Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

বিদেশে বাংলাদেশের ‘সত্যিকারের’ সিরিজ জয়

UUU1
[publishpress_authors_box]

রেকর্ড বলবে বিদেশের মাটিতে তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জয় বাংলাদেশের। প্রথমটি ২০০৯ সালে উন্ডিজের বিপক্ষে। দ্বিতীয় ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েতে। সে তালিকায় প্রথম সিরিজ জয়ের পেছনের গল্পটা কি লেখা আছে! নিশ্চই নেই।

তাই এই সময়ের অনেক ক্রিকেট ভক্ত জানবেনও না ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির উইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। পূর্ণ শক্তির সাকিব-তামিমদের জন্য যাদের হারানো খুব কঠিন ছিল না। আর জিম্বাবুয়ে তো এখন শক্তিতে পিছিয়ে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে ২-০ তে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় তাই অন্যরকম। একদিক থেকে প্রথম। কোনদিক! বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের “সত্যিকার” সিরিজ জয় এটি।

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৪ বছরের অপেক্ষা ফুরালো বাংলাদেশের। টেস্টের মানসিকতা-লড়াই-ধৈর্য-পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসা সবকিছু মিলিয়ে নিজেদের চেয়ে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয় দেশকে উপহার দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।

সত্যিকারের টেস্ট খেলেছেন দলের সবাই। একজন ব্যর্থ হয়েছেন তো অপরজন লড়াইয়ের ব্যাটন হাতে নিয়েছেন। চাপে ভেঙ্গে পড়েননি দলের কেউ। কোনদিন বোলাররা পথ দেখিয়েছেন তো কোনদিন ব্যাটাররা। ব্যাটিং নিয়ে সবসময়ের দুশ্চিন্তা এই সিরিজে জাদুমন্ত্রের ফুৎকারে উড়ে গেল যেন। সবমিলিয়ে “পারফেক্ট টিমের পারফেক্ট উইন” যাকে বলে তাই পেল এই বাংলাদেশ।

২০০৯ সালে ফেরা যাক। বোর্ডের সঙ্গে আর্থিক চুক্তির ঝামেলায় বেঁকে বসেন তখনকার উইন্ডিজ দলের সেরা ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে তারা খেলতে অস্বীকৃতি জানান। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ডও তখন শক্ত অবস্থানে। ক্রিকেটারদের তাদের মন মতো খেলতে বাধ্য করেন।

ফলাফল বাংলাদেশ সিরিজে ছিলেন না ক্রিস গেইল, শিবনারায়ণ চন্দরপল, রামনারায়েশ সারোয়ান, ডুয়াইন ব্রাভোদের মতো লিজেন্ড ক্রিকেটাররা। পুরো ১১জন নতুন ক্রিকেটার নিয়ে ১৫ সদস্যের দল দেয় উইন্ডিজ। ওই দলের বিপক্ষে সেন্ট জর্জেস ও গায়ানার দুই টেস্টের সিরিজ ২-০ তে জিতেছিল বাংলাদেশ।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জয়ের পর।

ওই সিরিজে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহরা একেক ইনিংসে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। পরে ওয়ানডেতেও তিন ম্যাচের সিরিজ একই দলের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলেন সাকিবরা। কিন্তু সববারই বিদেশী রিপোর্টে লেখা ছিল “দ্বিতীয় সারির” উইন্ডিজ দল।

এবার এই শব্দটা লিখতে পারবে না কেউই। বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তির পাকিস্তানকেই হারিয়েছে। যে দলে বাবর আজম. মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা আছেন। তবুও বাংলাদেশের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। মুশফিকুর রহিম, হাসান মাহমুদ, সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাহিদ রানারা তাদের কাছে দুর্ভেদ্য-দুর্বোধ্য। 

টেস্টে বাংলাদেশ পেসারদের হতাশার গল্প অনেক। কিন্তু এবার তারাই পথ দেখালেন। গত কয়েক বছরই পেসাররা এমনিতেই বাংলাদেশ বোলিং লাইনের শক্তি হয়েছিলেন। এবার তারা নিজেদের অন্য ভাবে চেনালেন। টেস্টের বোলিং কাকে বলে তা নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদ এই তরুণ বয়সে দেখালেন।

নাহিদ গতি তুলে নাজেহাল করেছেন পাকিস্তান ব্যাটারদের। শুধু গতি তুললেই হয় না, সঙ্গে সঠিক লাইনেও বল করা লাগে। নাহিদ এই সিরিজে সেই কাজটা ঠিকঠাক করলেন। অফস্টাম্পের চ্যানেল থেকে এক্সট্রা বাউন্স তুলেছেন। তাতে পরাস্ত বাবর-রিজওয়ানরা।

ওদিকে কবজির কাজ দেখালেন হাসান। গ্লেন ম্যাকগ্রার শক্তি ছিল কবজির জোরে সুইং আদায় করা হাসান এই সিরিজে এই কীর্তি দেখালেন। সুইং পেলেন দুই দিকেই।

ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য রকম “আপ টু দ্যা মার্ক” খেলেছেন সাদমান ইসলাম। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার ৯৩ রানের মহত্ব স্কোরবোর্ডে বোঝা যাবে না। তেমনি মুশফিকুর রহিম নিজের ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা পুরোদমে দেখিয়েছেন এই টেস্টে। তার ১৯১ রানে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে লিড পায় বাংলাদেশ। যা দলকে জয় এনে দেয়।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের লড়াইটা আরও অবিশ্বাস্য ছিল। যেভাবে লিটন দাস-মেহেদি হাসান মিরাজ ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লড়েছেন, তা অবিশ্বাস্য। দুজনের ১৬৫ রানের জুটি ওই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার রেকর্ড ছিল। সেই পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের পথ পেয়েছে।

আর পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই তরুণ পেসার হাসান-রানার কীর্তিও এক রেকর্ড এনে দিয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবার টেস্টে বিপক্ষের ১০ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। রেকর্ড গড়া সিরিজে “সত্যিকারের” জয়ের আনন্দ পেয়েছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত