উইন্ডিজে এই ওয়ানডে সিরিজ ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। খুব বড় গলায় এতদিন ওয়ানডে নিয়ে যে উচ্চবাচ্চ্য ছিল তা থামবে এবার। ২০২৫ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তার আগে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়া সামর্থ্যের খাতায় বড় প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিল।
সিরিজের শেষ ম্যাচে ৩২১ রান করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ২৯৪ রান তাড়া করে সেন্ট কিটস মাঠের রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছিল উইন্ডিজ। তৃতীয় ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন করে লিখল স্বাগতিকরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালের ওপর ৩-০ তে সিরিজ জয়ের তৃপ্তিও পেল।
নতুন ইতিহাস রচনা করে মাঠটিতে আবারও রান তাড়ার রেকর্ড গড়ল উইন্ডিজ। ৩২২ এর লক্ষ্যে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৫ করে। ৪ উইকেটের জয়ে ইতিহাস স্বাগতিকদের। যা ওয়ানডেতে উইন্ডিজের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। বাংলাদেশের জন্য ওয়ানডেতে এত বেশি রান করে এই প্রথম হারের লজ্জা।
এই হারে শুধু ওয়ানডে অহমেই আঘাত লেগেছে বাংলাদেশের এমন নয়। বোলিং নিয়ে যে আত্মবিশ্বাস ছিল তাতেও ফাটল ধরবে। এতদিন বোলাররাই ম্যাচ জিতিয়ে এসেছেন। উইন্ডিজে কিছুদিন আগের টেস্ট জয়েও ভূমিকা রেখেছেন বোলাররা।
কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে সেই বোলাররাই নখদন্তহীন। ব্যাটিং স্বর্গে তাদের পরিকল্পনা, এক জায়গায় বল করে যাওয়ার ধারাবাহিকতা কোন কাজেই দেয়নি। চোখে আঙ্গুল দিয়ে উইন্ডিজের এ রান তাড়া বোলারদের দেখিয়ে দিল এমন দিনে শুধু প্রসেস মেনে বল করলেই হয় না। ভিন্ন কিছু করা লাগে, বক্সের বাইরে চিন্তা করতে হয়।
ওভারের ছয় বলে ছয়টি ভিন্ন ডিলেভারি দিয়ে এক সময় হেরে যাওয়া ম্যাচেও দলকে জিতিয়েছে পাকিস্তান বোলাররা। আধুনিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ বোলারদের গুডলেন্থে বল করার বাইরে আর কিছুই শেখা হয়নি!
অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজ অধিনায়ক হিসেবে একদম চেষ্টা করেননি এটা বলা যাবে না। সাত বোলার ব্যাবহার করেছেন। কিন্তু বোলাররা সফল হতে পারেননি। উল্টো প্রমাণ হলো এমন ব্যাটিং স্বর্গে বাংলাদেশের্রই রান কম হয়েছে। নয়তো ৪ ওভার হাতে রেখে ৩২২ টপকানো যায়!
উইন্ডিজের এই সাফল্যের নায়ক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ইতিহাস গড়া আমির। মাত্র ৮৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৪ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ব্যাটার। হয়েছেন ডেসমন্ড হেইনসের পর অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান। সবশেষ ঘরোয়া ওয়ানডে লিগে ১০০ গড়ে রান করেছেন আমির। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই সেই ফর্ম টেনে আনলেন।
অবিশ্বাস্য সাবলীল ব্যাট করে এই ২৭ বছর বয়সী ত্রিনিদাদিয়ান। মনেই হয়নি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলছেন। বাংলাদেশ বোলাররা একটি বারের জন্যও বিপদে ফেলতে পারেননি আমিরকে। বরং প্রতি শটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। বিশেষ করে স্পিনারদের ওপর বেশি চড়াও হয়েছেন। আফিফ হোসেনকে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির মুহূর্তে বলেল দিকে আর তাকাতে হয়নি। আমির জানেন ওটা ছয়! তাই উল্লাস শুরু করেন শতকের।
শুধু আমিরই নয়, বোলার গুদাকেশ মোতির ইনিংসকে ভুলে গেলে চলবে না। ৩১ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। দেখিয়ে দিলেন টেলএন্ডারদের কেমন পাওয়ার হিটার হতে হয়।
দুজনের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি। ২৩৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ জয় কঠিন মনে হচ্ছিল উইন্ডিজের জন্য। কিন্তু এই জুটি শুরুতে প্রান্ত বদল করে এবং উইকেটে সেট হওয়ার পর চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে ম্যাচ বের করে নিল।
বাংলাদেশের ম্যাচ হারের কারণ আরেক দিক থেকে ব্যাটিং ব্যর্থতা। শুরুর ১০ ওভারে ৬০ বলের মধ্যে ৪০টিতেই কোন রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুর তিন ব্যাটারের দুজন আউট হয়েছেন ০ রানে। সেই প্রভাব পড়েছে দলের স্কোরে। মাহমুদউল্লাহ, জাকের, মিরাজ ও সৌম্যরা চেষ্টা করেও শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু এমন ব্যাটিং স্বর্গে তাদের সেই চেষ্টাও কম মনে হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তাই আশায় বুক ফুলানোর সুযোগ থাকল না বাংলাদেশের। পাকিস্তানেও ব্যাটিং সহায়ক পিচেই টুর্নামেন্ট হবে। সেখানে ৫০ ওভারের ম্যাচে কম রান নিরাপদ তা হয়তো এই সিরিজের পর আর মুখ ফুটে বলতে পারবেন না বাংলাদেশ দলের কেউ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৩২১/৫, ৫০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৮৪*, মিরাজ ৭৭, সৌম্য ৭৬, জাকের ৬২*; জোসেফ ২/৪৩, রাদারফোর্ড ১/৩৭)। উইন্ডিজ : ৩২৫/৬, ৪৬ ওভার (আমির ১০৪*, মোতি ৪৪*, কার্টি ৯৫; রিশাদ ২/৬৯, হাসান ১/৫২, নাসুম ১/৫৬, তাসকিন ১/৪৯)। ফল : উইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : আমির জাঙ্গু। সিরিজ সেরা : শারফেন রাদারফোর্ড।
জুটি ভেঙে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ
দারুণ জুটি গড়ে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ কেড়ে নিচ্ছিল উইন্ডিজ। কেসি কার্টি ও আমির জাঙ্গু মিলে যোগ করেন ১১৫ বলে ১৩২ রান। এ জুটিতেই ম্যাচ হারের ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় বাংলাদেশকে। জুটি ভাঙার পর ৪০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৬১ রান করে উইন্ডিজ।
সেই ভয় কাটানো গেছে। কেসি কার্টিকে ৯৫ রানে ফিরিয়ে স্বস্তি পায় সফরকারীরা। ৮৮ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় সেঞ্চুরি থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে রিশাদ হোসেনের বলে গালিতে ক্যাচ দেন কার্টি। এর আগের বলেই লং অনে তার ক্যাচ মিস করেন পারভেজ হোসেন ইমন।
এক উইকেট অপর উইকেটের পথ করে দেয়। চার ওভারের মধ্যে অপর উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১৭ বলে ১২ রান করে রিশাদের বলে তার হাতেই ধরা পড়েন রস্টন চেজ। বেলিংয়ের ফলো থ্রু তে বাঁদিকে লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেন রিশাদ।
কার্টি-আমির জুটি ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে
উইন্ডিজ ইনিংসের শুরুর ১৫ ওভার বেশ ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ৮৬ রানে উইন্ডিজের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করে। সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। তবে কেসি কার্টি ও আমির জাঙ্গুর জুটি ভোগাচ্ছে মেহেদি হাসান মিরাজদের।
ইনিংসের ৩০ ওভার শেষে ক্যারিবিয়ানদের রান ৪ উইকেটে ১৯৭। দুই ব্যাটার মিলে যোগ করেছেন ১১১ রান। কেসি কার্টি ৮০ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত। ওদিকে অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়িয়ে আমির ৪৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ৪৭ রান।
২০ ওভারের পর থেকে নিয়মিত বাউন্ডারীর পাশাপাশি দারুণ ভাবে সিঙ্গেল-ডাবলস নিয়ে চলেছেন কার্টি ও আমির। দুজনের বোঝাপড়া বেশ ভালো হওয়ায় মিরাজ ছয় বোলার ব্যাবহার করেও জুটি ভাঙতে ব্যর্থ।
উইন্ডিজের ইনিংসের প্রথম পাওয়ার প্লে বাংলাদেশের
বৃষ্টির বাধায় ২৫ মিনিট সময় নষ্ঠ হয়েছে। অবশ্য এর আগেই তিন উইকেট নিয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে খেলা আর না হলে জয়ের সুযোগ ছিল সফরকারীদের।
খেলা মাঠে ফেরাতেও ক্ষতি নেই। ৫ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লে নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাধেশ। ১০ ওভার শেষে ৩২২ রান তাড়া করতে নামা উইন্ডিজ ৩ উইকেটে ৬৬ রান তুলেছে। শারফেন রাদারফোর্ড ১৮ ও কেসি কার্টি ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে রান আউটে উইন্ডিজের পতন শুরু হয়। ১০ বলে এক ছক্কা ও ২ চারে ১৫ রান করা ব্রেন্ডন কিং অপর ওপেনার আলিক আথানাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন।
একাদশে সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদের বলে সরাসরি বোল্ড হন ৭ রান করা আলিক। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক শেই হোপকে মাত্র ৩ রানে স্লিপে সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
মাহমুদউল্লাহ-জাকেরের রেকর্ড জুটিতে বিশাল সংগ্রহ বাংলাদেশের
পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্ব আগেও দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে উইন্ডিজের মাটিতে এবারই প্রথম। তাতে গড়া হলো রেকর্ড। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের সাফল্য। ৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ব্যাটারদের দৃঢ়তায় দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২১ রান এসেছে বোর্ডে।
এর কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলির। লোয়ার মিডলঅর্ডারের এ দুই ব্যাটারের রেকর্ড জুটি দলকে তিনশো পার করিয়েছে। ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ১১৭ বলে ১৫০ রানের অপরাজিত জুটি দুজনের। তাদের ব্যাটে এই উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ডও এসেছে। ষষ্ঠ উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ১২৮ রানের।
শেষ ১০ ওভারে ১০৪ রান যোগ করেছেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। শেষ ৫ ওভারে ৫৯। তাই ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের করা সর্বোচ্চ ৩৪৯ রানের পর প্রথম তিনশো রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ।
সেন্ট কিটসের এই মাঠে কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করেছিল উইন্ডিজ। এই ভেন্যুতে যা রান তাড়ার রেকর্ড। এবার উইন্ডিজকে আরও বড় রেকর্ডের চ্যালেঞ্জ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
রানের এতসব কীর্তি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। টানা তিন ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন এই ব্যাটার। সেন্ট কিটসকে অনায়াসে তার প্রিয় মাঠ বলা যাবে। এ মাঠে ৬ ম্যাচ খেলে পাঁচটি ফিফটি ইনিংস তার। আরও একবার প্রিয় মাঠে জ্বলে উঠে মাহমুদউল্লাহ উপকার দিলেন ৬৩ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ রানের ইনিংস।
৩৮ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সবশেষ চারটি ওয়ানডেতে ব্যাটে বসন্ত চলছে মাহমুদউল্লাহর। আফগানিস্তানের বিপক্সে সিরিজের শেষ ম্যাচের ৯৮ হিসেব করলে টানা চার ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন। চার ম্যাচে মোট রান ২৯৪, গড় ৭৩। বাংলাদেশের “সাইলেন্ট কিলার” আরও একবার ব্যাট হাতে নিরবে নিজেকে প্রমাণ করে গেলেন।
জুটির হিসেব ধরলে জাকের আলির সঙ্গে দারুণ ভাবে জমে গিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। জাকের নামছেন সাত নম্বরে, তার আগে অভিজ্ঞ ব্যাটার। তিন ইনিংসের মধ্যে দুবার বড় জুটি উপহার দিলেন দলকে। প্রথম ম্যাচে ৭৪ বলে ৯৬ রানের জুটি ছিল তাদের। এবার ১১৭ বলে অপরাজিত ১৫০।
পাওয়ার হিটার হয়ে দলে নাম লেখানো জাকেরও ভালো করেছেন। ৫৭ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ৬২। দুই ব্যাটারই অবিশ্বাস্য গতিতে রান তুলেছেন শেষের ওভারগুলোতে। যে অভাব দীর্ঘদিন ধরে ছিল বাংলাদেশের। শেষ পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতায় কতবার তিনশো রানের সম্ভাবনা থাকলেও তা পায়নি দল।
উইন্ডিজের এই ম্যাচে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে সম্ভাবনাকে সত্যিতে রূপান্তর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। তাই সিরিজ হারলেও এই ম্যাচের ব্যাটিং থেকে অনেক ইতিবাচক কিছুই পুঁজি করা যাবে।
মাহমুদউল্লাজ-জাকেরের ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ
সিরিজের প্রথম ম্যাচের মতো শেষ ওয়ানডেতেও জুটি গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলি। তাদের ব্যাটে আরও একবার বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এবার তিনশো ছাড়িয়ে আরও বড় স্কোর করার লক্ষ্য সফরকারীদের।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৯৪ রান করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে এ দুই ব্যাটারের বড় জুটিতে ভালো সংগ্রহ আসে। তৃতীয় ম্যাচে আবারও জুটি গড়েছেন দুজনে। ৪০ ওভার পর্যন্ত যোগ করেছেন ৪৬ রান।
সেন্ট কিটস স্টেডিয়ামে অবিশ্বাস্য ভালো খেলা মাহমুদউল্লাহ আবারও সেট হয়েছেন উইকেটে। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ২২ রান। এদিকে জাকের ৩০ বলে তিন চারে তুলেছেন ২৪ রান।
দুজনের লড়াইয়ে ৪০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ২১৭ রান বাংলাদেশের।
দ্রুত উইকেট হারিয়ে আবার পথহারা বাংলাদেশ
কঠিন অবস্থা পার করে বেশ ভালো অবস্থানেই চলে এসেছিল বাংলাদেশ। অথচ দ্রুত সময়ে জোড়া উইকেট হারিয়ে আবারও খাদের কিনারায় পড়তে হলো।
৯ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ সৌম্য-মিরাজের ১৩৬ রানের জুটিতে ভালো সংগ্রহ পায়। তিনশো রানের স্বপ্ন দেখছিল সফরকারীরা। অথচ এমন স্বপ্নে তিন আঘাত। সৌম্য সরকার ফিরলেন ১৪৫ রানে। ৬ ওভার পর টানা দুই ওভারে মিরাজ ও আফিফ আউট হলেন।
উইকেটে সেট হওয়া মিরাজ আউট হলেন ভুল রান নিতে গিয়ে। ৩১ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৭১ রান। অথচ ৭৭ রান করা মেহেদি আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৬ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়ে তুলছিলেন। সেই সময়ই নিজের ভুলে দুর্ভাগ্যজনক আউট হলেন।
৭৩ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭৭ করেছেন মিরাজ। প্রথম ম্যাচে ১০১ বলে ৭৪ রানের পর এ ইনিংসে দ্রুত রান তুলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিলো প্রবল। অথচ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
মিরাজ আউট হওয়ার পরের ওভারে শেরফান রাদারফোর্ডকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ২৯ বলে ১৫ রান করা আফিফ। এর আগে মিরাজের সঙ্গে ১৩৬ রানের জুটি গড়েছেন সৌম্য। দারুণ জুটি থামে গুদাকেশ মোতির বলে সৌম্য ৭৩ রানে এলবিডব্লিউ হলে। দুই জীবন পাওয়া সৌম্য ৭৩ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরেছেন।
সৌম্য-মিরাজের ফিফটিতে জুটি ও দলের একশ পার
ইনিংসের ২০ ওভার শেষে ভালো ভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার ও মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটে ২ উইকেটে ১০৮ রান তুলেছে সফরকারীরা।
মিরাজ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি করে ৫৮ বলে তুলেছেন ৫৮ রান। ৬টি চার ও ২ ছক্কা আছে তার ব্যাটে। এ সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটি পেয়েছেন মিরাজ। প্রথম ম্যাচে ১০১ রানে ৭৪ রান করেছিলেন তিনি। এবার রান বলের দুরত্ব বেশ কমিয়েই এগিয়ে চলেছেন।
এদিকে জোড়া জীবন পাওয়া সৌম্যও তুলেছেন ফিফটি। ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি করে ৫৯ বলে ৫১ রানে এগিয়ে চলছেন ৩টি করে ছক্কা ও চার হাঁকানো সৌম্য। ০ রানে জীবন পাওয়ার পর ৪৬ রানে দ্বিতীয়বার আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান এ ব্যাটার। দুজনের জুটিও একশ ছাড়িয়ে এগিয়ে চলছে।
পাওয়ার প্লে তে সর্বোচ্চ ডটের পরও স্বস্তি
প্রথম তিন ওভারে দুই উইকেট নেই। ভয় ছিল প্রথম পাওয়ার প্লেতেই আরও উইকেট হারানোর। সেই ভয় জয় করেছেন সৌম্য সরকার ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুই ব্যাটারের লড়াইয়ে শুরুর ধাক্কা সামলাতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাদের ব্যাটে ১৫ ওভার শেষে রান ২ উইকেট হারিয়ে ৭২।
এক ওভারেই দুই উইকেট হারানোয় রান কিছুটা কম আসবে। সেটা হওয়ারই কথা। আর সেই ধারাবাহিকতায় নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ ডট বল খেলার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
মিরাজ ও সৌম্য চার-ছক্কায় রান তুললেও বল ডট দিয়েছেন প্রথম ১০ ওভারে ৪০টি। ৬০ বলের মধ্যে বাকি ২০ বলে রান তুলেছেন দুজনে। ১০ ওভার পর আরও কিছু বাউন্ডারীতে জুটি মজবুত করেছেন। ৭৬ বলে ৬৩ রানে অবিচ্ছিন্ন আছেন দুই ব্যাটার।
এই জুটির সাহস জুগিয়েছেন মিরাজ। দুই উইকেট পড়ার পর ক্রিজে গিয়েই দ্রুত কিছু বাউন্ডারীতে চাপ কমান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৪২ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রান তার। ওদিকে এক জীবন পাওয়া সৌম্য এই সিরিজে তার সর্বোচ্চ রান পেয়েছেন। ৪৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান তার।
লিটন-তামিমের ফেরায় শরুতেই বিপর্যয়
মাত্র তিন ওভার হয়েছে ইনিংসের। তাতেই দুই ব্যাটার সাজঘরে। ফিরতে পারতেন আরেকজনও। তিন ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারানোর ভয় ছিল। একটি ক্যাচ মিস হওয়ায় তিন ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৯।
দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ দিয়ে ফিরেছেন লিটন দাস। এই সিরিজে তৃতীয় ম্যাচে দু অঙ্কের ঘরে রান তুলতে ব্যর্থ হলেন। এবার টিকলেন মাত্র ২ বল। আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে অযথাই ব্যাট চালিয়ে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন লিটন।
আগের দুই ম্যাচে দুটো ভালো ইনিংস খেলা তানজিদ হাসান তামিম এবার ব্যর্থ। আলজারির অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে লেগ সাইডে টেনে পুল করতে গিয়ে ফিরেছেন আকাশে বল তুলে দিয়ে। ৫ বলে ০ রান তার।
এর আগে প্রথম ওভারেই প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ব্র্যান্ডর কিং ক্যাচ মিস করায় এখনও ১০ বলে ৮ রান করে ক্রিজে আছেন সৌম্য।
তিন পরিবর্তন নিয়ে তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ
উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। তিন পেসারের পথ থেকে সরে এসেছে একাদশে রাখা হয়েছে দুই পেসার। এছাড়া স্পিন বিভাগও শক্তিশালি করা হয়েছে।
সিরিজে টানা তৃতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। গত ম্যাচের মতো এবারও টস জিতে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় উইন্ডিজ।
১০ বছরে প্রথমবার উইন্ডিজের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর নিয়মরক্ষার লড়াইয়ের একাদশে তিন পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। অবশ্য এই পরিবর্তনের সবগুলোই এসেছে বোলিং বিভাগে।
বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তানজিম হাসান সাকিব, নাহিদ রানা ও শরিফুল ইসলামকে। তিন পেসারের পরিবর্তে একাদশে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও স্পিনার নাসুম আহমেদ।
উইন্ডিজের একাদশেও এসেছে পরিবর্তন। গত ম্যাচে চার উইকেট নেওয়া জেডন সিলস ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারছেন না। তার জায়গায় দলে ফিরেছেন আলজারি জোসেফ। এছাড়া অভিষেক হচ্ছে জেডিয়াহ ব্লেডস ও আমির জাঙ্গুর।
বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ।
উইন্ডিজ : ব্র্যান্ডন কিং, আলিক আথানেজ, কেসি কার্টি, শেই হোপ (অধিনায়ক), রোস্টন চেজ, শারফেন রাদারফোর্ড, আমির জাঙ্গু, রোমারিও শেফার্ড, গুদাকেশ মোতি, জেডিয়াহ ব্লেডস, আলজারি জোসেফ।