ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ ও অব্যাহতির ক্ষেত্রে অনেকটা একই ধরনের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হবে।
লিজিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহীর পদে নিয়োগ পেতে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে- সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকিং পেশায় সক্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একইসঙ্গে এমডি পদের এক ধাপ নিচের পদে অন্তত ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এছাড়া কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান, ফ্যাইন্যান্স, ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ থাকলে তা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সব শিক্ষার ফলাফলে ৫ পয়েন্ট স্কেলে হিসাব করা হলে ন্যূনতম জিপিএ ৩ পেতে হবে।
সোমবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে এমডি নিয়োগ ও তাদের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কিত নীতিমালায় এমন শর্ত দেওয়া হয়।
এই একই শর্তই ব্যাংকের এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা ব্যাংকের এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালায় এমন শর্ত উল্লেখ ছিল।
ব্যাংকের এমডি হতে হলে একজন প্রার্থীকে যেমন ক্লিন ইমেজ থাকতে হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডির ক্ষেত্রেও তা থাকতে হবে। অর্থাৎ এমডি পদপ্রার্থী কোনোভাবেই ফৌজদারি আদালতকর্তৃক দণ্ডিত বা একই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারবে না। প্রার্থী কোনও ব্যাংকে ঋণখেলাপি হতে পারবে না। অর্থ আত্মসাৎ, জাল-জালিয়াতি বা নৈতিক স্খলনের কারণে নিজ পদ থেকে বহিস্কার বা অবনমন ঘটেনি এমন প্রার্থী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হতে পারবেন।
তবে ব্যাংকের এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ৪৫ বছর। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডির ক্ষেত্রে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। তবে উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এমডির পদে থাকার ঊর্ধ্বসীমা ৬৫ বছর। ৬২ বছরের পর কাউকে এই পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) এমডির বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রবণতা বাজারে রয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে।
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ আদায়ের কর্মদক্ষতা এমডি নিয়োগ ও পুণঃনিয়োগের মূল্যায়নে বিবেচনা করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এনবিএফআইতে কর্মরর্ত এমডিকে কী কী কারণে অব্যাহিত দিতে পারবে পর্ষদ সে বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, চরম স্খলন বা বিচ্যুতিপূর্ণ কাজ না করলে কোনও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাকে অপসারণ বা নিয়োগের চুক্তি বাতিল করতে পারবে না পর্ষদ।
এ প্রসঙ্গে নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল বা তাকে অপসারণ করতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে এরূপ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এরূপ প্রস্তাব অনুমোদন করলে অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।
চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যক্তিগত বা অন্য কোনও কারণে পদত্যাগের আবেদন করলে তা পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি ওই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণপূর্বক প্রদত্ত সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত দেবে তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ব্যাংকের এমডি ও সিইওর অব্যাহতির ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।