নেপালিদের প্রিয় এক উৎসবের নাম দীপাবলী। এ দেশে এই উৎসবের পোশাকি নাম তিহার। যেটি পাঁচ দিন ধরে চলে। এবারের দীপাবলী শুরু হবে শুক্রবার। কিন্তু উৎসবের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে কাঠমান্ডুর অলিতে গলিতে কান পাতলেই। ইন্দ্রচক কাঠমান্ডু শহরের সবচেয়ে বড় বাজার। যেখানে তেলের প্রদীপ জ্বালানোর পাত্র, আবির উৎসবের রং, আতশবাজি- সব কিছু কেনার ধূম পড়েছে নেপালিদের।
এই উৎসবের বাইরেও আরেকটি উৎসবে মেতে ওঠে নেপালিরা। ফুটবল উৎসবে মাতোয়ারা হতে এতটুকু আলসেমি নেই তাদের। এই যেমন ট্যাক্সি ড্রাইভার কুলবীর ধাওলাকোটি ‘খেলকুদকে লিয়ে’ ( খেলাধুলার জন্য) কাঠমান্ডু শহরে এসেছি শুনেই নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের টিকিটের আবদার করলেন।
আজ (বুধবার) কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে যে ফাইনালে নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে স্থানীয় কান্তিপুর ম্যাক্স টেলিভিশন। যাদের ইউটিউব চ্যানেলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফাইনাল দেখা যাবে।
মুখোমুখি লড়াইয়ে একটাই জয়
বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ একাধিকবার হারিয়েছে নেপালকে। কিন্তু জাতীয় দলে নেপাল সব সময় অজেয়। সাফ, এসএ গেমস ও অলিম্পিক বাছাই মিলিয়ে দুই দল ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে। নেপাল জিতেছে ৬ বার, ৫ ম্যাচ ড্র। একটা মাত্র জয় ২০২২ সাফের ফাইনালে।
নেপালের সাবিত্রা বাংলাদেশের সাবিনা
নেপাল যেমন তাকিয়ে আছে তাদের তারকা ফুটবলার সাবিত্রা ভান্ডারির দিকে, বাংলাদেশেও তেমনি সাবিনা খাতুন। গত সাফে ৮ গোল করা সাবিনা যদিও এবার মাত্র ২টি গোল পেয়েছেন। মূলত এবার ফরোয়ার্ড লাইনে সিরাত জাহান স্বপ্নার অনুপস্থিতি ও কৃষ্ণা রানীর চোটে তাকে নাম্বার নাইন পজিশনে খেলতে হচ্ছে। আর পারফেক্ট নাম্বার টেন হিসেবে তহুরা খাতুন এরই মধ্যে এই টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল পেয়েছেন। ভুটানের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। সাবিনা আজও নিশ্চয় তহুরাকে দিয়েই গোল করাতে চাইবেন।
নেপাল পাচ্ছে না রেখা পাওডেলকে
নেপালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রেখা পাওডেল ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে লাল কার্ড দেখেছেন। যেটা বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের জন্য স্বস্তি। তাদের অভিজ্ঞ দুই ফুটবলার হীরা কুমারী ও দীপা শাহিকেও চোটের কারণে দেখা যাবে না ফাইনালে। বাংলাদেশের অবশ্য একটাই সমস্যা-শামসুন্নাহার জুনিয়রের পায়ের ব্যাথা এখনও সারেনি। তাকে ফাইনালে পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও কোচ পিটার বাটলার বলেছেন, “আমার হাতে খেলোয়াড় আছে, দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই পরিবেশ আমি তৈরি করেছি। তবে যেই খেলুক, সেই তারা সেরাটা দিবে। শামসুন্নাহার গত ম্যাচে খেলতে পারেনি, তার জায়গায় সাগরিকা খেলেছে। এটা নিয়ে নাটকীয়তা করার কিছু নেই।”
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে উন্নতি
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে ১-১ গোলে ড্র করে। এরপর ভারতের বিপক্ষে জয় ৩-১ গোলে। সেমিফাইনালে ভুটানকে উড়িয়ে দেয় ৭-১ ব্যবধানে। এ পর্যন্ত ৩ ম্যাচে বাংলাদেশের জালে ৩ গোল ঢুকেছে। বাংলাদেশ দিয়েছে ১১ গোল। ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম ও শামসুন্নাহার সিনিয়র যেন চীনের প্রাচীর। মাঝমাঠে আস্থার নাম মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা। প্রতিপক্ষের বলগুলো নিজেদের অর্ধে তো আসতে দেনই না, বরং দুই প্রান্ত দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ঋতুপর্ণা ও সাগরিকা। প্রথম ম্যাচটি বাদ দিলে বাংলাদেশ প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এটাই স্বপ্ন দেখাচ্ছে সাবিনাদের।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে তবুও আশা
র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯। নেপালের ৯৯। কিন্তু তারপরও এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়া বাংলাদেশ আরেকটি সাফ জিততে মরিয়া।
পিটার বাটলার আশাবাদী
শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে মেয়েরা আরো দুর্দান্ত খেলা উপহার দিবে বলে জানিয়েছেন কোচ পিটার বাটলার, “শিহরণ জাগানিয়া ফাইনাল হবে। আমরা অনেকটা পথ এসেছি, আরো এগিয়ে যেতে চাই। নেপালের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধা আছে আমার। যখন আপনি ফাইনালে খেলবেন, তখন সব কিছু সেরাভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কখনও কখনও উপলক্ষ্য আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আমি জানি, ফাইনালে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে সঠিক মানসিকতা, মনোভাব নিয়ে আমরা খেলতে পারি।”
নেপালের মাঠকে নিজেদের গ্যালারি বানাতে চান সাবিনারা
ঘরের সমর্থকদের সামনে ফাইনাল খেলবে নেপাল। যা তাদের স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি সুবিধা দিবে। তবে সাবিনার মতে প্রতিপক্ষরাই চাপে থাকবে। তিনি বলেছেন, “আমাদের কিছুটা অসুবিধা তো হবেই। দলের অনেকেই তরুণ আছে। আবার অনেকেরই এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমার কাছে মনে হয়, স্বাগতিক দলই বেশি চাপে থাকে। তাছাড়া আমরা ওদের সাপোর্টারদের নিজেদের বলেই মনে করে খেলব।”
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার ভুটান ম্যাচের উইনিং কম্বিনেশন নিশ্চয় ভাঙতে চাইবেন না। সেই হিসেবে বাংলাদেশের পোস্টের নিচে রুপনা চাকমা। রক্ষণে আফঈদা, মাসুরা, শিউলি ও শামসুন্নাহার সিনিয়র। মাঝমাঠে মনিকা ও মারিয়া মান্দা। দুই উইংয়ে থাকবেন ঋতুপর্ণা ও সাগরিকা। আক্রমণভাগে তহুরা, সাবিনা।
