Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরিতে গলে বাংলাদেশের দিন

mushfiq-shanto
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত কিছুদিনে যে অস্থিরতা বইছিল, তা কাটাতে এমন একটি দিন খুব দরকার ছিল। দেশের ক্রিকেট মাঠে নয় বরং মাঠের বাইরেই সরব থাকতো বেশি। সমালোচনায় ভারী হয়ে উঠছিল ক্রিকেটের বাতাশ। তাতে খোদ ক্রিকেটারদেরই শ্বাস নেওয়া কষ্টের ছিল যেন!

এমন সময়ে একমাত্র মাঠের ক্রিকেট দিয়েই গুমোট পরিবেশটা হালকা করা যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টের প্রথম দিন সেই কাজটা করে দিলেন ব্যাটাররা। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে চিন্তার জায়গা থেকে এল স্বস্তির সুবাতাশ। অন্তত একটি দিনের জন্য সুখাবেশে কাটল বাংলাদেশ ক্রিকেটের।

মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দারুণ অবস্থানে থেকে শেষ করেছে বাংলাদেশ। দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৯২ রান বাংলাদেশের।

মুশফিক ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরিতে অপরাজিত আছেন ১৮৬ বলে ৫ চারে ১০৫ রানে আর শান্ত ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করে ২৬০ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ১৩৬ রানে। দুজনের ব্যাটে চতুর্থ উইকেটে ২৪৭ রান এসেছে বাংলাদেশের বোর্ডে।

বাংলাদেশ ব্যাটারদের এমন নিঁখুত দিন খুব কমই দেখা যায়। গলের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সুবিধা নিতে সকালে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি শান্ত। অবশ্য শুরুতে এনামুল হক বিজয়ের ০, সাদমান ইসলামের ১৪ ও মুমিনুল হকের সেট হয়েও ২৯ রানে ফিরে যাওয়া বিপদে ফেলে বাংলাদেশকে।

৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর লড়াই শুরু শান্ত-মুশফিকের। সেই লড়াইকে একরকম দাপটের জায়গায় নিয়ে গেলেন দিন শেষে। পুরো দিন ভুলহীন ব্যাটিংয়ের উদাহরণ দিয়েছেন দুই ব্যাটার। মুশফিক টেস্টে তার প্রিয় সুইপ বা রিভার্স সুইপ খেলার প্রবণতাকেও আটকে রাখলেন এই ইনিংসে। যেন ১৪ ইনিংস পর প্রিয় গলে ফিরে রানের দৃঢ় প্রত্যয় তার।

সেই প্রত্যয়ে সফলও হয়েছেন মুশফিক। তার মতোই রানের খোঁজে ছিলেন শান্ত। সোজা ব্যাটে খেলার মন্ত্রে বেশ সফল হয়ে ষষ্ঠ ফিফটিকে নিয়ে গেলেন ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে। স্বস্তির এই সেঞ্চুরির পর তাই শান্তর বুনো উল্লাস বেশ মানানসই। অনেকদিনের সমালোচনা, নেতৃত্ব হারানো সব কিছুইকেই যেন এই সেঞ্চুরিতে বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন শান্ত। এবার নিজের ইনিংসটি আরও বড় করার চ্যালেঞ্জ শান্তর সামনে।  

গল টেস্টে আরও একবার সেঞ্চুরি পেলেন মুশফিক। ছবি : ক্রিকইনফো

মুশফিকের ১২তম সেঞ্চুরি

আগের ১৩ ইনিংসে বড় রান ছিল না। জিম্বাবুয়ের সঙ্গেও পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। শততম টেস্টের সামনে থাকা এই অভিজ্ঞর সময় শেষ দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু ভাগ্য ভালো মুশফিকের। কঠিন সময়ে পেয়ে গেলেন গল-এর দেখা।

এই গল তাকে দুহাত ভরেই দেয়। এখানেই পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুইশোর দেখা। সেই মাঠে আরেক টেস্ট খেলতে নেমে করেছিলেন ৮৫ ও ৪৩। আর তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে আবার ১০০। গল-কে এখন নিজের প্রিয় মাঠ বলতেই পারেন মুশফিকুর রহিম।

গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে ১৯১ রানের পর ১৩ ইনিংসে হাফসেঞ্চুরিও করতে পারেননি মুশফিক। এতদিন পর হাসল তার ব্যাট। শেষের প্রান্তে এসেও আরেকবার ঘুড়ে দাঁড়ানোর শক্তিটা দেখালেন বাংলাদেশের লিজেন্ড ব্যাটার। এই সেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ারে শতকের সংখ্যা নিয়ে গেলেন ১২তম তে।

শান্তর সঙ্গে ৪১৩ বলে ২৩৩ রানের জুটি গড়ে এগোচ্ছেন। ওদিকে শান্ত তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে অপরাজিত আছেন ২৪৪ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় ১২৯ রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২৮০।  

সেঞ্চুরিতে উদ্ভাসিত শান্ত

চাপের মুখে ছিলেন নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে। তা থেকে বের হতে এর চেয়ে ভালো উপায় আর হতে পারে না। তাই শান্ত সেঞ্চুরি করেই গর্জন ছড়িয়ে উল্লাস করলেন। সেজদায় পড়ে সৃষ্টিকর্তাকেও ধন্যবাদ জানালেন। অনেকদিন পর এমন উদ্ভাসিত ইনিংস খেলে নিজেই যেন স্বস্তি পেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে গল টেস্টের প্রথমদিন প্রথম ইনিংসে দারুণ সময় পার করছে বাংলাদেশ। ৭৫ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান এসেছে বোর্ডে। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির পথে শান্ত ২০৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০১ রানে ব্যাট করছেন। ওদিকে মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১৪৮ বলে ৪ চারে ৮৭। এত কম চারে এমন ইনিংস শেষ করে খেলেছেন মুশফিক তাও গবেষণার বিষয়। দুজনের জুটির রান ১৯৪।

গল বরাবরই মুশফিকের প্রিয় মাঠ। এ মাঠে ফিরে ১৪ ইনিংস পর টেস্ট ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম। ছবি : ক্রিকইনফো

শক্ত অবস্থানে থেকে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে দারুণ ভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। গল টেস্টের প্রথম দিন দুই সেশন শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৮২। নাজমুল শান্ত অপরাজিত আছেন ১৪৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ রানে। অপরদিনে মুশফিকুর রহিম তার প্রিয় মাঠে ব্যাটিং করছেন ১১১ বলে ৪ চারে ৬৬ রানে।

দারুণ ভাবে এগিয়ে চলা জুটি ইতিমধ্যে ২৫১ বলে ১৩৭ রান তুলেছে। নিজের ষষ্ঠ টেস্ট ফিফটিকে ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন শান্ত। আর মুশফিক গলে আরও একবার তার ব্যাটের ঝলক দেখাচ্ছেন। এই মাঠে ক্যারিয়ারে তিন ইনিংসে তিনশোর বেশি রান মুশফিকের। এবার চতুর্থ ইনিংসে নেমে মাঠটিতে নিজের গড় আরও এগিয়ে নিচ্ছেন।

প্রথম সেশনে ৩ উইকেটে ৯০ রান তোলা বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে কোন উইকেট হারায়নি। এই সেশনে ৭২ রান এসেছে। ধীর-স্থির খেলে ইনিংস বড় করার দিকে নজর দুই ব্যাটারের।

শান্ত মুশফিকের শতরানের জুটি

শুরুর ধাক্কায় যে হতাশা যোগ হয়েছিল, মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত তা দূর করেছেন। গলের উইকেটে থিতু হয়ে বড় ইনিংসের স্বপ্নও দেখাচ্ছেন দুজনে। জুটির শতরান গড়ে সেই স্বপ্ন সত্যি করার দায়িত্ব তাদের কাঁধে।

৪৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ। মুশফিক-শান্তর “শান্ত-দায়িত্বশীল” ব্যাটিংয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। শান্ত অপরাজিত আছেন ১০৯ বলে ৫১ রানে আর মুশফিক ৮৫ বলে ৫০ রানে। জুটির রান ১০২। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অষ্টম, শেষ ১৪ ইনিংসে প্রথম ফিফটি পেয়েছেন মুশফিক।  

গলের উইকেট টেস্টের প্রথম দুই দিন ব্যাটারদের সুবিধা দেয়। স্টেডিয়ামের উইকেট তার গুণ বজায় রেখেছে। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ ব্যাটাররা পিচের সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন কিনা! শান্ত ও মুশফিক এখন পর্যন্ত হাত মিলিয়েই এগোচ্ছেন। তাই জুটির শতরান হয়েছে এবার ব্যাক্তিগত মাইলফলকের পালা।

মুশফিকের জন্য এই মাঠের পিচ নতুন নয়। ক্যারিয়ারের প্রথম দুইশো এ মাঠেই পেয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। শুধু তাই নয়, গলে নামলেই রান পাওয়ার একটা অতীত আছে মুশফিকের। মাত্র তিন ইনিংসে তিনশোর বেশি রান এই মাঠের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের প্রমাণ রাখে। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে গলের সঙ্গে সু-সম্পর্কটা আরও বাড়িয়ে নিতে চাইবেন মুশফিক।

দীর্ঘদিন প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলেছেন দুজনে। গলে টেস্ট শুরুর আগে মুহুর্তের জন্য যেন তা ভুলে গেলেন ম্যাথিউস ও মুশফিক। সতীর্থের মতোই শেষ টেস্টের আগে ম্যাথিউসকে অভিনন্দন জানালেন মুশফিক। ছবি : ক্রিকইনফো

শান্ত-মুশফিকের ব্যাটে ভরসা

গল স্টেডিয়ামের উইকেট টেস্টের শুরুর দুই দিন থাকে ব্যাটিং সহায়ক। আগে টস জিতলে তাই ব্যাটিং নেয় দলগুলো। নাজমুল হোসেন শান্তও ভুল করেননি। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন। অথচ বরাবরের মতো টডঅর্ডার থেকে বড় ইনিংস আসেনি।

তাই দায়িত্ব বেড়ে গেছে দুই অভিজ্ঞর। শান্ত ও মুশফিকুর রহিম মিলে টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে সেই দায়িত্বটা ভালো সামলেছেন। এবার ইনিংস বড় করার পালা।

গলে প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে তুলেছে ৯০ রান। শান্ত ৪৩ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে  অপরাজিত ২৫ রানে। আর মুশফিক ৩১ বলে ১ চারে অপরাজিত ২০ রানে। ৪৫ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে চলছেন দুজনেই।

দিনের শুরুটা বাজে ছিল বাংলাদেশের জন্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের স্রোত বয়ে দেওয়া এনামুল হক বিজয় ব্যর্থ হয়েছেন, ০ রানেই থামে তার প্রথম ইনিংস। অপর ওপেনার সাদমানও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৫৩ বলে ১ চারে ১৪ রান করে অভিষিক্ত রত্নায়েকের শিকার হন।

দুই চারে দারুণ ইনিংস শুরুর করা মুমিনুল হকও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ। ৩৩ বলে ৪ চারে ২৯ রান করে রত্নায়েকের দ্বিতীয় শিকার হন ভুল শট করে। তিন উইকেট পড়ার পর ভুল কমিয়ে উইকেটে থিতু হওয়ার দিকে মনযোগ দেন শান্ত ও মুশফিক।

অভিষিক্ত রত্নায়েকের বোলিং টার্গেট করে বড় শট খেলছেন দুই ব্যাটার। অনভিজ্ঞ বোলারের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে দারুণ সব শট নিয়ে রান এগিয়ে নিচ্ছেন শান্ত। মুশফিক নিজের প্রথম দুইশোর মাঠে বেশ সতর্ক হয়েই খেলছেন।

গলে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

নাজমুল হোসেন শান্ত ওপেন করবেন এ নিয়েই আলোচনা ছিল গত কিছুদিনে। কিন্তু শান্ত তা হতে দেননি। নিজের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে লুকোচুরি করার পর নিজেকে তিনেই রাখলেন অধিনায়ক।

সর্বশেষ টেস্টে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়কেই ওপেনিংয়ে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে সাদমান ইসলাম শুরু করবেন ইনিংস।

ওপেনিংয়ে পরিবর্তন না এলেও বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। তিন পেসার থেকে দুই পেসার নিয়ে সাজানো হয়েছে একাদশ। দুই তরুণ পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ সামলাবেন দায়িত্ব।

স্পিনে অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলামের সঙ্গে আছেন নাঈম হাসান। দীর্ঘদিন পর বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেন এ অফস্পিনার। এছাড়া অসুস্থতার জন্য মেহেদি হাসান মিরাজকে খেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই একজন স্পিনার কম নিয়েই একাদশ সাজাতে হয়েছে।

তবে অনুশীলনে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক বোলিং করেছিলেন। তাই পঞ্চম স্পিনারের ভূমিকায় এ দুজনকে দেখা যেতে পারে। ব্যাটিং পজিশনটা অবশ্য ঠিকেই আছে। মুমিনুল, মুশফিক, লিটন ও জাকের মিডলঅর্ডার সামলাবেন। তাদের ওপরই বড় রান করার দায়িত্ব।

শ্রীলঙ্কার হয়ে এই টেস্টে অভিষেক হচ্ছে থারিন্দু রত্নায়েকের। আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস খেলছেন তার শেষ টেস্ট।

বাংলাদেশ : সাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাশ, জাকের আলি, তাইজুল ইসলাম, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, নাঈম হাসান।

শ্রীলঙ্কা : পাথুম নিশাঙ্কা, লাহিরু উদানা, দিনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, কামিন্দু মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস, মিলান রত্নায়েকে, থারিন্দু রত্নায়েকে, প্রবাথ জয়াসুরিয়া, আসিথা ফার্নান্দো।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত