জ্যামাইকাতে কি অবিস্মরনীয় কিছু হতে চলেছে? উত্তর পেতে আর দুটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে টেস্টের বর্তমান যা অবস্থা তাতে বিপিএলের মাসকটের মতো বড় করে টেস্ট জয়ের স্বপ্ন ডানা মেলতেই পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা।
নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয়বার উইন্ডিজে টেস্ট সাফল্যের পথ অনেকটাই খুলে গেছে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন এই পেস সেনসেশন।
এতে বাংলাদেশের ১৬৪ রানের বিপরীতে উইন্ডিজ ১৪৬ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশ ১৮ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে সফরকারীরা। লিড দাঁড়িয়েছে ২১১ রানের। নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় বার প্রথম ইনিংসে দুইশোর কমে অলআউট হয়েও লিড নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালো বাংলাদেশ।
লো স্কোরিং ম্যাচে এমন লিডও যে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ তা অজানা নয় কারও। বাংলাদেশ সেই সুবিধা পেয়েছে। জ্যামাইকার পেস স্বর্গে তা কঠিনতর হতে পারে।
তাই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে ২০০৯ সালের পর উইন্ডিজে টেস্ট বিজয় মালা পরার। আর সববার বোলাররা দলকে এগিয়ে রাখলেও এইদিনে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে উইন্ডিজ পেসারদের সামলে] কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ব্যাটিং বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে জেডন সিলরে বলে মাহমুদুল হাসান জয়ের ০ রানে স্লিপে ক্যাচ আউট হওয়া ছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজদের জন্য নেতিবাচক কিছু নেই। বাকিটা সময় দৃপ্ত পদে লড়াইয়ের সাহস বোর্ডে রান এনে দিয়েছে। উইন্ডিজ পেসারদের গতির ভয়ে নয় বরং জয়ের নেশায় “বল বাই বল” রান করে গেছেন ব্যাটাররা।
দলকে ভালো অবস্থান এনে দিয়েছেন অধিনায়ক মিরাজ। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ৩৯ বলে ৪২ রানের সাহসী ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। তাতে ছিল সাতটি চার। মিরাজের উইকেটে থাকার সময়ই বাংলাদেশের রান এগিয়ে যায়। এতে ব্যাকফুটে পড়ে উইন্ডিজ। দারুণ লড়াইয়ের পর শামার জোসেপের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ আউট হন মিরাজ।
মিরাজ ও সাদমান ইসলামের তৃতীয় উইকেট জুটিতে মাত্র ১১ ওভারে ৭০ রান আসে বাংলাদেশের। অথচ শুরুর ১০ ওভারে সাদমান ও শাহাদাত হোসেন দিপুর জুটিতে আসে ৪৭ রান। দ্বিতীয় সেশনে মিরাজ-সাদমান জুটিতেই ১২৮ রানের লিড দাঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের। সাদমান ৮২ বলে ৪৬ রানে সামার জোসেফের বলে কট বিহাইন্ড হন ও শাহাদাত ২৬ বলে ২৮ রানে আলজারি জোসেফের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন।
তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব লিটন দাস ও জাকের আলির। এবার আক্রমণাত্মক নয় সাবলীল লড়াইয়ে রান তুলেছেন দুজনে। তাদের জুটি থেকে এসেছে ৪১ রান। লিটন ৩৪ বলে ২৫ রানে জাস্টিন গ্রিভসের বলে বোল্ড হন।
দিনের বাকি সময় ৮ ওভারের মতো উইকেটে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলি ও তাইজুল ইসলাম। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে আরও ২০ রান। জাকের ৪৯ বলে ২৯ ও তাইজুল ২২ বলে ৯ রানে অপরাজিত আছেন।
এই ইনিংসে এখনও ব্যাটিংয়ে নামা বাকি আছে মুমিনুল হকের। স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের রান আরও একটু বাড়ার সুযোগ থাকবে। অবশ্য দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ বার ০ রানে আউট হওয়ার মালিক যদি তার রেকর্ড না বাড়ান।
এর আগে ৮৫ রানে ১ উইকেট থেকে বাকি ৯ উইকেট ১৪৬ রানের মধ্যেই হারায় ক্যারিবিয়ানরা। নাহিদ রানার ৫ উইকেট ছাড়াও হাসান মাহমুদ ২ ও তাসকিন-মিরাজ-তাইজুল একটি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশের জন্য জ্যামাইকা টেস্ট জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। তবে একটি পরিসংখ্যান সেই স্বপ্ন ঘোলাটে করে দিচ্ছে। এ মাঠেই চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১২ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি আছে উইন্ডিজের। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেটে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।
মিরাজদের জন্য সুবিধা এবারের লিডটা এখনই ২১১ ছুঁয়েছে। মঙ্গলবার রান আরও বাড়বে। কোন রকমে তিনশো রানের লিড হলে টেস্ট জয়ের স্বপ্নটা দেখাই যায়।