মালয়েশিয়ার স্বপ্নে দালালের খপ্পরে পড়ে নৌকায় সাগরে নেমেছিলেন তারা; কিন্তু পথে মিয়ানমারে ধরা পড়ে যেতে হয় কারাগারে। সেখান থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন এই ৪৫ জন।
রবিবার দেশে ফেরার পর তারা সবাই এক বাক্যে অনুরোধ করলেন, তাদের মতো পরিণতি এড়াতে কেউ যেন দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা না করেন।
রবিবার সকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনায় নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিটিএর জেটি ঘাটে এসে পৌঁছায় তারা।
বঙ্গোপসাগরের শূন্য রেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে এসব বাংলাদেশিকে নিয়ে আসে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর একটি ছোট জাহাজ।
এই ৪৫ জনকে ফেরানোর বিনিময়ে মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য ফিরে গেল মিয়ানমারে।
সাগর পথে ট্রলারে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। সরকার থেকে বার বার এভাবে অবৈধভাবে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও দালাল ধরে অনেকে এপথে নামছেন।
এই দফায় ফিরে আসা ৪৫ জনের একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার গফুর উদ্দিনের ছেলে আবদুল হালিম (৩০)।
আট মাস বিদেশে জেল খাটা ছেলেকে নিতে তিনি এসেছিলেন কক্সবাজারে। গফুর জানান, তার ছেলে হালিম পেশায় কাঠমিস্ত্রি। কাজ করে মোটামুটি চলছিল সংসার। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় ছেলে নিরুদ্দেশ হন।
গত রোজার ঈদের পরদিন মিয়ানমার থেকে একটা ফোন আসে গফুরের কাছে। তখন হালিম জানান, তিনি মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছেন।
তখনই গফুর জানতে পারেন, তার ছেলে দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাত্রা করেছিল। ওই ট্রলারে আড়াইহাজারের আরও পাঁচজন ছিল। কিন্তু দালালরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমারে। তখন মিয়ানমারের বাহিনী তাদের আটক করে।
সম্প্রতি দুই দেশের সরকারের উদ্যোগে হালিমসহ ৪৫ জনের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ফেরার দিনক্ষণ জানানো হয় পরিবারকে। সেই খবর পেয়েই বৃদ্ধ গফুর হাজির হন কক্সবাজারে।
তিনি বলেন, “৮ মাস পর আজ খুব খুশি লাগছে। সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আমার সাথে আমার এলাকার আরও ৫ জন এসেছে। তাদের ছেলেও এখানে রয়েছে। আমরা কোরবানির ঈদ খুব আনন্দের সাথে করতে পারব।”
এমনই প্রতিক্রিয়া জানান কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলাম। তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২০) ১১ মাস আগে মালয়েশিয়ায় রওনা হয়ে মিয়ানমারের আটক হয়েছিল। ছেলে ফিরছেন দেেখ তাই খুশি তিনিও।