ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকা ডুবে নিহত ১১ জনের মধ্যে ৩ জন মাদারীপুরের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা বলছেন, ওই তিনজেনর মধ্যে দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
গত সোমবার ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ল্যাম্পেদুসা ও কালাব্রিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে দুটি নৌকা ডুবে যায়। দুই ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয় ৬৩ জনকে। নিখোঁজ ছিল শিশুসহ ৬৪ জন।
নিহতদের মধ্যে মাদারীপুরের তিনজন থাকার খবর আসার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
কয়েক দিন আগে লিবিয়া ও তুরস্কের উপকূল থেকে ইতালির উদ্দেশে ছেড়েছিল নৌকা দুটি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, নৌকায় বাংলাদেশ, সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিসরের নাগরিকরা ছিল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত তিনজনের একজন শিবচর পৌরসভার খানকান্দি এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে আলী হাওলাদার। আরেকজন শিবচরের সাব্বির হোসেন। আরেকজনও মাদারীপুরের বাসিন্দা।
আলী হাওলাদারের স্বজনরা বলছেন, এর আগেও একবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন আলী হাওলাদার। সম্প্রতি ১৫ লাখ টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে লিবিয়া হয়ে ইতালির পথে যাত্রা করেন তিনি। অন্যদের সঙ্গে সাগর পাড়ি দিতে গেলে নৌকা ডুবিতে মোট ১১ জনের সঙ্গে আলী হাওলাদারের মৃত্যু হয়।
আলী হাওলাদারের পরিবার বলছে, মাদারীপুরের এই তিনজনসহ নিহত ১১ জন ডুবে যাওয়া ট্রলারটির ইঞ্জিন রুমে ছিল। সেখানে সাব্বির হোসেন নামে একজন ছিল। তার বাড়িও শিবচরে। মাদারীপুরের আরও একজন ছিল সেখানে।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, নৌকা দুটিতে ইরাক ও ইরানের কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীও ছিল।
জার্মানির দাতব্য সংস্থা রেসকিউশিপ জানিয়েছে, ইতালির ল্যাম্পেদুসা দ্বীপের উপকূলের কাছে তাদের উদ্ধারকারী জাহাজ নাদির ডুবন্ত একটি কাঠের নৌকা থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহগুলো নৌকার নিচের ডেকে আটকে ছিল। সেসময় ৫১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ক্যালাব্রিয়া উপকূল থেকে প্রায় ১২৫ মাইল দূরের সাগরে অভিবাসপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকা ডুবিতে ৬০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিল। ওই নৌকা থেকে এক নারীর মরদেহ ও ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
উন্নত জীবনের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরই হাজারো মানুষ ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে। ১২-১৩ বছর আগে প্রধানত লিবিয়া ও তুরস্কের উপকূল থেকে নৌকায় চেপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপমুখী যাত্রার এই প্রবণতা শুরু হয়। গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।
ইউরোপে প্রবেশপথগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এই সাগর পথ নৌকায় পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতি বছর প্রচুর অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে ডুবে ২৩ হাজার ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
আলী হাওলাদারের মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তার স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, “সন্তান দুইডার মুখের দিকে তাকিয়ে ধার দেনা করে আমার স্বামী ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আল্লাহ তো ইতালি নিল না। এখন আমি সন্তান দুইটাকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবো?”
নিহতদের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন “ধার দেনা এখন কীভাবে শোধ করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে নিহতদের মধ্যে শিবচরের দুই জন আছেন বলে শুনেছি। শিবচরের বাসিন্দাদের লাশ যাতে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সেই বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব।”