থাকতে হবে, শক্তি বুঝে খেলতে হবে। সমস্যা টেকনিকে না, ওরা একই ভাবে আউট হচ্ছে এমন না। সঠিক মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ব্যাটিং সমস্যার পেছনে আরেকটি কারণ আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখছেন কোচ, “কিছু ব্যাটার রান পাচ্ছে না। কিন্তু নেটে তারা ভালো করছে। হতে পারে চাপে থাকার কারণে আত্মবিশ্বাসের অভাব হচ্ছে। ভালো ব্যাপার হল গত ম্যাচে লিটন রানে ফিরেছে। টি-টোয়েন্টি আসলে ব্যাটারদের কঠিন সময় কাটিয়ে ওঠার সময় দেয় না। তবুও ভালো করতে হবে। লিটন যেমন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্রিজে কিছু সময় পেয়েছে। আশাকরি বাকিরাও রানে ফিরবে।”
মোস্তাফিজ-রিশাদই বড় ভরসা
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অবিশ্বাস্য ভালো করেছেন বোলাররা। হাথুরু এই ম্যাচে বোলারদের কাছে একই পারফরম চাইছেন। বিশেষ করে আইপিএল থেকে নিজেকে ফিরে পাওয়া মোস্তাফিজ ও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করা রিশাদ হোসেনকে আরও ধারালো দেখতে চান তিনি।
সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কোচ বলছিলেন, “গত ম্যাচে বোলিং ইউনিট যেভাবে কন্ডিশন বুঝে পরিকল্পনা মতো খেলার দায়িত্বটা নিয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। আমরা কোচরা বাইরে থেকে ওদের ছোট ছোট তথ্য বা পরামর্শ দিতে পারি। কিন্তু মাঠে ওদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই কাজটা শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বোলাররা দারুণ ভাবে করেছে।”
মোস্তাফিজ ও রিশাদের প্রশংসা করে হাথুরু বলেছেন, “মোস্তাফিজ দুর্দান্ত বল করছে। সে তার অ্যাঙ্গেল ও বল ফেলার জায়গাটা বুঝেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও তাকে একই ভাবে দেখতে চাই। রিশাদ, আমরা এখন একজন লেগ স্পিনারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। কয়েকটা বছর ওর ওপর ভরসা রাখার ফল এটা। সে আমাদের আরও ম্যাচ জেতাবে।”
একাদশে পরিবর্তন আসবে?
বোলিং বিভাগ নিয়ে স্বস্তির মাত্রা বাড়িয়েছেন শরিফুল ইসলাম। হাতের ইনজুরি কাটিয়ে রোববার অনুশীলনে ফিরেছেন এই পেসার। বোলিংও করেছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে তার খেলার সম্ভাবনা কম। একমাত্র একটি দিকই একাদশে ফেরাতে পারে শরিফুলকে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ডান হাতি ব্যাটার বেশি। পরিকল্পনায় দুজন বাঁহাতি পেসার রাখতে হলে তানজিম সাকিবের পরিবর্তে খেলতে পারেন শরিফুল। নয়তো জয়ী একাদশে বদল আনার সুযোগ কম।
পরিশেষে
ড্রপ ইন পিচে বরাবরই রান বেশি হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৪ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা নাসাউ কাউন্টির এই পিচ ব্যতিক্রম। টুর্নামেন্টের মাঝখানে পিচ বদল সম্ভব নয়। গত চার ম্যাচে তাকালে নিশ্চিত ভাবেই আরেকটি লো স্কোরিং ম্যাচ দেখতে যাচ্ছে ক্রিকেট। আর লো স্কোরিং ম্যাচে বরাবরই ভালো করে বাংলাদেশ। সেই ভালোটা সোমবার হোক।