বিপিএল ব্যর্থতার পর প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও রান পাননি নাজমুল হোসেন শান্ত। রানখরা কাটাতে ম্যাচের আগে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আউটারে ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের সঙ্গে তিনি নেটে অনুশীলন করেছেন কিছুক্ষণ। স্টান্স নেওয়ার সময় মাথা যেন কাঁধ থেকে বেশি দূরে সরে না যায় শান্তকে সেটা বোঝাচ্ছিলেন হেম্প। পাশাপাশি সামনের পায়ে শরীরের ওজন রাখতে বলছিলেন তাকে। সেটা ঠিকঠাক হওয়ায় শান্তকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন হেম্প।
সেই ছোট্ট সেশনটাই কাজে এলো। খারাপ সময় পেছনে ফেলে অধিনায়ক শান্ত করলেন ফিফটি। তার অপরাজিত সেই ফিফটিতেই বাংলাদেশ পেল রেকর্ডগড়া জয়। বুধবার (৬ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ১৬৫ রানের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ১১ বল হাতে রেখে।
১৬০ রানের বেশি তাড়া করে বাংলাদেশ এর আগে টি-টোয়েন্টি জিতেছিল পাঁচটি। এর দুটি ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সিলেটের ব্যাটিং উইকেটে এবার এলো লঙ্কানদের সঙ্গেই আরেকটি জয়। এর আগে দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রানতাড়া করে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ডটা ছিল ২০১৬ সালে।
সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় ১৬৪ রানের লক্ষ্যে ৪ উইকেটে জিতেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার জিতল ১৬৬ তাড়া করে। দেশের মাটিতে এটাই সবচেয়ে বেশি রানতাড়ার রেকর্ড এখন।
সৌম্যর রিভিউ বিতর্ক
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে বিতর্ক হবে না, হয় নাকি! প্রথম ম্যাচে শরিফুল ইসলাম ‘টাইমড আউট’ উদযাপন করে উত্তেজনা আনার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল এমনিতেই। এবার হলো রিভিউ বিতর্ক। আউট হয়েছেন ভেবে প্যাভিলিয়নে ফিরতে যাওয়া সৌম্য সরকারের ‘বেঁচে’ যাওয়ায় ছিল বিতর্ক। উত্তেজিত লঙ্কান ক্রিকেটাররা ঘিরে ধরেছিলেন আম্পায়ারাদের। এসময় অসতর্কতায় ভাঙে স্টাম্পও।
সৌম্য আউট হয়েছেন ভেবে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রায় বাউন্ডারি লাইনের কাছে। বিনুরা ফার্নান্ডোর শর্ট বলে পুল করেছিলেন সৌম্য। আম্পায়ার গাজী সোহেল ভেবেছিলেন বটম-এজড হয়েছিলেন তিনি। সৌম্য নেন রিভিউ। আল্ট্রা-এজে দেখা যায় স্পাইক। এরপর হাঁটা ছাড়া উপায় কী?
তবে টেলিভিশন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান জানাচ্ছিলেন, স্পাইক আসার সময় ব্যাট ও বলের মধ্যে স্পষ্ট দূরত্ব রয়েছে। তাই মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দেন তিনি। প্যাভিলিয়ানে ফিরতে যাওয়া সৌম্য ফিরে আসেন ক্রিজে।
মানতে না পোরে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলাকে ঘিরে ধরেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। এরই মাঝে কারও একজনের হাত লেগে ভাঙে স্টাম্প! কোচ ক্রিস সিলভারউড চতুর্থ আম্পায়ার তানভীর আহমেদের কাছে গেলেও লাভ হয়নি।
পাওয়ার প্লেতে ৬৩
শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে করেছিল ৪৯ রান। সেখানে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য ও লিটন দাস অবিচ্ছিন্ন থেকে করেন ৬৩। গত বছরের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের পর এটাই প্রথম ৫০ ছড়ানো উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশের। লঙ্কানদের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে চতুর্থবার ৫০ ছড়ানো জুটি এটা।
ভালো শুরু করেও ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারেননি দুজন। ৬৮ রানের জুটি গড়ে মাথিশা পাথিরানার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৬ করা সৌম্য।
পাথিরানার বলে উইকেট ছুঁড়ে আসেন লিটনও। সেই শর্ট বলের বড় শটের প্রলোভনে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন চারিথ আসালঙ্কাকে। শেষ হয় ২৪ বলে ৫ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৩৬ রানের ইনিংসটির।
শান্তর রানে ফেরা
বিপিএল একেবারেই ভালো যায়নি শান্তর। সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সিতে একটি হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত ছিল না। এর মাঝেই পান বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব পাওয়ার সুখবর। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলের খেলায় এসেও একই অবস্থা তার। প্রথম টি-টোয়েন্টি হাসেনি ব্যাট। তবে ছন্দে ফিরতে বেশি সময় নিলেন না। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই ম্যাচজেতানো ইনিংস খেললেন এই ব্যাটার।
ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণের সঙ্গে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত।
তিনের হৃদয় চারে
তাওহিদ হৃদয় বিপিএল জুড়ে ব্যাট করেছেন তিন নম্বরে। তাতে করেছেন তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। শান্তর জন্য সেই পজিশন ছেড়ে চারে নামতে হয়েছে তাকে। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হৃদয় অবশ্য রান পেয়েছেন চার নম্বরে। ২৫ বলে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হৃদয়ও সুবিধা করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিরলেন স্বরূপে। শান্তর সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫৭ বলে গড়েন ৮৭ রানের জুটি।
জাকের ম্যানিয়া
সিলেটে জাকের আলী তাণ্ডবই চালিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচে। খেলেছিলেন ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। তার ব্যাটিং দেখতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ থেকেও দলে দলে ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন স্টেডিয়ামে।
ম্যাচজুড়েই ‘জাকের জাকের’ স্লোগান তুলেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু জাকেরের ব্যাটিংয়ে আসা হয়নি। শান্ত-হৃদয়ের ঝলকে ব্যাটিংয়ে নামতেই হয়নি তাকে।
বোলিংয়ে উন্নতি
প্রথম ম্যাচে যাচ্ছেতাই বোলিং করে ২০৬ রান দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই তুলনায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বোলাররা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন যথেষ্ট। একটা সময় ১ উইকেটে ৬৭ করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে ১১২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ দিয়েছিল ৪৩ রান। প্রথম ম্যাচে শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের খরচ ছিল ২৪। এবার তিনি দিয়েছেন ৯। টি-টোয়েন্টি অবশ্যই চার-ছক্কার খেলা। তবে বোলাররা এরকম নিয়ন্ত্রিত বল করলে কাজটা সহজ হয়ে যায় ব্যাটারদের।
১৫ ওভার শেষে লঙ্কানরা করেছিল ৫ উইকেটে ১২২। এই সময়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১২৮। কম উইকেট হারানোটাই ছিল স্বস্তির।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্মৃতি ফেরানো যাবে?
৬ বছর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ হেরেও সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এর পুনরাবৃত্তির উপলক্ষ তৈরি হলো আরেকবার। ৯ মার্চ শেষ ম্যাচ জিতলে সিরিজ নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। সেই স্মৃতি ফিরবে কি?