বেশি সুদের খোঁজে
ঢাকার মতিঝিলে সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকে আমানতের সুদহারের খোঁজ-খবর নিতে আসেন জহিরুল ইসলাম। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে তার ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তি হবে। সঞ্চয়পত্রে সেই টাকা পুনঃবিনিয়োগ না করে ব্যাংকে আমানত রাখতে চান। কারণ এখন আমানতের সুদহার সঞ্চয়পত্রের থেকে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
অবসরপ্রাপ্ত ওই চাকরিজীবীর পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৫ বছরের জন্য ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মুনাফা পেয়েছেন ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে।
এই টাকা ব্যাংকে মেয়াদি আমানত রাখলে অন্তত ১১% হারে মুনাফা তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন এই সঞ্চয়কারী। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) আমানত রাখলে পাওয়া যাবে ১২% বা তার থেকে কিছু বেশি সুদ।
ব্যাংক আমানতের সুদ বৃদ্ধির কারণ
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এজন্য তাদের নতুন আমানতের দরকার।
তাছাড়া ‘স্মার্ট করিডোর সুদহার’ অনুসরণ করায় ব্যাংক ঋণের সুদহার আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে ঋণ বিতরণ করে বাড়তি মুনাফা করতে পারছে ব্যাংক। এ জন্যও তাদের তহবিলও দরকার হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আমানতের সুদহার এখন ঊর্ধ্বমুখি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ‘সিক্স-মানথস মুভিং এভারেজ রেট অফ ট্রেজারি বিল (স্মার্ট)’ অনুযায়ী, চলতি মার্চ মাসে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ বাৎসরিক ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ও ভোক্তা ঋণের সুদের সঙ্গে আরও ১ শতাংশ তদারকি চার্জ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। এনবিএফআইগুলো লিজ বা অর্থায়নের বিপরীতে ১৪ শতাংশ সুদ নিতে পারছে।
আমানতে কোন ব্যাংকে কত সুদ
বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক ৯ থেকে ১০% পর্যন্ত সুদ দিয়ে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে। আমানতের পরিমাণ ও মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে সুদহার আরও কিছুটা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এনবিএফআইগুলো ১২% বা তার থেকে কিছু বেশি সুদ দিচ্ছে।
সঞ্চয়পত্রে সুদ ও সীমাবদ্ধতা
মেয়াদ ও টাকার স্ল্যাবের উপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১.৭৬% মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এখাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে তাদের মুনাফা কমে ৮% নেমে আসছে।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রাখতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছর। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭.৭১% হতে পারে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার সবচেয়ে বেশি। তবে এই দুই ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন যথাক্রমে পেনশনার ও নারীরা। বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার হার কমে যায়, ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার আরও কমে যায়।
কোনটি লাভজনক?
বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদ সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি। তবে, দুর্বল ব্যাংকে আমানত রাখার ঝুঁকি রয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মার্চের মাঝামাঝি (ব্যাঙ্কে) সুদে আরেক বার পরিবর্তন আসবে। মার্চে ঋণের সুদ ১৩% ছাড়িয়ে যাওয়ায় আমানতের সুদ আরেকটু বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখা সঞ্চয়পত্রের থেকে আকর্ষণীয় হলেও কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে এখাতে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ অনেকগুলো ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেশি সুদ বা মুনাফার আশায় দুর্বল ব্যাংকে আমানত রাখলে তা খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
এছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি এনবিএফআই ভালো অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমানত রাখার আগে ব্যাংক বা এনবিএফআইগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
কর আছে দুই খাতেই
সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক যেখানেই বিনিয়োগ হোক না কেন, কর দিতে হয়। সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার ওপর ৫% এবং এর থেকে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার ওপর ১০% উৎসে কর দিতে হয়।
ব্যাংকে আমানতের ওপর পাওয়া সুদ বা মুনাফার ওপর ১০% উৎসে কর রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে আবগারি শুল্ক।
এক লাখ টাকার নিচে আমানতের জন্য কোনো শুল্ক দিতে হয় না। ১ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫ লাখ টাকার কম আমানতে বছরে একবার ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। ৫ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১০ লাখ টাকার কম আমানতে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আমানতের পরিমাণ ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম হলে আবগারি শুল্ক দিতে হয় বছরে ৩ হাজার টাকা।