Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

তাইজুলের সাফল্যে আড়ালে ব্যাটিং ব্যর্থতা

টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাইজুল। ছবি : ক্রিকইনফো
টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাইজুল। ছবি : ক্রিকইনফো
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে একদম পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। নিজেরা প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হলেও ১৪০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেট তুলে নিয়েছে। ৩৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও ম্যাচে লড়াইয়ে আছে বাংলাদেশ।

দিনের শুরুতে মাত্র ৪০ ওভারেই গুটিয়ে যাওয়ায় ব্যর্থতা অনেকটা আড়াল হয়েছে তাইজুল ইসলামের কীর্তিতে। ইনিংসে ১৩ বারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া এই বোলারের জন্যই কিছুটা স্বস্তি বাংলাদেশ শিবিরে।

টেস্টের একদিনে মিরপুরের উইকেটে ১৬ উইকেট পড়ল। যা এ মাঠের উইকেটের চেনা রূপ। তবে দিনের শুরুতে ব্যাটিং নিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে না পারার দায় বাংলাদেশ ব্যাটারদের। সাদমান ইসলাম থেকে শুরু করে দলের সেরা ব্যাটাররা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন অভ্যাস মতো। উইকেটে সেট হয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের মতো ছোট ইনিংসও করতে পারেননি বেশি শট খেলার ভুলে।

সেই ভুলে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রান এসেছে বাংলাদেশের। অল্পের জন্য দেশের মাটিতে সর্বনিম্ন ৮৭ রানের লজ্জায় পড়তে হয়নি। অথচ প্রথম ইনিংসে শান্ত-মুমিনুল-মুশফিকরা ছোট ছোট ইনিংসে দুইশো রানের মতো করলেও টেস্টের প্রথম দিন শেষে অনেকটা এগিয়ে থাকতো বাংলাদেশ।

প্রত্যাশা মতো দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং খুব শক্ত কিছু দেখাতে পারেনি। মারক্রাম আউট হওয়ার পর দলটির ইনিংসে বড় জুটি হতে দেননি তাইজুল ইসলাম। তার মাইলফলক ছোঁয়া বোলিংয়ে ব্যাটারদের ব্যর্থতা আড়াল হয়েছে কিছুটা। তবে এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে প্রথম ইনিংসের জন্যই হার হজম করতে হবে বাংলাদেশকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : (১ম দিন শেষে)

বাংলাদেশ : ১০৬/১০ (জয় ৩০, তাইজুল ১৬, মিরাজ ১৩, মুশফিক ১১; রাবাদা ৩/২৬, মুলডার ৩/২২, মহারাজ ৩/৩৪)। দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৪০/৬ (জর্জি ৩০, স্টাবস ২৩, রিকেলটন ২৭, ভেরেইনা ১৮*, মুলডার ১৭*; তাইজুল ৫/৪৯, হাসান ১/৩১)। ম্যাচ : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪ রানে এগিয়ে।

সাকিবের পর তাইজুলের ২০০

টেস্ট ক্রিকেটে দুইশো উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এ কীর্তি বাঁহাতি স্পিনারের। মিরপুর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ম্যাথু ব্রিটজকে-কে বোল্ড করে এ সাফল্য অর্জন করেন তাইজুল।

বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ২৪৬ উইকেট সাকিবের। তাইজুলের ২০০ পূর্ণ হলো। ১৮৩ উইকেট নিয়ে তৃতীয় মেহেদি হাসান মিরাজ। আর ১০০ উইকেট মোহাম্মদ রফিকের।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন একমাত্র তাইজুল-ই। মারক্রামকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম শিকার এনে দেন হাসান মাহমুদ। এরপর প্রোটিয়াদের চার উইকেটের সবকটি এই বাঁহাতি স্পিনারের দখলে।

স্ট্রিস্টিয়ান স্টাবস, বেডিংহাম ও টনি জি জর্জিকে টার্নে পরাস্ত করেছেন। আর শেষ উইকেটে ব্রিটজকে-কে বোল্ড করেছেন আর্ম ডিলেভারিতে। তাইজুলের কল্যাণে বড় জুটি গড়তে পারেনি প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশের ১০৬ রানের জবাবে শেষ সেশনের পানি পানের বিরতি পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১০৬ সংগ্রহ তাদের। উইকেটে অপরাজিত ২৬ রান করা রায়ান রিকেলটন ও ২ রান করা কাইল ভেরেইনা।

কোনো রকমে একশ পার বাংলাদেশের

ব্যাটিং ব্যর্থতার চূড়ান্ত উদাহরণ দিয়ে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হলো বাংলাদেশ। দলের ইনিংস টিকল মাত্র ৪০.১ ওভার। একদিনে ৯০ ওভারের অর্ধেকও খেলতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটাররা।

চেন্নাই ও কানপুরে ভারতের বিপক্ষে এতটা খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। অথচ ঘরের মাঠে ফিরে এর চেয়েও বাজে ব্যাটিং করলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ।

বাকি ব্যাটাররা ফিরতে সময় নিলেন আর ১৪ ওভারের মতো। ৪৬ রান যোগ করে শেষের ব্যাটাররা ফিরলেন। অথচ এই টেস্টে একাদশে আট ব্যাটার নিয়ে নেমেছিল স্বাগতিকরা। আট ব্যাটারের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ রান করেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একজন বোলারের।

তাইজুল শেষদিকে ৩১ বলে ১৬ রানের ইনিংস না খেললে ঘরের মাঠে সর্বনিন্ম রানের লজ্জায় পড়তে হতো বাংলাদেশকে। ২০০২ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৮৭ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা আছে। এছাড়া তিন বছর আগে মিরপুরের সর্বনিন্ম দলীয় সংগ্রহও ওই ৮৭।

৭৬ রানে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা জাকের আলি মাত্র ২ রানে ফেরার পর নাঈমকে নিয়ে ২২ রানের জুটি গড়েন তাইজুল। তাতে একশ পার করার মুখরক্ষা হয় বাংলাদেশের। অবশ্য এমন লজ্জার ব্যাটিংয়ের পর এই মুখরক্ষা হওয়া ১০০’ও বাড়তি বেদনা দিচ্ছে।

লাঞ্চের আগেই ৬ উইকেট নেই

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এগিয়ে থেকে মাঠে নামার তৃপ্তি টেস্টের প্রথম দিন প্রথম সেশনেই হারিয়ে গেল। কাগজে-কলমে এগিয়ে থাকার সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটের কোন মিল নেই। তাই এই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই মিরপুর টেস্টের প্রথম সেশনে ৬০ রান করতেই ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের।

লাঞ্চের আগে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে কেশভ মহারাজের বলে এলবিডব্লিউ হলে ফিরলেন মিরাজ। ২৪ বলে ৩ চারে ১৩ রান করা মিরাজই একটু স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন। আগের ব্যাটাররা সবাই রাবাদা-মুলডার-মহারাজদের সামলাতে মাথার ঘাম ঝড়ান।

একপ্রান্তে টানা উইকেট পড়া অপরপ্রান্ত দেখে দেখছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। ৮৬ বল খেলে ১ চারে ১৬ রান তার। মিরপুরের উইকেট টেস্টের প্রথম দিনেই কঠিন হয়ে উঠেছে তা বলা যাবে না। ৬ ব্যাটারের চারজনই আউট হয়েছেন ভুল শটে।

ব্যাটার এই ভুল শটের ভুল বারবার হচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই ও কানপুরের পর ঘরের মাঠেও ব্যাটারদের কোন পরিবর্তন আসেনি। টেস্টের ধৈর্য্য দেখাতে ব্যর্থ তারা।

রাবাদার তিনশো মুশফিক-লিটন পরাস্ত

টেস্ট ক্রিকেটে তিনশো উইকেট নেওয়া পেসারদের তালিকায় নাম লেখালেন কেগিসো রাবাদা। দক্ষিণ আফ্রিকান এই পেসার মিরপুর টেস্টে মুশফিকুর রহিমের উইকেট নিয়ে এ কীর্তি গড়েন।

দুর্দান্ত এক ইনসুইংগারে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটারকে পরাস্ত করেন রাবাদা। গুডলেন্থ থেকে ভেতরে ঢোকা বলে রক্ষণাত্মক খেলতে পারেননি মুশফিক। অথচ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং অনুশীলন করেন তিনি। অথচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১ রানে থামলেন মুশফিক।

তার উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের ষষ্ঠ পেসার হিসেবে তিনশোর ঘরে পা রাখলেন রাবাদা। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট ডেল স্টেইনের ৪৩৯। ৪২১ নিয়ে দ্বিতীয় শন পোলক। মাখায়া এনটিনি, অ্যালান ডোনাল্ড, মরনে মরকেলরা তিনশোর ঘরে।

মুশফিককে ফেরানোর পর রাবাদার বলে পরাস্ত হন লিটন দাস। এর পেসারের গুডলেন্থ থেকে এক্সট্রা বাউন্স হয়ে ওঠা বলে রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন। ১৩ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন এই ব্যাটার। তখন ৪৫ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের।

প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের তিন উইকেট নেন মুলডার

প্রথম ঘণ্টায় ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন উইকেট বিলিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। ব্যাটারদের ভুলে প্রথম ঘণ্টায় হারাতে হয়েছে তিন উইকেট। ১৩ ওভার শেষে স্বাগতিকরা ৩৫ রানে হারিয়েছে ৩ উইকেট। উইকেটে অপরাজিত ১২ রান করা মাহমুদুল হাসান জয় ও ৭ রান করা মুশফিকুর রহিম।

নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন যে করেই হোক ক্রিকেটে মনোযোগ রাখবেন। ম্যাচে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। শান্ত নিজে এবং সাদমান হোসেন টেস্টের প্রথম সকালে যেভাবে আউট হলেন তা উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার পুরোনো উদাহরণ।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শূন্য রানে উইকেট বিলিয়ে আসেন সাদমান ইসলাম। পাকিস্তান সিরিজ ও ভারতে একটি টেস্টে ভালো করা এই ব্যাটার এদিন টেস্টের শুরুর সকালে দেখে খেলার ব্যাকরণ ভুলে যান।

পেসার উইয়ান মুলডারের বলে এক ওভার পর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল হক। মুলযারের ডিলেভারিটি অতটা কঠিন ছিল না। কিন্তু সামনের পায়ে না পেছনের পায়ে খেলবেন সেই দ্বিধায় ঠিকঠাক ব্যাট চালানো হয়নি মুমিনুলের। ফলাফল ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে কিপারের হাতে ক্যাচ। মাত্র ৪ রান করেন মুমিনুল।

নাজমুল হোসেন শান্তর আউট সাদমানের আত্মহুতির চেয়েও বাজে ছিল। সোজা ব্যাটে না খেলে মধ্য স্ট্যাম্পের বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন শান্ত। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বলে চলে যায় মিডঅফে দাঁড়ানো কেশভ মহারাজের হাতে। এমন ভুল শট শুধু মনসংযোগের অভাবেই হয়ে থাকে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ জাকেরের অভিষেক

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এই টেস্ট দিয়ে সাদা পোষাকে অভিষেক হচ্ছে উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলির।

সিরিজের প্রথম টেস্টে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে নামছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান না থাকায় স্বাভাবিক ভাবে একটি বদল হতোই।

সে জায়গায় খেলছেন জাকের। এছাড়া পেসার খালেদ আহমেদের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন নাঈম হাসান। আর ওপেনিংয়ে জাকির হাসানের জাযগায় খেলছেন মাহমুদুল হাসান জয়।

জাকের আলির টেস্ট অভিষেক একেবারে বিস্ময়ের কিছু নয়। ভারত সিরিজের দলে ডাক পেলেও খেলার সুযোগ হয়নি তার। এবার দলে একজন ব্যাটার কম থাকায় তাকে নেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গত আগস্টেই পাকিস্তানে “এ” দলের হয়ে ১৭২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জাকের।

সিরিজের প্রথম টেস্টের আগেরদিন রোববার মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে হওয়া বিশৃঙ্খলার জন্য এদিন কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছে স্টেডিয়ামের সামনে। মাঠের সামনের রাস্তা পুরো এদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। খেলা দেখার টিকিট ধারী ছাড়া কাউকেও এ রাস্তায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ : সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, জাকের আলি, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ।

দক্ষিণ আফ্রিকা : এইডেন মারক্রাম (অধিনায়ক) টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড বেডিংহাম, রায়ান রিকেলটন, ম্যাথু ব্রিটজকে, কাইল ভেরেইনা, উইয়ান মুল্ডার, কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা ও ডেন পিট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত