যুক্তরাষ্ট্রও ক্রিকেট খেলে? ক্ষমতাধর দেশটিতে বাস্কেটবল, বেসবল বা অলিম্পিকের বিভিন্ন খেলা নিয়ে যতটা উন্মাদনা আছে-ক্রিকেট নিয়ে এর কিছুই নেই। এরই প্রমাণ বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র পাঁচ মাস আগে নিউইয়র্ক-এ নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ।
শুধু ক্রিকেট কেন, ফুটবলের মত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খেলারও তেমন কদর নেই যুক্তরাষ্ট্রে। পেলে-বেকেনবাওয়ারের মতো কিংবদন্তি নিউইয়র্ক কসমসে যোগ দিয়েও পারেননি ফুটবলকে জনপ্রিয়তার শীর্ষ আসনে পৌঁছাতে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক হলেও সে সময় অনেক আমেরিকানই জানতেন না তাদের দেশে এমন একটা মর্যাদার টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা।
ডেভিড বেকহাম-লিওনেল মেসিদের কারণে অবশ্য ফুটবল নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। মেসির খেলা দেখতে গ্যালারিতে আসছেন রেকর্ড দর্শক। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর বিরাট কোহলি, মিচেল স্টার্ক, বাবর আজমদের মত তারকারা কি পারবেন ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহের পারদ চড়াতে?
খোদ কোহলিই কি বলছেন শোনা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখে এখানে ক্রিকেট খেলতে পারা নিয়ে বিস্মিত কোহলি নিজেই, ‘‘কখনও ভাবিনি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খেলতে আসব। দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। আশা করছি খেলাটার প্রসার হবে এই বিশ্বকাপে।’’
কোহলির মত এতটা আশাবাদী ছিলেন না সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার ডন ব্র্যাডম্যান। ১৯৩২ সালে অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার আর্থার মেইলির উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে নিজের স্ত্রীসহ এসেছিলেন ব্র্যাডম্যান। প্রায় আড়াই মাসের সফরের যুক্তরাষ্ট্রে অস্ট্রেলিয়া একাদশ খেলেছে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডেট্রয়েট, শিকাগো, সিয়াটল ও সান ফ্রান্সিসকোয়। পাশাপাশি কানাডা সফর মিলিয়ে সেই সফরে ব্র্যাডম্যান ৫১ ইনিংসে ৩ হাজার ৭৭৯ রান করেছিলেন ১০২ গড়ে।
এরপর ‘ফেয়ারওয়েল টু ক্রিকেট’ নামে নিজের আত্মজীবনীতে ব্র্যাডম্যান জানিয়েছিলেন, ক্রিকেটে কানাডার ভবিষ্যৎ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই!
এবারের বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার লডারহিলে দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছিল সিরিজও। তবে এরও আগে ১৯৯৪ সালের জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। খেলেছিল কানাডাতেও। কোচ ছিলেন বর্তমান প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় দল ছাড়াও বাংলাদেশ খেলেছিল গায়ানিজ একাদশ, কানাডায় টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট ক্লাব একাদশ, সম্মিলিত একাদশ নামের কিছু দলের সঙ্গে।
সফরের শেষটা হয়েছিল বিতর্ক দিয়ে। বাংলাদেশের চার ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন, আতহার আলী খান, ফারুক আহমেদ ও এনামুল হক ফিরেননি দলের সঙ্গে। ছুটি কাটাতে তারা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রেই। বোর্ড এর আদেশের পরও না ফেরায় চার সপ্তাহ নিষিদ্ধ করা হয় তাদের। তাই এশিয়া কাপের কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট এসিসি ট্রফি খেলা হয়নি তাদের।
সফরের আগে প্রশ্ন উঠেছিল শেফ ডি মিশন, প্রশাসনিক ম্যানেজার, ট্যুর ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার-এমন নামের পদ নিয়েও। সমালোচনার কারণে শেফ ডি মিশন পদ থেকে আফজালুর রহমান সিনহা ও প্রশাসনিক ম্যানেজার দেওয়ান শফিউল আরেফিন সরিয়ে নেন নিজেদের। যদিও সেই সফরের সিংহভাগ খরচ ব্যয় করেছিলেন আফজালুর রহমান সিনহাই।
২০১৫ সালে শচীন টেন্ডুলকার-শেন ওয়ার্নের যৌথ উদ্যোগে কিছু প্রদর্শনী ম্যাচ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে । ওয়াসিম আকরাম, ব্রায়ান লারা, গ্লেন ম্যাকগ্রারা খেললেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। অথচ প্রথম টেস্টেরও অনেক আগে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রেই।
সেই দেশে ক্রিকেট হারিয়ে যাওয়াটা বিস্ময়ের ব্যাপার। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার ধরতে এবারের বিশ্বকাপের ১৬টা ম্যাচ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আইসিসির লক্ষ্য পূরণ হয় কিনা সেটাই দেখার।