শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে ‘বেবি মালিঙ্গা’ দুজন। একজন মাথিশা পাথিরানা, অপরজন নুয়ান তুশারা। পাথিরানা ইনজুরিতে না পড়লে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলাই হত না তুশারার। সুযোগটা পেয়ে স্লিগিং অ্যাকশনের এই পেসার প্রথম ওভারেই করলেন হ্যাটট্রিক। সুইং আর গতির মিশেলে নিলেন ২০ রানে ৫ উইকেট।
তাতেই দিশেহারা বাংলাদেশ সিরিজ নির্ধারণী ‘ফাইনাল’ ম্যাচটা হারল ২৮ রানে। শ্রীলঙ্কার ১৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ ২ বল বাকি থাকতে অলআউট ১৪৬ রানে । রিশাদ হোসেনের বিস্ফোরক ৫৩ রানে হারের ব্যবধানটাই কমেছে শুধু।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এর আগে কোনও দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেনি বাংলাদেশ। সেই অপেক্ষাটা বাড়ল আরও। শ্রীলঙ্কা সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এই হারে চুপসে যায় ভরা গ্যালারি। তবে রিশাদের ইনিংসের সময় জেগে উঠে আবারও। এই বিনোদনটুকুই যা প্রাপ্তি দর্শকদের।
যেভাবে হ্যাটট্রিক
তুশারার হ্যাটট্রিকের শুরুটা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে নামজুল হোসেন শান্তকে বোল্ড করে। ব্যাট আর প্যাডের মাঝে অনেক ফাঁক ছিল নাজমুলের। একটু নিচু হয়ে ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা ঠেকাতে ব্যাটটা নামাতে পারেননি শান্ত। হয়ে যান বোল্ড।
ঠিক পরের বলে বোল্ড তাওহিদ হৃদয়। মিডল-অফে পড়া বলের জাদুকরী সুইংয়ে বিভ্রান্ত হন হৃদয়। তিনি প্যাভিলিয়নে যাওয়ার পথে তৈরি হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি। শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়দের সঙ্গে করেন তর্ক। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ শান্ত করেন পরিস্থিতি।
এরপর লেংথ থেকে নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউ মাহমুদউল্লাহ। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। মেডেন হ্যাটট্রিক নেন তুশারা।
ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করলেন তুশারা। শুরুটা ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লির, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই প্রথম হ্যাটট্রিক। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা, দীপক চাহার, নাথান এলিস ও করিম জানাত।
কে এই তুশারা
তার পুরো নাম ইয়ানদারি দেওয়াগে নুয়ান তুশারা। বয়স ২৯ বছর। প্রতিভা থাকলেও পরিস্ফুটন অনেক পড়ে। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন ২৭ বছর বয়সে, ২০২২ সালে। এতদিন ৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে উইকেট ছিল ৬টি।
সেই তুশারা; থিসারা পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, ভানিন্দু হাসারাঙ্গার পর পঞ্চম লঙ্কান হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন টি-টোয়েন্টিতে। মালিঙ্গার অবশ্য হ্যাটট্রিক আছে দুটি।
লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে ভালো করায় আইপিএলের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবার তুশারাকে কিনেছে ৪ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে। অর্থটা যে এমনি এমনি খরচ করেনি মুম্বাই, সিলেটে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন ঘণ্টায় ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বলা করা এই পেসার।
৩২ রানে ৬ উইকেট
জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে। কেননা দেশের মাটিতে ১৬৬ রানের বেশি তাড়া করে জেতার নজির ছিল না নাজমুল হোসেন শান্তদের। সেই চাপেই কিনা মুখ থুবড়ে পড়ল ব্যাটিং লাইনআপ। তুশারার হ্যাটট্রিকের পর ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা।
এবারই প্রথম এত কম রানে ৬ উইকেট হারাল বাংলাদেশ। আগের রেকর্ড ছিল ২০১১ সালে, মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ রানে হারিয়েছিল ৬ উইকেট।
বাংলাদেশের বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছিল লিটন দাসের আউট দিয়ে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ চোট পেয়ে উঠে যাওয়ার পর প্রথম বলেই ধনাঞ্জয়া ফেরান লিটনকে (৭ রান)। স্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে তুলে মারতে গিয়ে দাসুন শানাকাকে ক্যাচ দেন তিনি।
এরপর তুশারার সেই হ্যাটট্রিক। টানা তিন বলে তিন উইকেট নেওয়ার পর সৌম্য সরকারকেও (১১) বোল্ড করেন তিনি। প্রথম ম্যাচে বিস্ফোরক ইনিংস খেলা জাকের আলী ১৩ বলে ৪ করে হাসারাঙ্গার বলে হন এলবিডব্লিউ।
রিশাদের ৭ ছক্কার রেকর্ড
টি-টোয়েন্টিতে ৮ ম্যাচে ১৮ রান করেছিলেন রিশাদ হোসেন। সেই রিশাদ ব্যাট হাতে সিলেটে তুললেন ঝড়। ফিফটি করলেন ২৬ বলে। ফিফটির পথে মেরেছিলেন ৭টি ছক্কা! এই ৭ ছক্কাই টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জাকেরের ৬ ছক্কা ছিল আগের সেরা।
মাহিশ থিকশানার ১৫তম ওভারেই তিনটা ছক্কা মেরেছিলেন রিশাদ। সবমিলিয়ে ৩০ বলে ৭ ছক্কায় রিশাদ করেন ৫৩। থিকশানার বলে তিনি ফেরেন মিডঅফে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ক্যাচ দিয়ে।
শেখ মেহেদী হাসানের সঙ্গে রিশাদ গড়েছিলেন সপ্তম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি। ২০ বলে ১৯ করা মেহেদীকে বোল্ড করেন হাসারাঙ্গা। শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নেন তুশারা।
তাসকিন আহমেদ অন্য প্রান্তে সঙ্গ দিয়ে গিয়েছিলেন রিশাদকে। তিনি করেন ২১ বলে ৩১। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লাগতো ৩০ রান। তাসকিনের পক্ষে সম্ভব হয়নি সেটা করা। শানাকার বলে লং অনে ধনাঞ্জয়ার দারুণ ক্যাচে শেষ হয় তাসকিনের ইনিংস। বাংলাদেশ অলআউট ১৪৬ রানে। ম্যাচসেরা হয়েছেন তুশারা। আর সিরিজসেরার পুরস্কার জিতেছেন কুশল মেন্ডিস।
লঙ্কান এই ব্যাটারের ৫৫ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় খেলা ৮৬ রানে ১৭৪ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। তাসকিন ও রিশাদ নিয়েছিলেন ২টি করে উইকেট। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে রবিবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রাম যাবে দুই দল। সেখানে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা খেলবে তিনটি ওয়ানডে।