ম্যাচ যতটুকু জমে উঠেছিল, নাটকীয় ওইটুকুই। দিন শেষে হারের অংশে বাংলাদেশ। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে জিম্বাবুয়ের জায়গায় যদি বাংলাদেশ থাকতো, তাহলে কি জিততে পারতো? এর উত্তর সম্ভবত সবারই জানা!
নতুন কিছু শুরুর লক্ষ্য নিয়ে এ সিরিজে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পুরোনো চাদড়ে নিজেদের গা মোড়ানো ছাড়া আর কোন কিছুই অর্জন হলো না। উইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে জয় বা তারও আগে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের অর্জন আবারও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে হতাশায়।
সিলেট টেস্টে হার এসেছে ৩ উইকেটে। ওয়েসলি মাধেভেরে ৫৫ বলে ১৯ রান ও রিচার্ড এনগারাভা ৪ রান করে প্রয়োজনীয় ১৭৪ রান করে ফেলেন। এই হার বাংলাদেশের জন্য যতটা হতাশার জিম্বাবুয়ের জন্য ততটাই আনন্দের।
গত ১০ টেস্ট ধরে জিততে না পারা দলটি হেরেছিল ৮ ম্যাচ, মাত্র দুটিতে তাদের ড্র আছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে পা রেখে আশার কিছু ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ দলের টেস্ট ব্যাটিং দৈন্যতা জিম্বাবুয়েকে জয় উপহার দিল।
দলে নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। চেষ্টা করছে ক্রিকেটের নতুন কালচার তৈরি করার। সেখানে অনেক বছর পর ব্যাটিং অর্ডারের শুরুর ৬ ক্রিকেটার ছিলেন “সাদা চামড়ার”। সবশেষ নব্বই দশকে এমন ছিল জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন।
এই নতুন ব্যাটিং লাইনকে আত্মবিশ্বাস তৈরি করার যোগ্য পথ করে দিল বাংলাদেশ। বলা বাহুল্য ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশের এই টেস্ট হার হজমের লজ্জার কারণ। সেখানে মুশফিকুর রহিম ও ওপেনারদের ব্যর্থতার দিকে আঙ্গুল তোলা যায় নির্দিষ্ট করে।
ওপেনাররা বরাবরের মতো রান করে দিতে ব্যর্থ। জিম্বাবুয়ের পুরো দলের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ৮১টি। অথচ একশ টেস্টের কাছে থাকা মুশফিক ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ। এমন ব্যর্থতার মাঝে মুমিনুল, শান্ত, জাকেরদের হাফসেঞ্চুরি ইনিংসগুলো লড়াইয়ের জন্য খুব যথেষ্ট ছিল না।
তাই মেহেদি হাসান মিরাজের তৃতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড বৃথা যায়। টেস্টে তৃতীয় বাংলাদেশী বোলার হিসেবে দুইশো উইকেটের মাইলফলক গড়েও মিরাজ হাসতে পারেননি। ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা বোলিংয়ে পুষিয়ে দিয়েও পারেননি দলকে জেতাতে। কারণ বোর্ডে রান নেই।
এই ব্যাটিং ব্যর্থতা বাংলাদেশের পুরোনো রূপ। ২০১৮ সালে এই সিলেট মাঠে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেদিনও ব্যাটিং ব্যর্থতাই কাল হয়। সাত বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে আরেকটি হারের লজ্জায় একই কারণে মুখ ঢাকতে হবে বাংলাদেশকে।
মিরাজ-তাইজুল ম্যাচ জমিয়ে তুললেন
চতুর্থ দিন চা বিরতির পর সিলেট টেস্টে কি নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে! মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে এমনটাই মনে হচ্ছে। চার বিরতির পর এ দুই স্পিনার জিম্বাবুয়ের চার উইকেট তুলে নিয়েছেন।
১১৭ রানে ২ উইকেটে দিনের শেষ সেশন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। পরে মিরাজ তিন উইকেট ও তাইজুল এক উইকেট তুলে নেন। জিম্বাবুয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান করেছেন। জয়ের জন্য আরও ২৯ রান চাই তাদের।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেছে ৩ উইকেটে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ নিয়ে ৭ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুয়ে।সবমিলিয়ে তারা টেস্ট জিতল ৪ বছর পর। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে আবুধাবিতে আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। গত চার বছরে ১০ ম্যাচ খেলে আটটিতে হেরেছে , ড্র করে দুটিতে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে জিতল প্রায় ৭ বছর পর। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মাহমুদউল্লাহর দলের বিপক্ষে জিতেছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল। সেটি ছিল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট।
হারের শঙ্কা নিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
আর ৫৭ রান লাগে জিম্বাবুয়ের। সিলেট টেস্টে যেখানে দলের নাম উল্টোটা হওয়ার কথা ছিল সেখানে হলো অন্য রকম। বাংলাদেশ হারের ক্ষণ গুণছে। এমন অবস্থায় চতুর্থ দিন টেস্টের চার বিরতি কতটা স্বাদের হবে নাজমুল হোসেন শান্তদের জন্য সেটাই প্রশ্ন।
জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য আর ৫৭ রান চাই। ১৭৪ রানের লক্ষ্যে নেমে জিম্বাবুয়ে ২ উইকেটে ১১৭ রান তুলেছে। ব্রায়ান বেনেট ৫২ রানে অপরাজিত।
নতুন কিছু দেখানোর লক্ষ্য নিয়ে এই টেস্ট সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। নতুন কিছু হচ্ছে, তবে সেটা জিম্বাবুয়ের জয়। ২০১৮ সালের পর আবারও সিলেটে জিততে চলেছে দলটি। বাংলাদেশের তাই নতুন কিছু করা হচ্ছে না এই টেস্টে। বরং দলে অনেক নতুন মুখ নিয়ে আসা নতুন জিম্বাবুয়ে জয়ের সুবাশ পাচ্ছে।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয়টিতেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় পরিকল্পনা মতো টার্গেট দেওয়া যায়নি জিম্বাবুয়েকে। নাজমুল হোসেন শান্তর ৬০ রান আর ১১১ বলে জাকের আলির ৫৮ রানের লড়াই ছাড়া বাকি ব্যাটাররা হতাশ করেছেন।
তাই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। ব্লেসিং মুজারাবানি নেন ৭২ রানে ৬ উইকেট। জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৭৪ রান।
এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম উইকেটেই ৯৫ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়ে। ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান। ৭৫ রানে ৪৪ রানে আউট হয়েছেন বারান। নিক ওয়েলচ মাত্র ১০ রান করে দ্রুত ফিরলেও হারের শঙ্কায় নেই সফরকারীরা। মিরাজ ও তাইজুল একটি করে উইকেট নেন।
২৫৫ রানে অলআউট বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়েকে তিনশো রানের লক্ষ্য দিতে চেয়েছে বাংলাদেশ দল। কমপক্ষে ২৮০ তো বটেই। সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে মুমিনুল হক এমনটাই বলেছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দিন শুরুতেই নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজকে হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ।
এই ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে না পেরে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ২৫৫ রানে। জিম্বাবুয়ের জয়ের লক্ষ্য ১৭৪ রান। চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ সবমিলিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৭১ রান। ব্লেসিং মুজারাবানি নিয়েছেন ৭২ রানে ৬ উইকেট।
মুজারাবানির বলে শেষ ব্যাটার হিসাবে জাকের আলি ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিলে দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তাতে ম্যাচের হিসাবে জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে যৌথভাবে দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন এই পেসার।
ব্লেসিং মুজারাবানির বাউন্সারে কাতর হয়েছে স্বাগতিক ব্যাটাররা। দিনের দ্বিতীয় বলেই শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন শান্ত। কিছু বাদে মুজারাবানির শর্ট বলের শিকার মিরাজ। এরপর তাইজুলকে শর্ট বলে ফেরালেন এনগারাভা। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় জিম্বাবুয়ে। শান্ত ৬০ ও জাকের আলী করেছিলেন ৫৮ রান।
আগের দিন ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন শান্ত। তৃতীয় দিনের মতো চতুর্থ দিনেও খেলা শুরু হতে দেরি হয়। বৃষ্টির পর এক ঘণ্টা বাদে খেলা শুরু হলে প্রথমেই শান্তকে হারায় স্বাগতিকরা। দলীয় ১৯৪ রানে ক্যাচ আউট হয়ে ফিরেছেন শান্ত। দিনের শুরুতেই পুল শট করে বড় রান নেওয়ার লোভে পা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
আগের ইনিংসে শর্ট বলেই ক্যাচ আউট হন মিরাজ। বাউন্সে তার দুর্বলতা এখন সব দলই জানে। সুযোগটা নিয়েছে জিম্বাবুয়ে বোলাররাও। ১৫ বলে ১ ছক্কা ও ১ চারে ১১ রান করা মিরাজ ব্যাটের ফেস ওপেন করে দিয়ে ক্যাচ আউট হলেন গালিতে।
দুই ওভার পর এনগারাভার অফস্ট্যাম্পের বাইরের বাউন্সারে ব্যাট চালাতে গিয়ে ব্যাটে আলতো খোঁচা লাগে তাইজুলের ব্যাটের। আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ফিল্ডাররা নিশ্চিত ছিলেন। রিভিউ নিয়ে তারা সফলও হন। তাতে ক্ষতি বাড়ে বাংলাদেশের।