দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যে পিচটা ছিল ব্যাটিং উদ্যান, সেই একই পিচ বাংলাদেশের জন্য হয়ে গেল মাইন ফিল্ড। উইকেট পড়েছে মুড়ি-মুড়কির মতো। তাতে তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ।
ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অলআউট ১৪৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ইনিংস ও ২৭৩ রানে। কেশব মহারাজ নিয়েছেন ৫ উইকেট। আরেক স্পিনার সেনরুয়ান মুথুসামির শিকার ৪ উইকেট। হাসান মাহমুদ ৪ ছক্কায় ৩৮*, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৬ ও অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম করেন ২৯ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ৩৮ রানে। আজ (বৃহস্পতিবার) শুরুটা হয়েছিল যাচ্ছেতাই। ৪৮ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয়েছিল ধুঁকতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলামের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের পর অলআউট ১৫৯ রানে। ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমেও বদলায়নি ছবিটা। পার্থক্য বলতে প্রথম ইনিংসে ভুগিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা আর দ্বিতীয় ইনিংসে দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও সেনরুয়ান মুথুসামি।
মুথুসামির স্পিন বিষে ৭৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। মুথুসামি নিয়েছেন ৪ উইকেট। অথচ এর আগে ৩ টেস্ট খেলে মাত্র ২ উইকেটই পেয়েছিলেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে নবম উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়েছিলেন মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও বড় রানের জুটি হয়নি কোনো। সাদমান ইসলাম ৬, মেহেদী হাসান জয় ১১, জাকির হাসান ৭, মুমিনুল হক ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৬, মুশফিকুর রহিম ২, মেহেদী হাসান মিরাজ ৬, তাইজুল ইসলাম ১ ও মাহিদুল ইসলাম আউট হয়েছেন ২৯ রানে।
সুইপ আর রিভার্স সুইপকে অস্ত্র বানিয়ে রানের পাহাড় গড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে বাংলাদেশের কেউ সুইপ করতে গেলেই সুযোগ তৈরি হচ্ছিল প্রোটিয়াদের জন্য।
কেশব মহারাজের বলে সুইপ করতে গিয়ে ট্রিস্টান স্টাবসকে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মুথুসামির বল ডিফেন্ড করতে গিয়েও লেগ গালিতে টনি ডি জর্জিকে ক্যাচ দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নেই
উইকেট যতোই সহজ হোক বাংলাদেশ ব্যাটারদের জন্য তা কঠিন-ই থেকে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে যে ব্যাটিং হতাশা উপহার দিয়েছেন ব্যাটাররা, দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅন করতে নেমেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
টেস্টের তৃতীয় দিন শুরুতে মাত্র ৩ ওভারে ৪ উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশকে। এরপর মুমিনুল ও তাইজুল ইসলাম ১০৩ রানের জুটি গড়ে দেখিয়েছেন উইকেট খুব একটা কঠিন নয়। টপঅর্ডারদের ব্যর্থতায় তাদের দুজনের লড়াই বড় কিছু এনে দিতে পারেনি দলকে।
তবে মুমিনুল ও তাইজুলের দেখানো পথে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে হাঁটতে পারেনি। উইকেট কঠিন হয়ে উঠেছে এমন নয়, বাংলাদেশ ব্যাটারদের ভুল কমেনি! দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দ্রুত বিদায় নিয়েছেন টপঅর্ডাররা।
১৫৯ রানে অলআউট হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ফলোঅন করছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৬৭ রান। দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ১১ ও সাদমান ইসলাম ৬ রানে ফিরেছেন। প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা মুমিনুল ক্রিজে গিয়ে কেশব মহারাজের দ্বিতীয় বলেই তুলে মারতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন ০ রানে।
জাকির হাসান ও মুশফিকুর রহিমকে ফেরান মুথুসামি। ৭ রানে জাকির হন স্টাম্পড আর ২ রান করা মুশফিকুর রহিম ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। চা বিরতির আগে শেষ বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিফেন্ড করতে গিয়ে স্টাম্পড হন জাকির।
নাজমুল হোসেন শান্ত ২৯ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন ৬ রানে। চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস হার এড়াতে এখনও চাই ৩৪৯ রান।
মুমিনুলের বিদায়ে থামল বাংলাদেশের লড়াই
দারুণ এগোচ্ছিলেন মুমিনুল হক। পুরো ইনিংসে কোন ভুল করেননি। একবার রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলেছেন। আরেকবার তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার রিভিউ ভেস্তে গেছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে আরও একটি সেঞ্চুরির খুব কাছে ছিলেন এই ব্যাটার।
অথচ দুর্ভাগ্য তার। টেস্টের তৃতীয় দিন লাঞ্চের পর বোলিং পরিবর্তন কাজে দিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। আক্রমণে থাকা কেশব মহারাজ ও রাবাদারা মুমিনুলের মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেননি। তবে সেনুরন মুতুসোয়ামি তার দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আটকে দিলেন এই ব্যাটারকে।
দলের চরম দুরবস্থায় দুর্দান্ত লড়াকু ইনিংস খেলে ১১২ বলে ৮২ রানে ফিরলেন মুমিনুল। দলের রান দেড়শ পার হতে তার বিদায়ে বাংলাদেশের ফলোঅনে পড়াও নিশ্চিত হলো।
তাইজুলকে নিয়ে ১৭২ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়েছিলেন মুমিনুল। ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে পার করান দেড়শ রানের কোটা। মুমিনুলের বিদায়ে বাংলাদেশের রানও এগোয়নি। ১৫৯ রানে শেষ হয় ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅনে নামবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।
মুমিনুল-তাইজুলের লড়াইয়ে প্রথম সেশন পার হলো
তাইজুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যাটিং দীক্ষা নিতে পারেন বাংলাদেশ দলের টপঅর্ডাররা। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শুরুতেই চার উইকেট হারানোর ধাক্কা এই বোলার যেভাবে সামাল দিলেন তা এই সময়ে বাংলাদেশ টপঅর্ডারদের জন্য শিক্ষনীয়।
তাইজুলের হার খাটুনি লড়াইয়ে নিজের কাজটা স্বচ্ছন্দে করতে পেরেছেন মুমিনুল হক। প্রিয় মাঠ চট্টগ্রামে মনের মতো ব্যাট করতে পেরেছেন। যেভাবে ইচ্ছা, যেই শট ইচ্ছা নিতে পেরেছেন নির্ভার হয়ে। সঙ্গীর ওপর আস্থা ও দৃপ্ত লড়াইয়ে অপরপ্রান্তে নির্ভার থাকা যায় তা আবারও দেখালেন মুমিনুল।
তাইজুল ও মুমিনুলের লড়াইয়ে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশন পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানো অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮ উইকেটেই ১৩৭ রান তুলেছে বোর্ডে। অবশ্য ফলোঅন এড়ানো থেকে এখনও অনেক দূরে বাংলাদেশ। চাই আরও ২৩৯ রান। এমনিতে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের চেয়ে ৪৩৮ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা।
৮৯ রানের জুটি গড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুমিনুল-তাইজুল। মুনিনুল তার প্রিয় মাঠে আরেকবার চওড়া ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েগেছেন। ২০তম ফিফটি গড়ে এগিয়ে চলেছেন ১৪তম সেঞ্চুরির দিকে। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৯৭ বলে ৭৪ রানের ইনিংস তার।
ওদিকে তাইজুলকে আলাদা প্রশংসা দিতেই হয়। ৮৯ রানের জুটিতে ৬৭ বলে ১৮ রান করেছেন। পুরো ইনিংসে একবারের জন্যও বড় শট খেলার লোভ করেননি। তাই কোন চার নেই এই বোলারের ইনিংসে।
১০০ ছাড়ালো বাংলাদেশ
দিনের শুরুতে মাত্র ৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৮ রান করে থামে। তৃতীয় দিন মাত্র ১০ রানে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।
সেই সঙ্গে ফলোঅনের ভয় বেশ ভালো ভাবেই উঁকি দেয়। সেই সঙ্গে টেস্টে আরও একবার একশর নিচে আউট হওয়ার শঙ্কা। সেই শঙ্কা কাটিয়ে একশ পার হয়েছে বাংলাদেশের রান। ৩০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১০২।
বাংলাদেশকে দিনের শুরুর বিপদ থেকে এ যাত্রা বাঁচিয়েছেন চট্টগ্রামের নায়ক মুমিনুল হক। এই মাঠেই নিজের ১৩ সেঞ্চুরির ৭টি আছে মুমিনুলের। তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে করে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে দলকে একশর নিচে অলআউট হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন এ ব্যাটার।
দুজনে ৫২ রানের জুটি করে এগোচ্ছেন। মুমিনুল ব্যাট করছেন ৪৩ রানে আর তাইজুল ১৭ রানে। একশ পার করলেও ফলোঅন ভয় কাটেনি। এখনও ২৭৪ রান করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয়বার ব্যাট করাতে হলে।
ফলোঅনের সামনে বাংলাদেশ
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে মাত্র ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়ার শঙ্কা সেখানেই তৈরি হয়। তৃতীয় দিন সকালে টানা তিন ওভারে চার উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা।
প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষনা করেছে। বিপক্ষের রানের চেয়ে এখনও ৫২৮ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতে হলে ৩৭০ এর বেশি রান করতে হতো বাংলাদেশকে। যা এই মুহূর্তে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
তৃতীয় দিন প্রথম ফিরেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কাঁধে বিশাল দায়িত্ব নিয়ে নামলেও শান্ত হতাশ করলেন আবারও। মাত্র ৯ রানে রাবাদার একটি আউট সুইংগারে ব্যাটের খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
পরের ওভারে ড্যান পিটারসনকে উইকেট দিলেন মুশফিকুর রহিম। উইকেটে এসে মাত্র ২ বল খেলা মুশফিক পিটারসনের লেগ স্ট্যাম্পের ডিলেভারি খেলতে গিয়ে ব্যালেন্স হারান। ঠিকঠাক ব্যাটে-বলে না হওয়ায় সহজ ক্যাচ উঠে যায় শর্ট মিডউইকেটে। পরের ওভারে মিরাজও রাবাদার বলে শান্তর মতো উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১ রান করে।