Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

সাগরে বাংলাদেশি জাহাজে যান্ত্রিক গোলযোগ, উৎকণ্ঠায় রপ্তানিকারকরা

কোটা ওয়াঙ্গি জাহাজটি এখন এইচআর ফারহা নামে চলাচল করছে।
কোটা ওয়াঙ্গি জাহাজটি এখন এইচআর ফারহা নামে চলাচল করছে।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশি পতাকাবাহী কন্টেইনার জাহাজ ‘এইচআর ফারহা’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর, সেটির ৮ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে পৌঁছার কথা। তবে জাহাজটি বাংলাদেশ জলসীমা পাড়ি দিয়ে অনেকটা পথ চলার পর ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেখা দেয়। পরে সাগরে জাহাজ রেখেই ত্রুটি সারিয়ে একদিন পর কলম্বোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে জাহাজটি।

জাহাজটিতে ১,২০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য ছিল, যার বেশিরভাগই কলম্বো বন্দর হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যাওয়ার কথা। জাহাজটি নির্ধারিত সময়ে কলম্বো পৌঁছাতে না পারায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। 

‘এইচআর ফারহা’ কন্টেইনার জাহাজটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন এইচআর লাইনসের। প্রতিষ্ঠানের ৮টি কন্টেইনার জাহাজ আছে, যেগুলো চট্টগ্রাম-কলম্বো এবং চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর রুটে পণ্য পরিবহন করে।

এইচআর ফারহা জাহাজটি যখন চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেয় তখন জাহাজে ১,১৯৭ একক কন্টেইনার ছিল। এরমধ্যে দুটি কন্টেইনার ছাড়া ১,১৯৫ কন্টেইনার রপ্তানি পণ্য ভর্তি। প্রতিটি কন্টেইনারে এক কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য হিসাব করলে সেই জাহাজে কমপক্ষে ১২০০ কোটি টাকার পণ্য ছিল। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭৮টি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার ছিল হ্যাপাগ-লয়েডের। মেয়ারস্ক লাইনের ২৪৯ একক কন্টেইনার, এভারগ্রিনের ১৬৬ একক,  সিএমএ’র ছিল ১২২ একক। বাকিগুলো বিভিন্ন শিপিং লাইনের।

জাহাজটিতে দেড়শ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার ছিল ইউনি ফিডারের। সব ইউরোপ-আমেরিকার গন্তব্যে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল।

ক্রাউন নেভিগেশন কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জাহাজটিতে আমার নির্ধারিত স্লট বরাদ্দ ছিল। সেখানে ১৫০ কন্টেইনার রপ্তানি পণ্য ছিল। ৮ সেপ্টেম্বর কলম্বো পৌঁছে, সেখান থেকে বড় জাহাজে ১০ সেপ্টেম্বর ইউরোপ-আমেরিকার গন্তব্য রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব এলোমেলো হয়ে গেলে।

“আমরা খবর নিয়েছি জাহাজটি শুক্রবার বিকাল ৫টায় আবারও রওনা দিয়েছে কলম্বোর উদ্দেশে। সেটি পৌঁছাতে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগবে। ফলে কলম্বোতে এক সপ্তাহ পর ১৭ সেপ্টেম্বর যদি ইউরোপ-আমেরিকামুখী জাহাজের শিডিউল পায় তাহলে বিদেশি ক্রেতা কীভাবে সেগুলো গ্রহণ করবে—তা অনেক কিছুর পর নির্ভর করছে।”

সাহেদ সারোয়ার বলেন, “বিদেশি ক্রেতা হয়তো বলবে কলম্বো থেকে তুমি উড়োজাহাজে পাঠাও, আবার বলতে পারে ডিসকাউন্ট দাও, আবার বলতে পারে আমি গ্রহণ করবো না। ফলে জটিলতায় পড়তে হবে, কোনও সন্দেহ নেই। তবে কতটা ক্ষতি হবে সেটি নির্ভর করছে পরিস্থিতি এবং বিদেশি ক্রেতার আচরণের ওপর।”

জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩ সেপ্টেম্বর রওনা দেয়। ৫ সেপ্টেম্বর খবর আসে সেটির ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা গেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে জাহাজটি বাংলাদেশ জলসীমা পাড়ি দিয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছে। আর মাত্র দুদিন চললেই জাহাজটি কলম্বোর কাছাকাছি পৌঁছতো। একদিন পরই সেই বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারতো। কিন্তু কলম্বো না গিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসার খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য বাংলাদেশে না এসেই তারা সাগরে রেখেই সেটি মেরামত শেষ করে।

জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান জানতে চট্টগ্রাম বন্দরের রেডিও কন্ট্রোলে যোগাযোগ করা হলেও তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ জাহাজটি বাংলাদেশ জলসীমায় ছিল না।

পরে জাহাজটির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এইচআর লাইনসের নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চলতি পথে কারিগরি ত্রুটি হতেই পারে, সেটা নিয়ে এত উদগ্রীব হওয়ার কিছু নেই। জাহাজটিতে প্রপেলারে জাল আটকে ছিল, সেজন্য স্পিডোমিটার উঠানামা (ফ্ল্যাকচুয়েট) করছিল। আর মূল ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।

“এই অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাহাজটিকে কলম্বোর বদলে জলসীমায় রেখেই ত্রুটি সারানোর। শুক্রবার ত্রুটি সারিয়ে সেটি বিকালেই কলম্বোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। আশা করছি, ১১ সেপ্টেম্বর কলম্বো পৌঁছবে। আর জাহাজে থাকা সব পণ্যই নিরাপদ আছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত