বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী দুটি ট্যাংকারে অল্প সময়ের ব্যবধানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টায় নাশকতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক।
বিএসসি কার্যালয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বিএসসির জাহাজ বাংলার সৌরভে শুক্রবার রাত পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে। এসময় পানিতে লাফ দিয়ে সাদিক মিয়া (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়। জাহাজে থাকা বাকি ৪৭ জন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক টাগবোট আগুন নেভাতে কাজ করে। রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে বিএসসির টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে প্রধান করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের জ্বালানি তেল খালাসের জেটিতে নোঙর করে রাখা বাংলার জ্যোতি নামে বিএসসিরই আরেক ট্যাংকারে আগুন লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।
তেলবাহী বাংলার সৌরভে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, “৩০ সেপ্টেম্বর বিএসসির জাহাজ বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগে। চারদিন পর আগুন লাগল বাংলার সৌরভে। আমরা ধারণা করছি, এই দুই ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলার অপচেষ্টা। এতে জড়িত কারা, তা শনাক্ত করা দরকার।”
তিনি বলেন, “রাত সাড়ে ১২টায় জাহাজে কোনও কাজ ছিল না। হঠাৎ বাংলার সৌরভের সম্মুখ অংশে প্রায় একই সময়ে চার জায়গায় আগুন লাগতে দেখেন উদ্ধার হওয়া ক্রুরা।
“সেসময় জাহাজের কাছ থেকে একটি স্পিডবোট সরে যেতে দেখা যায় বলেও জানান তারা। যেহেতু গ্যাস ফর্ম বা অন্য কোনও কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি, তাই আমরা ধারণা করছি, এটি নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। তবে সবকিছু তদন্তের পরেই জানা যাবে।”
ঘটনার সময় বাংলার সৌরভে ১১ হাজার ৫৫ টন অপরিশোধিত তেল ছিল জানিয়ে বিএসসির এমডি বলেন, “সেসময় জাহাজটিতে ৪৮ জন ক্রু ও ওয়াচম্যান ছিল। তাদের মধ্যে বিএসসির স্টুয়ার্ড সাদেক মিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। বাকিদের জীবিত উদ্ধার করা হয়।”
চারদিনের ব্যবধানে আগুন লাগা বিএসসির তেলবাহী দুই ট্যাংকার সম্পর্কে মাহমুদুল মালেক বলেন, “বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ১২-১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিবহন করে বিএসসি। বড় জাহাজে বিদেশ থেকে এসব তেল আমদানি করে বহির্নোঙরে আনা হয়।
“এরপর বিএসসির বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ জাহাজের সাহায্যে লাইটারিং করে কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরবরাহ করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি সেই তেল পরিশোধন করে।” বাসস।