ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসি থেকে অ্যানেস্থিয়ায় ব্যবহৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ হ্যালোথেন উদ্ধার করেছে র্যাব।
শনিবার সকালে এই অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।
পরে দুপুরে ঔষধ প্রশাসন অধিপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ব্যাপারি ফার্মেসিতে অভিযান চালান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে সেখানে হ্যালোথেন গ্রুপের হ্যালোসিন ওষুধ পাওয়া যায়। এটি আসল বা নকল তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ওষুধটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করা হয়।
তার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মিটফোর্ড এলাকায় এবং আজিজ সুপার মার্কেটের একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ হ্যালোথেন উদ্ধার করা হয়।
সম্প্রতি সোসাইটি অব অ্যানেসথেশিওলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের অস্ত্রোপচারে হ্যালোথেন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার।
বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “হ্যালোথেন ব্যবহার করা যাবে না। এটা একদম নিষিদ্ধ। তারপরও এটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যে বিক্রি করছে, সে যেমন দোষী, তেমনি যে চিকিৎসক এটি ব্যবহার করছেন, তিনিও দোষী।
“এটি ব্যবহারে যাকে যেখানে পাব, যেই হাসপাতালে পাব, যেই চিকিৎসকের কাছে পাব, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যে ওষুধ নিষিদ্ধ, সেটি ব্যবহার করার এখতিয়ার বাংলাদেশের কোনও চিকিৎসকের নেই। আমি সবাইকে জানাতে চাই যে এই অভিযান আমি আরও চালাব।”
অ্যানেস্থেশিয়ার ওষুধের কারণে দেশে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “তদন্ত করে এটাই পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না যে একটি শিশু বা কারও জীবন এভাবে চলে যাবে। আমি ডিজি ড্রাগকে নির্দেশ দিয়েছি সারা দেশে অভিযান চালানোর জন্য।”
অভিযানের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মঈনুল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, উদ্ধার হওয়া হ্যালোথেস আসল না নকল তা পরীক্ষা করে দেখতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরীক্ষা থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে হ্যালোথেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র অনুমোদিত কোম্পানি হিসেবে এসিআই এই উৎপাদন করত।
অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে অজ্ঞান করার কাজে হ্যালোথেন নামের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ার পর কয়েক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় সামনে আসে বাজারে নকল হ্যালোথেন পাওয়ার বিষয়টি। তখনই এটি নিষিদ্ধ করা হয়।
গত মার্চে এক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে ইনহেলেশনাল অ্যানেসথেটিক হিসেবে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন অথবা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের সব হাসপাতালে বিদ্যমান হ্যালোথেন ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ও ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে। অর্থাৎ এ বিষয়ে খরচের পরিমাণ জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া হ্যালোথেন বেচাকেনা ও ব্যবহার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে সারা দেশের সব অবেদনবিদকে (অ্যানেসথেশিওলজিস্ট) সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।