Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

মাহমুদউল্লাহ-৪
Picture of ক্রীড়া ডেস্ক

ক্রীড়া ডেস্ক

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার। আইসিসির সহযোগী দেশের বিপক্ষে হেরে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তরা। এর ওপর ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন না করে আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন যেন! তবে মাঠে পারফর্ম করে সব সমালোচনা উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

শনিবার (৮ জুন) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারে ১২৪ রান। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ৬ বল আগে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

লক্ষ্য খুব একটা বড় না হলেও রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে শান্তদের। শ্রীলঙ্কার বোলারদের সামনে দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। বিশেষ করে নুয়ান তুশারা ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তিনি পেয়েছেন ৪ উইকেট। ১৮তম ওভারে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন এই পেসার।

তবে ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা দাসুন শানাকার ফুলটস বলে জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় লঙ্কানদের। শানাকার ওই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ১৩ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ। পরের জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ওই ওভারের শেষ বলে।

জয় দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচের পর ২ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের তৃতীয় স্থানে বসল বাংলাদেশ। কোনও পয়েন্ট না পাওয়া লঙ্কানরা তলানিতে।

শুরুতেই দুই ওপেনার নেই বাংলাদেশের

স্কোরবোর্ডে খুব বেশি রান ওঠেনি। তাই বোলিংয়ে দারুণ কিছু করার প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার। এজন্য চাই ভালো শুরু। তৃতীয় বলেই সেটি পেয়ে যায় লঙ্কানরা। তুলে নেয় সৌম্য সরকারের উইকেট। ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বিদায় নেন তানজিদ হাসান তামিম। শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

গত মার্চে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সৌম্য। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও ভালো একটি ইনিংস ছিল। তবে তার ব্যাটে বরাবরই ধরাবাহিকতার অভাব। সেটি আরেকবার প্রমাণ হলো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে তার।

ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। এই স্পিনার তৃতীয় বলেই ফেরান সৌম্যকে। টপ এজ হয়ে মিড-অনে সহজ ক্যাচ দেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।

ওপেনার সঙ্গীকে হারিয়ে তানজিদ তামিমও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। নুয়ান তুশারার বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। তার ব্যাট আসে ৬ বলে মাত্র ৩ রান। তাতে ৬ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ।

হতাশ করলেন অধিনায়ক শান্ত

শুরুতেই দুই ওপেনারের বিদায়। কঠিন পরিস্থিতিতে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বশীল ইনিংস প্রত্যাশা ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকে। অথচ আউট হয়ে দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে আসেন তিনি।

টি-টোয়েন্টিতে শান্তর ব্যাটে রান নেই। জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র- সবশেষ দুই সিরিজে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৬ রানের। কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার নেমেও রান ফেরাতে পারেননি ব্যাটে। এবার মাত্র ৭ রানে আউট হয়েছেন তিনি।

দলের বিপদের সময় নুয়ান তুশারার বলে শর্ট এক্সট্রা কভারে ধরা পড়েন চারিথ আসালঙ্কার হাতে।

টানা ৩ ছক্কায় ম্যাচ জমিয়ে মাঠ ছাড়লেন হৃদয়

ছক্কা মারার দুর্বলতা নিয়ে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়েন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে তাওহীদ হৃদয়ের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠার জায়গা সত্যি আছে কি? এতদিন প্রশ্ন থাকলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর আর থাকার কথা নয়। টানা ৩ ছক্কায় আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখালেন তিনি। যদিও এর পরপরেই থেমেছে সেই ঝড়।

নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেছিলেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কান অধিনায়কের প্রথম বলে স্লগ সুইপ করে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন হৃদয়। দ্বিতীয় বলে আরও বড় ছয়। এবার ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে। তৃতীয় বলে কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা। টানা ৩ বলে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘আসল’ রূপ ফেরান হৃদয়।

তবে হাসারাঙ্গার চতুর্থ বল, ব্যাটে লাগাতে পারেননি। আঘাত করে তার প্যাডে। ফিল্ড আম্পায়ার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন হাসারাঙ্গা। সেখানে সফল শ্রীলঙ্কা। তাতে ২০ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪০ রানে থামে হৃদয়ের চমৎকার ইনিংস।

লিটনকে ফেরালেন হাসারাঙ্গা

ফর্মহীনতায় কঠোর সমালোচনা মুখে পড়েছিলেন লিটন দাস। টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপে প্রয়োজনের সময় দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের রান বাড়িয়ে নেওয়া এই ব্যাটারকে আউট করেছেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।

ঠিক টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিং হয়নি লিটনের। ৩৮ বলে খেলেছেন ৩৬ রানের ইনিংস। তবে ক্রিকেটের স্কোরবোর্ড সবসময় সঠিক বার্তা দেয় না। লিটনের এই ইনিংসটি তেমনই। চাপের মুহূর্তে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।

দুই ওপেনার- সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিমের বিদায়ের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই সময় দলের হাল ধরেন লিটন। ২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো লিটনের ইনিংস শেষ হয়েছে এলবিডব্লিউ আউটে।

দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন সাকিব

মাহিশ থিকশানার চমৎকার ক্যাচে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসান। মাথিশা পাথিরানার বলে ডিপ থার্ডে ধরা পড়েন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ১৪ বলে ৮ রান করেছেন সাকিব।

শ্রীলঙ্কার ১২৪ রান

আইপিএলে দুর্দান্ত সময় কাটিয়ে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের জার্সিতেও সেই মোস্তাফিজকে পাওয়া গেল। দেশের মাটিতে রিশাদ হোসেনের মাঝে প্রতিভার যে ঝলক দেখা গিয়েছিল, বিশ্বমঞ্চে সেটি আরও আলো ছড়ালো। একইসঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক পারফর্ম করে আসা তাসকিন আহমেদও স্বরূপে ধরা দিলেন। বোলারদের এই মিলিত পারফরম্যান্সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হলো দুর্দান্ত।

শনিবার (৮ জুন) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। টস জিতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করেছেন মোস্তাফিজ-রিশাদরা। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করতে পেরেছে লঙ্কানরা।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মন্দ ছিল শ্রীলঙ্কার। উদ্বোধনী জুটিতে তারা পায় ২১ রান। একসময় ২ উইকেটে ছিল ৭০ রান। কিন্তু মোস্তাফিজ ও রিশাদের ঝলকে শেষ ৫৪ রান করতে ৭ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাই অল্পতেই আটকে রাখতে পেরেছে তাদের।

যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মোস্তাফিজ। উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। রিশাদের অবদানও কম নয়। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো লেগ স্পিনার ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। তাসকিন ২ উইকেট নিয়ে ৪ ওভারে খরচ করেছেন ২৫ রান।

শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ সংগ্রাহক পাথুম নিশাঙ্কা। ২৮ বলে তিনি খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত