ভারতের কাছে হারের পর বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু কি ভাবতে পেরেছিলেন এমনটা? বাংলাদেশের কোচ কি ভেবেছিলেন ১০ দিনের মাথায় আবারও মুখোমুখি হতে হবে সেই ভারতেরই। আসলে এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য্য। শেষ হওয়ার আগে কখনও হাল ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাইতো অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ থেকে যে দলটা গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিতে পারতো, সেই বাংলাদেশই খেলবে টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ছোটদের সাফের চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভারতের। এবার কি বাংলাদেশ সেই হারের প্রতিশোধ নিতে পারবে? নাকি আবারও হৃদয় ভাঙা যন্ত্রণা নিয়ে দেশে ফিরবে?
২০ সেপ্টেম্বর টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও গোল গড়ের সুবাদে গ্রুপ পর্বের চৌকাঠ পার হতে পারে বাংলাদেশের যুবারা। এরপর রূদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে পাকিস্তানকে হারানো। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের যুবাদের চোখ শিরোপায়।
ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে এবার ভারতকে এতটুকু ছাড় দিতে চায় না বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে এই বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ। মিডফিল্ডে নিখুঁত পাসিং এবং ডিফেন্ডাররাও ঠান্ডা মাথায় বল পাঠাচ্ছে ওপরে। শর্ট ও লং পাসেও ভালো ব্যালান্সড। দুই উইং থেকে ক্রসও বেশ ভালো হচ্ছে, সেই অনুসারে বক্সে ফুটবলারদের অবস্থানগুলোও সঠিক। এমনকি কর্ণার ও ফ্রি কিকও ভালো। শুধু এই দলের বড় দুর্বলতা- ভালো মানের কোনও ফিনিশার নেই।
তাইতো পুরো টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল বাংলাদেশের। যেখানে জোড়া গোল করেছেন মোহাম্মদ মানিক। ১টি গোল মোরশেদ আলীর।
বিপরীতে গোল করা ফুটবলারের যেন অভাব নেই ভারতের। ৩ ম্যাচে ভারত প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ৮ গোল। সুমিত শর্মা, স্যামসন অহংসাংবান, হেমনেইচুং লুনকিম, বিশাল যাদব, নিংথোউ ঋষি সিং-কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন? টুর্নামেন্টে হেমনেইচুং এরই মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টা গোল করেছেন। গোল্ডেন বুটের বড় দাবিদার এই স্ট্রাইকারের। এছাড়া বিশালের আছে দুটি গোল। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এদেরকে আটকানোর দায়িত্ব সিয়াম অমিত, আশিকুর রহমানদের। শুধু সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে হবে বাংলাদেশের।
২০২২ সালে সর্বশেষ আসরে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু ভারতকেই ফেবারিট দেখছেন, “তারা (ভারত) পরিষ্কার ফেভারিট, এতে কোনও সন্দেহ নেই। দুই দলের ফুটবলারদের তুলনা করলে টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল দিক থেকে ভারতীয়রা কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তবে আমার ছেলেরা সেমিফাইনালে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে, সেটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।”
ভারতের কাছে শেষ মুহূর্তের গোলের হার ভুলে গেছে বাংলাদেশ। কোচ টিটু একটা আগুনে ফাইনালের আশায়, “প্রথম ম্যাচে আমরা যা প্রত্যাশা করছিলাম, তেমনই খেলছিলাম। যোগ হওয়া সময়ে গিয়ে আমরা গোল হজম করেছি। ভারত বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, সেরা দল। কিন্তু আমাদেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ফাইনালটা ফাইনালের মতোই হবে বলে মনে করি। কোনও দলই কিন্তু ফাইনালে উঠেই সন্তুষ্ট হতে পারে না। ট্রফিটা নিয়েই আনন্দ করতে চায়।”
বাংলাদেশ অধিনায়ক নুরুল হুদা ফয়সালের চোখও ট্রফিতে, “ভারতের কাছে হেরে আমরা প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। এখানে এসে আমরা যে শিক্ষা নিয়েছি, তা কাজে দেবে বলে বিশ্বাস করি। এটা সত্যি ভারত সব সময়ই ভালো দল। তারা ফেবারিট। বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। কিন্তু ফাইনালে আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব। আশা করি আমরাই জিতব।”