Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

কত টাকা মুক্তিপণ চাইবে জলদস্যুরা, এখন তারই অপেক্ষা

অস্ত্রসজ্জিত সোমালিয়ান দস্যুরা গত ১২ মার্চ রশি বেয়ে জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়।
অস্ত্রসজ্জিত সোমালিয়ান দস্যুরা গত ১২ মার্চ রশি বেয়ে জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়।
[publishpress_authors_box]

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুরা জিম্মি করলেও মুক্তিপণ নিয়ে এখন পর্যন্ত তারা কোনও ধরনের যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ।

তারা বলছেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ আছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন। নাবিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা এখন জলদস্যুদের ফোনকলের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তিপণের বিষয়ে ধারণা পেতে আরও দুই থেকে তিনদিন অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে।

চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের শিপিং প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের পণ্যবাহী জাহাজটির মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর আসে।

কয়লাবাহী এমভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। জাহাজটি ভাড়ায় চলছিল।

এর আগে ২০১০ সালেও এমভি জাহান মনি নামে একটি বাংলাদেশি জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দীর্ঘ ৩ মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়। সেই জাহাজটির মালিকানাও ছিল কবির গ্রুপের।

যেভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি

কয়লা নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’। ভারত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

জাহাজের নাবিকরা মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো বার্তায় জানিয়েছেন, দুটি বোট নিয়ে অস্ত্রসজ্জিত সোমালিয়ান দস্যুরা রশি বেয়ে জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আমরা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটির দস্যুদের কবলে পড়ার খবর পাই। জাহাজের এক ক্যাপ্টেন বিষয়টি জানান। ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।”

২০-২৫ দিনের খাবার আছে জাহাজে

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ‘এমভি আবদুল্লাহ’য় ২০-২৫ দিনের খাবার আছে বলে জানিয়েছেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডি বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়।

বার্তায় আতিকউল্লাহ খান বলেন, “আমাদের জাহাজে ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার আছে। জাহাজটিতে আছে ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা।”

যখন এই বার্তা পাঠানো হয় তখন জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬শ’ নটিক্যাল মাইল দূরে। জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ সোমালিয়া দস্যুদের হাতে থাকলেও জাহাজটি চালাচ্ছিলেন বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন।

মঙ্গলবারের পর থেকে অবশ্য জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করেই জাহাজের গতিবিধি জানা সম্ভব হচ্ছে।

স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করে বুধবার সকালে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল বলে জানিয়েছে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অ্যাসোসিয়েশন।

একটি ফোনকলের অপেক্ষা

জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের পরিবার, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই উৎকণ্ঠায় আছেন। নাবিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে উদগ্রীব হয়ে আছেন সবাই। উদ্বিগ্ন জাহাজটির মালিকপক্ষও। তারা সবাই সোমালিয়ার দস্যুদের কাছ থেকে একটি ফোনকলের অপেক্ষায় আছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে দস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ থেকে আর কোনও ফোন বা অডিও রেকর্ড আসেনি তাদের কাছে।

কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জিম্মি যারা করেছেন তারা কী চায় তা তো আমরা এখনেও জানি না। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেই দাবির বিষয়ে জানার। দাবি জানলেই আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে পারবে।

“তবে নাবিক পরিবারের সবাইকে আশ্বস্ত করছি- আপনারা দোয়া করুন, অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা যাতে ভালো একটি সমাধানে পৌঁছতে পারি। নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।”

জাহাজে থাকা নাবিকদের খবরাখবর রাখছে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও।

জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সোমালিয়ান দস্যুরা জিম্মি করে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে ইন্টারনেটে যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন আছে। তবে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করে আমরা জানতে পেরেছি জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আছে। সেই দূরত্ব পৌঁছাতে ২৬-৩০ ঘণ্টা লাগতে পারে। সেখানে পৌঁছার পরই হয়তো জিম্মিকারীরা যোগাযোগ করবে। আমরা সেই ফোনের অপেক্ষায় আছি, সময় গুনছি।”

জিম্মিকারীরা সাধারণত তাদের চ্যানেলেই কথা বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “কখনও আবার ক্যাপ্টেনের স্যাটেলাইট ফোনেও যোগাযোগ করে। ফলে কীভাবে যোগাযোগটা করবে সেটি তারাই জানবেন। এই যোগাযোগ করতে কখনও কখনও দুই তিনদিনও লাগতে পারে।”

কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখনও মুক্তিপণ নিয়ে কোনও যোগাযোগ করেনি দস্যুরা। তবে জাহাজের নাবিকরা সবাই নিরাপদে ও সুস্থ আছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছি নিরাপদে (তাদের) দেশে ফিরিয়ে আনতে।”

‘জিম্মি উদ্ধারে জটিলতা হবে না’

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারে খুব বেশি জটিলতা হবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।

২০১০ সালে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি জাহান মনির কথা উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন আনাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এমভি জাহান মনি সোমালিয়া দস্যুতের কবলে পড়ার পর উদ্ধার করতে প্রায় একশ’ দিন লেগেছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এজন্য আমি বেশ কনফিডেন্ট।”

তিনি বলেন, “দুটি কারণে জিম্মি উদ্ধারে খুব বেশি জটিলতা তৈরি হবে না। একটি হচ্ছে, কেএসআরএম গ্রুপের অতীত অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয়ত, উদ্ধারে বেশ কিছু টেকনিক জানা এবং সেই সময়ে উদ্ধারে জড়িত কর্মকর্তারা এখনেও গ্রুপের কর্মরত থাকা।”

জলদস্যুদের দাবি জানতে আরও দুদিন লাগতে পারে জানিয়ে ক্যাপ্টেন আনাম বলেন, “আগের ঘটনায় আমরা দেখেছি সোমালিয়ার দস্যুরা জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কমান্ডারের কাছে নেওয়ার পরই মুক্তিপণের প্রক্রিয়া শুরু করবে।

“প্রথমে দস্যুরা জাহাজের ডেজিগনেটেড পারসন অ্যাসোসিয়েট (ডিপিএ) এর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাবে। এরপর তার মাধ্যমেই সরাসরি জাহাজ মালিককে বার্তা দেবে। এজন্য আরেও দুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।”

অবশ্য সোমালিয়া দস্যুরা কত টাকা মুক্তিপণ চাইবেন সেটি বড় একটি বিষয় একথা উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন আনাম বলেন, “কোন কৌশলে আগাবেন সেটি বেশ ভালোই জানেন কেএসআরএম কর্মকর্তারা। আমরা চাইব- নিরাপদে যেন নাবিকরা দেশে ফেরেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত