Beta
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

আবারও বাংলাদেশের ফুটবল রাঙালো মেয়েরা

saff women
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

[publishpress_authors_box]
কাঠমান্ডু থেকে
কাঠমান্ডু থেকে

ঋতুপর্ণা হয়তো-বা পোস্টের সামনে ক্রস ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঁ পায়ের শটটি হাওয়ায় ভেসে পোস্টের দিকেই যাচ্ছে ! তা-ও এত নিখুঁত যা নেপালি গোলরক্ষক আনজিলার নাগালের বাইরে দিয়ে! তিনি একবার হাত উঁচিয়ে চেষ্টা করেও পারেননি।

অবিশ্বাস্য শটটি জালে জড়িয়ে গেলে দশরথ রঙ্গশালা হয়ে গেল ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা। যেখানে রচিত হয়েছিল ফুটবল ট্র্যাজেডির মহাকাব্য- মারাকানাজো।

১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালটি সব ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের ম্যাচ। বল পায়ে অনেকটা দৌড়ে ব্রাজিলের বক্সে ঢুকে শট নেন গিঘিয়া। মারাকানাজো`র রচয়িতা উরুগুয়ের সেই গিঘিয়ার নামই হয়তো শোনেননি ঋতুপর্ণা। কিন্তু তার ওই গোলটি নেপালিদের বুকে এমন তীর হয়ে বিঁধেছে যে এই যন্ত্রণার সন্ধ্যা ভোলা কঠিন। মাঠে উপস্থিত ১৫,৩৭৩ জন দর্শকও স্তব্ধ। দশরথ রঙ্গশালা ‘অপয়া’ হয়ে আরেকবার ঢুকে গেল নেপাল ফুটবল ইতিহাসে।  

এই মাঠ যে বাংলাদেশের জন্য ভীষণ পয়া। দুই বছর আগে এখানে লাল-সবুজ নারীরা ফুটবলের ইতিহাস গড়েছিল সেই নেপালকে হারিয়ে। আজ আবারও কাঠমান্ডুর রঙ্গশালায় ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ সাফ শিরোপার নবায়ন করে নিয়েছে।

ফাইনালের সেরা ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি : বাফুফে

ফাইনালে বাংলাদেশের বিজয়ের করিগর মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা। প্রথমে গোলের লিড নিলেও নেপাল চার মিনিট বাদে ম্যাচে ফেরে আনিশার গোলে। পরে ঋতুপর্ণার ওই অবিশ্বাস্য গোলে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার সাফ ফুটবলের শিরোপা জেতে।

ঠাসা গ্যালারিতে ষষ্ঠবারের মতো ফাইনালে ওঠা নেপাল এদিন এসেছিল সব আক্ষেপ, সব অপূর্ণতা মুছে ফেলার স্বপ্ন নিয়ে। নিজেদের মাঠ, সঙ্গে ভেতর-বাইরে অভূতপূর্ব সমর্থন। ম্যাচের শুরু থেকেই তারা ফাইনাল জমিয়ে রেখেছিল এবং মাঝে মাঝে চাপেও ফেলেছিল বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে।

প্রথমার্ধে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হলেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আক্রমণের তোপ বাড়িয়ে দেয়। একটা সময় অবশ্য নেপালিদের লড়াই করার দমও যেন ফুরিয়ে গিয়েছিল।   

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মনিকা চাকমা ৫২ মিনিটে। পাল্টা আঘাত হানতে নেপাল সময় নিল মাত্র চার মিনিট! শেষ দিকে ঋতুপর্ণা চাকমার দুর্দান্ত এক গোলে ফের পিছিয়ে পড়ল নেপাল। এরপর আর পথ খুঁজে পেল না ফেরার। রোমাঞ্চের নানা বাঁক পেরিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যান সাবিনা-মনিকারা।

৫২তম মিনিটে মনিকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার পর স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান আমিশা। ৮১তম মিনিটে ঋতুপর্ণার গোল গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।

একটি বদল এনে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ বাটলার। পায়ের চোট কাটিয়ে ফেরেন শামসুন্নাহার জুনিয়র, তাতে বেঞ্চে জায়গা হয় সাগরিকার। গতবারের ফাইনালে দুর্দান্ত এক গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন এই শামসুন্নাহার।

এবার ভারত ম্যাচে লাল কার্ড দেখা রেখা পাওডেলকে ফাইনালে পায়নি নেপাল। ৭ গোল করা এই ফরোয়ার্ডের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগের দায়িত্ব তুলে নেওয়া সাবিত্রা ভান্ডারিকে সারাক্ষণ কড়া পাহারায় রাখেন আফঈদা খন্দকার, শিউলি আজিমরা ।

ম্যাচের প্রথম আক্রমণটি শাণায় বাংলাদেশ, দ্বিতীয় মিনিটে; কিন্তু তহুরার শট যায় বাইরে। পরের মিনিটেই আচমকা দারুণ একটা সুযোগ আসে, সেটা নষ্ট হয় ভাগ্যের ফেরে। গীতা রানী ভুল পাসে বল তুলে দিয়েছিলেন তহুরার পায়ে, তার শট ক্রসবারে প্রতিহত হয়। ফিরতি বল পেয়ে হেডে চেষ্টা করেন এই ফরোয়ার্ড, এবার গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমে যায় বল।

পরক্ষণেই সতীর্থের ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক রূপনা চাকমা, যদিও হয়নি বড় কোনও বিপদ। তবে এই চার মিনিটের খেলায় একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, স্নায়ুর চাপ পেয়ে বসেছিল দুই দলকেই।

দশম মিনিটে ভাগ্যের ছোঁয়া পায় বাংলাদেশও। সাবিত্রার পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন আমিষা। কিন্তু লাফিয়ে ওঠা রূপনাকে ফাঁকি দিয়ে বল ক্রসবারে লেগে ফেরে। এছাড়া আরেকবার সুযোগ পেয়েও নেপাল কাজে লাগাতে পারেনি।

প্রথমার্ধ সমান-সমান হলেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের মেয়েরা বুঝিয়ে দিয়েছে তারা গুনেমানে নেপালিদের চেয়ে এগিয়ে। তাই দক্ষিণ এশিয় ফুটবলে লাল-সুবজের শ্রেষ্ঠত্বের আসনখানি এতটুকু টলেনি। বাংলাদেশের নারী ফুটবল বিপ্লবের আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম হয়েছে সেই কাঠমান্ডুতে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত