বিকেল চারটার পর থেকে জ্বলতে থাকে একে একে ফ্লাডলাইটের বাতিগুলো। ধীরে ধীরে জ্বলে উঠে সবগুলো বাতি। শীতের আগমনী সন্ধ্যায় দ্রুতই মিলিয়ে যায় দিনের আলো। তবে বাংলাদেশের বোলিংয়ে আলো ছিল না শুরু থেকে। হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজরা একেবারেই সাদামাটা।
এমন নির্বিষ বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্য প্রোটিয়ারা নিজেদের করে নিয়েছে প্রথম দিনটা। ২ উইকেট হারিয়ে তারা দিন শেষ করেছে ৩০৭ রানে। দুটি উইকেটই তাইজুল ইসলামের।
টনি ডি জর্জি ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে অপরাজিত আছেন ১৪১ রানে। ২১১ বলে ১০ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা খেলেছেন এই ওপেনার। তার সাথে বুধবার ব্যাট করতে আসবেন ১৮ রানে অপরাজিত থাকা ডেভিড বেডিংহাম।
এইডেন মারক্রাম ৩৩ করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ২০১ রানের জুটি গড়েন টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবস। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করা স্টাবস ৬ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ১০৬ করে বোল্ড হন তাইজুলের নিচু হয়ে যাওয়া বলে। চট্টগ্রামে যেভাবে বল নিচু হচ্ছে তাতে ব্যাট করাটা মোটেও সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য।
সেঞ্চুরিয়ান স্টাবসকে ফেরালেন তাইজুল
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা বাংলাদেশে পেয়েছেন টনি ডি জর্জি। ট্রিস্টান স্টাবসও নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেন বাংলাদেশে। দুই তরুণের সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে চালকের আসনে দ.আফ্রিকা। তবে শেষ বেলায় সেঞ্চুরিয়ান স্টাবসকে বোল্ড করে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
ডি জর্জির মতো প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে স্টাবসেরও। তবে টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন পঞ্চম ম্যাচে। তার আগের সেরা স্কোর ৬৮। ৯৯ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের টানা পাঁচ বলে রান নেননি স্টাবস। সতর্ক ছিলেন ‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’ আউট না হতে। পরের ওভারে মুমিনুল হকের বলে সিঙ্গেল নিয়ে পান প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ।
সেঞ্চুরির পরপরই ১০৬ রানে থাকা স্টাবসকে বোল্ড করেন তাইজুল। তার নীচু হয়ে যাওয়া বলটা সামলাতে পারেননি তিনি। তাতে ভাঙে টনি ডি জর্জির সঙ্গে ২ৈ০১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিটা।
৬ রানে জীবন পাওয়া ডি জর্জি আরও একবার বেঁচে যান ১০৭ রানে। হাসান মাহমুদের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেখানে থাকা ফিল্ডার সরাসরি স্টাম্প ভাঙতে পারলে ড্রেসিংরুমে ফিরতেন এই ওপেনার। তিনি ব্যাট করছেন ১২১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৭৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৭০।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা বাংলাদেশে পেলেন ডি জর্জি
মেহেদী হাসানকে সুইপ করে বল পাঠালেন বাউন্ডারিতে। ৯৬ থেকে টনি ডি জর্জি পৌঁছলেন তিন অঙ্কে। সেঞ্চুরির পর উদযাপনটাও ছিল উচ্ছ্বাসে ভরা। টেস্টে যে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি লম্বা চুলের ২৭ বছর বয়সী এই ওপেনারের। তাকে অভিবাদন জানালেন গ্যালারিতে আসা দর্শকরাও।
ডি জর্জির সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় সেশনটাও নিজেদের করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চা বিরতির সময় তাদের স্কোর ১ উইকেটে ২০৫ রান। ডি জর্জি ১০১ আর ট্রিস্টান স্টাবস ব্যাট করছেন ৬৫ রানে।
জীবন পেয়েছিলেন দুজনই। ৬ রানে ডি জর্জির ক্যাচ ছাড়েন অভিষিক্ত উইকেটকিপার মাহিদুল ইসলাম। এরপর ২৫ রানে থাকা স্টাবসের স্টাম্পিং মিস করেন তিনি। দ্বিতীয় সেশনে উইকেট পায়নি বাংলাদেশ। প্রোটিয়ারা ২৮ ওভারে করে ৯৬ রান।
হতাশার সেশনে বাংলাদেশ রিভিউ নষ্ট করেছে দুটি। প্রথমটা লাঞ্চের পর নাহিদ রানার বল ডি জর্জির প্যাডে লাগলে। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বলটা পিচ পড়েছিল আউট সাইড লেগে।
আরেকটা রিভিউ নষ্ট হয় তাইজুলের বলে। বলটা স্টাবসের ব্যাটের বেশ বাইরে দিয়ে গেলেও কি বুঝে বাংলাদেশ রিভিউ নিয়েছিল, এটাই বিস্ময়ের। টিভি রিপ্লে দেখার পর এ নিয়ে বিরক্তি দেখিয়েছেন তাইজুলও।
ডি জর্জি সেঞ্চুরি করেন চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে । অষ্টম টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। তার আগের সেরা স্কোর ছিল ৮৫। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অবশ্য ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে এই তরুণের।
মুমিনুলের ক্যাচের রেকর্ড
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ঘণ্টাটা ছিল হতাশার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা রান তুলছিল ওভার প্রতি ৪-এর বেশি করে। এইডেন মারক্রামকে ফিরিয়ে গতিটা কমান তাইজুল ইসলাম।
তাইজুলের হাওয়ায় ভাসানো বল ডাউন দ্য ট্র্যাকে খেলতে এসে মিড-অনে মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মারক্রাম। শেষ হয় ২ বাউন্ডারিতে তার ৩৩ রানের ইনিংসটি। ক্যাচটি নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল।
বাংলাদেশিদের মধ্যে উইকেটকিপার ছাড়া এতদিন টেস্টে যৌথ সর্বোচ্চ ৩৯টি করে ক্যাচ ছিল মাহমুদউল্লাহ ও মুমিনুল হকের। মুমিনুলের ক্যাচ এখন ৪০টি।
সবচেয়ে বেশি টেস্ট ক্যাচ নেওয়া বাংলাদেশি
(উইকেটকিপার ছাড়া)
মুমিনুল হক : ৪০
মাহমুদউল্লাহ : ৩৯
মেহেদী হাসান মিরাজ : ৩৮
ইমরুল কায়েস : ৩৫
সাকিব আল হাসান : ২৫
১ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানে লাঞ্চে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের হয়ে টনি ডি জর্জি ৪৯ ও ট্রিস্টান স্টাবস অপরাজিত রয়েছেন ২৩ রানে। একমাত্র উইকেটটি তাইজুলের। প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে রান উঠেছে ৩.৮৯ রেটে ।
প্রথম ঘণ্টায় উইকেট পেল না বাংলাদেশ
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ঘণ্টাটা হতাশায় কাটল বাংলাদেশের। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নির্বিষ বোলিংই করেছেন হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, তাইজুল ইসলামরা।
১১তম ওভারেই দলীয় ফিফটি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের দ্রুততম পেসার নাহিদ রানা ঘণ্টায় ১৪8 কিলোমিটার গতিতে বল করলেও কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি প্রোটিয়াদের।
বাংলাদেশের সেরা সুযোগ এসেছিল সপ্তম ওভারের প্রথম বলে। হাসান মাহমুদের করা বলটা ওপেনার টনি ডি জর্জির ব্যাটের কাণায় লেগে যায় উইকেটের পেছনে।
ডাইভ দিয়ে বাম হাতে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করলেও বলটা গ্লাভসে জমিয়ে রাখতে পারেননি অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক মাহিদুল ইসলাম।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে করেছে ৬০ রান। অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম ৩০ ও টনি ডি জর্জি ব্যাট করছেন ২৬ রানে।
চট্টগ্রাম টেস্টে নেই লিটন, মাহিদুলের অভিষেক
‘কনকাশনের’ কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন জাকের আলী। চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন লিঠন দাসও। সোমবার রাতে প্রচন্ড জ্বর এসেছিল তার। এই দুজনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম টেস্টে নেই ‘লোকাল বয়’ নাঈম হাসানও।
এই তিন জনের জায়গায় নেওয়া হয়েছে জাকির হাসান, নাহিদ রানা ও মাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া অঙ্কনকে। ২৫ বছর বয়সী মাহিদুল ইসলামের অভিষেক হলো চট্টগ্রামে।
এই তিনজনকে ছাড়া খেলতে নামা বাংলাদেশ টস হেরে বোলিং করবে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় টেস্টে। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন দ.আফ্রিকান অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম।
৪৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ৮ ফিফটিসহ ১৯৩৪ রান করেছেন মাহিদুল। ৮৩টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরিসহ ৪২.৫৫ গড়ে করেছেন ২৮৫১ রান। সবশেষ খেলা জাতীয় লীগের ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন ঢাকার হয়ে।
মিরপুরে না খেলা জাকির হাসানকে পাঠানো হয়েছিল জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে। সিলেটের হয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ১৩ ও ৩৬ রান করেছিলেন তিনি। লিটনের জ্বরের জন্য সিলেট থেকে উড়িয়ে আনা হয় তাকে।
দুটি পরিবর্তন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশেও। ম্যাথু ব্রিটজকে ও ডেন পিটের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন মুথুসামি ও পেটারসন।
দুই দলের একাদশ
বাংলাদেশ : সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, জাকির হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাহিদুল ইসলাম, নাহিদ রানা, তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা : এইডেন মারক্রাম (অধিনায়ক) টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড বেডিংহাম, রায়ান রিকেলটন, , কাইল ভেরেইনা, উইয়ান মুল্ডার, কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা, সেনরুয়ান মুথুসামি ও ডেন পেটারসন।